Home » অর্থায়ন কি? অর্থায়নের কার্যাবলী আলোচনা কর।

অর্থায়ন কি? অর্থায়নের কার্যাবলী আলোচনা কর।

by Rezaul Karim
অর্থায়ন কি, অর্থায়নের কার্যাবলী আলোচনা কর,

অর্থায়ন

অর্থায়ন শব্দটি ইংরেজি ‘Finance’ এবং ল্যাটিন শব্দ ‘Finis’ হতে এসেছে। Finis শব্দের অর্থ হলো ‘অর্থ সংগ্রহ করা’। সাধারণভাবে যেকোনো কাজ করার লক্ষ্যে অর্থ সংগ্রহ করা এবং এর যথাযথ ব্যবহারকে অর্থায়ন বলে। যেকোনো কাজ করতে হলে অর্থের প্রয়োজন। যেমন-ব্যক্তির নিজস্ব কার্যাবলি পরিচালনা, ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ, ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায়-বাণিজ্য পরিচালনা, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান স্থাপন-স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা প্রভৃতি বিভিন্ন খাতে জনকল্যাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। তাই অর্থায়ন শব্দটি দ্বারা অর্থের সংস্থান, যোগান বা সংগ্রহকরণকে বোঝায়।

অর্থায়ন ধারণাটি সংকীর্ণ বা ব্যষ্টিক (micro) এবং প্রসারিত বা সামষ্টিক (Macro) অর্থেও প্রদান করা হয়। ব্যষ্টিক অর্থে অর্থায়ন বলতে কোনো ব্যবসায় বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক পরিকল্পনা, তহবিল সংগ্রহ ও সম্পদের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবস্থাপনাকে বোঝায়। পক্ষান্তরে, সামষ্টিক অর্থে অর্থায়ন বলতে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বের সাথে সামগ্রিক

ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কীভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ফার্ম, মুদ্রাবাজার ও মূলধন বাজার তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তাকে বোঝায়। বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে অর্থায়নের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। যেমন-

E. W. Walker বলেন, কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যাবলির পরিকল্পনা, সমন্বয় সাধন, নিয়ন্ত্রণ ও এসবের প্রয়োগ কর্মকাণ্ডই হলো অর্থায়ন। অর্থাৎ ‘Activities of a business concern relevant to financial planning. co-ordinating. control and their application is called finance.’

Schall and Hally মনে করেন- ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকারের অর্থসংগ্রহ এবং ব্যবহার বিষয়ক ঘটনা, নীতি ও তত্ত্বাবলিই হলো অর্থায়ন। অর্থাৎ ‘Finance is a body of facts, principles and theories dealing with raising and using of money by individuals, businesses and governments.” Encyclopedia Bitannica-এর মতে, ‘Finance is the act of providing the means of payment.’ অর্থাৎ অর্থ পরিশোধের পদ্ধতিই হলো অর্থায়ন। উপরিউক্ত সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণ করলে অর্থায়নের কিছু বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো:

(ক) বিভিন্ন উৎস হতে অর্থ সংগ্রহ করে তহবিল গঠন এবং উক্ত তহবিলের সুষ্ঠু ও দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করা।

(খ) এ তহবিল মুদ্রা ও মূলধন বাজার হতে সংগৃহীত হবে।

(গ ) পরিকল্পনার মাধ্যমে সংগৃহীত তহবিলের ব্যবহার দ্বারা সম্পদের সর্বোচ্চকরণের প্রচেষ্টা গ্রহণ।

উপরিউক্ত আলোচনা হতে বলা যায়, কোনো ব্যক্তি, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী; আর্থিক-সামাজিক বা সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় আর্থিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সময়ের জন্য সুবিধাজনক উৎস হতে অর্থসংগ্রহকরণ, সংগৃহীত অর্থের সুষ্ঠু বিনিয়োগ, সংরক্ষণ, সমন্বয়করণ এবং নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়াকেই অর্থায়ন বলে।

অর্থায়নের কার্যাবলি

ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও সরকারের আর্থিক গতিশীলতা বৃদ্ধিতে বা যেকোনো উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রয়োজন অর্থ ও এর যথাযথ ব্যবহার। অর্থায়ন নিম্নোক্ত কার্যাবলি সম্পাদনে ভূমিকা পালন করে।

১. আর্থিক পরিকল্পনা (Financial Plan)

কোনো কার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ, সময়, তহবিলের সুষ্ঠু ব্যয় নির্ধারণ এবং এর সাথে জড়িত কার্যাবলির বিচার-বিশ্লেষণ ও পরিধি নির্ধারণে আর্থিক পরিকল্পনার গুরুত্ব রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সকল ক্ষেত্রেই এটি প্রথমেই বিবেচনা করা হয়।

২. উৎস নির্বাচন (Identification of Sources)

অর্থায়নের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো তহবিলের উৎস নির্বাচন। আর্থিক পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ কোন উৎস হতে সুবিধাজনক শর্তে সংগ্রহ করা যাবে? প্রাতিষ্ঠানিক, অভ্যন্তরীণ উৎস নাকি বৈদেশিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস, এসবই নির্বাচন করতে হয়।

৩. তহবিল সংগ্রহ (Procurement of fund)

অর্থায়নের তৃতীয় কাজ হলো নির্বাচিত উৎস হতে ঋণদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে প্রাপ্ত ঋণ তহবিলের পরিমাণ, সুদের হার, পরিশোধ পদ্ধতি, সময়ব্যাপ্তি, সংরক্ষণ ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়াবলি উল্লেখপূর্বক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা। এক্ষেত্রে জামানত প্রয়োজন হলে তারও ব্যবস্থা করা হয়।

৪. তহবিলের ব্যবহার (Use of fund)

তহবিল সংগ্রহের পর অর্থায়নের চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ব্যবসায় বিনিয়োগ ঝুঁকির বিষয়টি স্মরণে রেখে উৎপাদন খরচ সর্বনিম্নকরণের মাধ্যমে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করে মুনাফা সর্বাধিক করা।

৫. তহবিল সংরক্ষণ (Protection of fund)

বিনিয়োগ প্রকল্পের সম্ভাব্য ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা মাথায় রেখে নিয়মিত নিরীক্ষা, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে, বিনিয়োগ করা তহবিল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা।

৬. ফলাফল নির্ণয় (Measurement of result)

বিনিয়োগ প্রকল্পের ধারাবাহিক মূল্যায়নও অর্থায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রকল্প হতে কী পরিমাণ লাভ অর্জিত হলো, বর্তমান আর্থিক অবস্থা কেমন, ক্ষতি হলে কীভাবে ক্ষতিকে পুষিয়ে নেয়া হবে, এসব পর্যালোচনা করা হয়।

৭. মুনাফা বণ্টন (Profit distribution)

নির্বাচিত প্রকল্পে বিনিয়োগের ফলে অর্জিত মুনাফার কত শতাংশ শেয়ার- হোল্ডারদের মধ্যে বণ্টন করা হবে, কে কত মুনাফা পাবে, অবণ্টিত মুনাফা কীভাবে পুনঃবিনিয়োগ করা হবে-এসব নির্ধারণ করাও অর্থায়নের আরেকটি কাজ।

এছাড়াও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নগদ তহবিল, আর্থিক দলিলপত্র, ভাউচার, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সংরক্ষণ; প্রকল্পের ব্যয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কম খরচে সর্বাধিক উপযোগিতাসম্পন্ন পণ্যসেবা উৎপাদন, অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত সকল প্রকার সম্পত্তি সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবস্থাপনা করা, বাজেট প্রণয়ন, হিসাবরক্ষণ, কর পরিকল্পনা, বিমাকরণ, আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণ, ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ, শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি ও কর্মচারীদের কল্যাণে দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ প্রভৃতি কার্য সম্পাদনে অর্থায়নের গুরুত্ব রয়েছে।

খাদ্য নিরাপত্তা বলতে কি বুঝায়? খাদ্য নিরাপত্তার দিক কয়টি ও কি কি?

Related Posts