Home » ইতিহাসের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক আলোচনা কর

ইতিহাসের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক আলোচনা কর

by Rezaul Karim
ইতিহাসের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক

ইতিহাসের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক

মানব সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের সাথে সাথে যে সকল বিষয়ের ( subjects) গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে তার মধ্যে অর্থনীতি অন্যতম। কারণ ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবনসহ সকল পর্যায়ে অর্থসম্পদ ও অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে আছে। অর্থসম্পদ শুধু মানুষের জীবনকে নয় বরং ইতিহাসসহ সমকালীন অনেক বিষয়কে (subjects) ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে থাকে। আর সেজন্য ইতিহাসের সাথে অর্থনীতির বহুমাত্রিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। এখানে একটি বিষয় বলে নেয়া প্রয়োজন যে, অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক ইতিহাস এক নয়। সাধারণত সম্পদ আহরণ, সম্পদের উদ্দেশ্য, উৎপাদন, সংরক্ষণ, সঞ্চয়, ভোগ, বণ্টন, লগ্নি প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে যে শাস্ত্র গড়ে ওঠেছে তা হল অর্থনীতি।

পক্ষান্তরে ইতিহাসের অনেক শাখাসমূহের মধ্যকার একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হল অর্থনৈতিক ইতিহাস। অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক ইতিহাস খুব কাছাকাছি অবস্থান করলেও দুটি প্রকৃতপক্ষে পৃথক বিষয়। অর্থনীতি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ বিষয় এবং এটি সম্পদ সংক্রান্ত বিষয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে থাকে । পক্ষান্তরে অর্থনৈতিক ইতিহাস কোন অনুষদের কোন পৃথক বিষয় নয়। এটি ইতিহাসের একটি শাখা মাত্র। ইতিহাসের যে শাখা অর্থসম্পদ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে তা হল অর্থনৈতিক ইতিহাস।

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে অর্থনীতি ইতিহাসের গতি ও প্রকৃতিকে নানাভাবে প্রভাবিত করে আসছে। আদিম সাম্যবাদী সমাজে সকল সম্পদের অধিকারী ছিল সমকালীন ট্রাইবের (ট্রাইব-আদিম মানুষের সংগঠন) সকলেই। ঐ সমাজের সুষম বণ্টনমূলক অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে সাম্যবাদী সামাজিক ইতিহাস গড়ে ওঠে। এরপর নবোপলীয় যুগে মানুষ যখন সর্বপ্রথম কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির সূত্রপাত করে তখন থেকেই ইতিহাসে গতি ও প্রকৃতি পরিবর্তিত হতে থাকে। কারণ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার সাথে সাথে পূর্বের খাদ্য সংগ্রহকারী আদিম সমাজ খাদ্য উৎপাদনকারী জনসমাজে পরিণত হয়। এভাবে অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে নবোপলীয় যুগের বৈপ্লবিক ইতিহাস তথা মানব সভ্যতার প্রথম ইতিহাস রচনার শুভ সূচনা হয়।

সাধারণভাবে বলা যায়, মানুষের অতীত কর্মের বিবরণ হল ইতিহাস। আর একজন মানুষের কর্মের ও সময়ের যতটুকু অংশ অর্থসম্পদ সংক্রান্ত কর্মে ব্যয় হয় তাহল তার জীবনের অর্থনৈতিক ইতিহাস। যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মানুষের জীবনের বিপুল অংশ ব্যয় হয় অর্থসম্পদ সংক্রান্ত কর্মে। অর্থ সম্পদ সংক্রান্ত কর্ম বলতে অর্থসম্পদ আহরণ, সংরক্ষণ, ভোগ, বণ্টন ও ব্যয়কে বুঝানো হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন চাকরিজীবী সাধারণত কর্মক্ষেত্রে আট ঘণ্টা সময় ও শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জন করে।

অনুরূপভাবে একজন গাড়ি চালক প্রায় সারাদিন গাড়ি চালিয়ে ও একজন দোকানদার দ্রব্যাদি বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে থাকে। তারপর ঐ চাকরিজীবি, দোকানদার, গাড়িচালক ঐ অর্থ দ্বারা অনেক কিছু ক্রয় করে, ক্রয়কৃত সামগ্রী ভক্ষণ বা ব্যবহার করে, অথবা অন্যদের মাঝে উপার্জিত টাকা দান বা বণ্টন করে থাকে। অতএব দেখা যায়, একজন মানুষের জীবনের প্রায় অধিকাংশ সময়ই কোন না কোনভাবে অর্থসম্পদ সংক্রান্ত কর্মে ব্যয় হয়। এদিক থেকে বলা যায়, মানুষের ইতিহাস একদিক থেকে কার্যত অর্থনৈতিক কর্মসংক্রান্ত ইতিহাসের পর্যায়ভুক্ত। সুতরাং এটা জোরালোভাবেই বলা যায় যে, অর্থনীতি ছাড়া ইতিহাস পরিপূর্ণ হতে পারে না ।

একজন ঐতিহাসিককে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করতে হলে সমকালীন অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। কারণ মানুষের আর্থিক চাহিদার প্রকৃতি যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পারলেই একজন ঐতিহাসিকের পক্ষে মানবীয় কর্মকাণ্ডকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করা সম্ভব। বিখ্যাত সমাজতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক অর্থনীতিবিদ কার্ল 13 মার্কস-এর মতে অর্থনৈতিক নিমিত্তবাদ (Economic Determinism) দ্বারাই ঐতিহাসিক ঘটনার সঠিক বিশ্লেষণ সম্ভব। সুতরাং ইতিহাস রচনা, ইতিহাসকে উপলব্ধি করা ও ইতিহাসের পরিপূর্ণতার জন্য অর্থনীতির তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

অর্থনীতি তথা মানুষের অর্থসম্পদ প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের ইতিহাসের গতি ও প্রকৃতির ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে আসছে। সম্পদ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য সেকালের মানুষ প্রথমে বিনিময় প্রথা এবং পরবর্তীতে ক্রয়-বিক্রয়ের সূচনা করে। আর ক্রয়-বিক্রয়কে সহজতর করার জন্য মুদ্রা আবিষ্কার করে মুদ্রা অর্থনীতির উদ্ভব ঘটায়। তাছাড়া অর্থসম্পদ আনা-নেয়ার জন্য পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করতে হয়। সম্পদের সুষ্ঠু হিসাব রাখার প্রয়োজনে লিখন পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটে অর্থসম্পদ নিয়ে এক দেশের লোক অন্য দেশে ব্যবসা করতে গেলে তারা তাদের অজান্তেই নিজ সভ্যতা-সংস্কৃতি বয়ে নিয়ে যেত। এভাবে সভ্যতার আদান-প্রদান হয়। সম্পদ সংক্রান্ত কর্মের রেশ ধরেই বার্গারশ্রেণী, গিল্ড ও ক্রমশ ব্যাংকিং পদ্ধতির সূচনা হয়। এভাবে অর্থনীতি সম্পর্কিত বিষয়াদি নানাভাবে ইতিহাসের গতি ও প্রকৃতিকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে ইতিহাসকে পরিপুষ্ট করে থাকে ।

উল্লেখ্য, বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ সোমবার্ট, ওপেনহেইমার, সুমপিটার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তৈরিতে অর্থনীতির জোরালো ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন। সত্যিকার অর্থেই আমরা যদি পৃথিবীর বিখ্যাত বিপ্লব, অবিস্মরণীয় কর্মযজ্ঞ, অনিন্দ্যসুন্দর স্থাপত্যশৈলী, অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার প্রভৃতি বিষয়কে যথাযথভাবে উপলব্ধি করি তাহলে দেখতে পাব এসব বিষয়ের পশ্চাদভূমিতে অর্থনীতির ভূমিকা অনস্বীকার্য। যেমন- ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল কারণ ছিল ব্রিটেন কর্তৃক আমেরিকার জনগণের ওপর অতিরিক্ত করারোপ সংক্রান্ত অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ।

১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল ফ্রান্সের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী কর্তৃক তৃতীয় শ্রেণীদের ওপর বিভিন্ন প্রকার কর ধার্যকরণ। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল রাশিয়ার অর্থনৈতিক সংকট এবং ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক সৃষ্ট অর্থনৈতিক বৈষম্য। অতএব দেখা যায়, পৃথিবীর বিখ্যাত বিপ্লবগুলোর পেছনে অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট হয়ে নব ইতিহাসের সূচনা করেছে।

এভাবে বলা যায়, ব্যাবিলনের শূন্যোদ্যান, চীনের মহাপ্রাচীর, আগ্রার তাজমহল প্রভৃতি স্থাপত্যকর্মের পেছনে অর্থনীতি কাজ করেছে অতি তাৎপর্যপূর্ণভাবে। আর এভাবে অর্থনীতি বিপ্লব ও স্থাপত্যের ইতিহাসকে করেছে গরিমাময়। তাছাড়া অর্থ সংক্রান্ত বিভিন্ন সংগঠন (ASEAN, EU), অর্থ সংক্রান্ত চুক্তি, সম্মেলন প্রভৃতি বিষয় ইতিহাসের অর্থনৈতিক শাখাকে গুরুত্বপূর্ণ ও অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে তলেছে।

একজন রাজনৈতিক প্রশাসক যখন প্রশাসনিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় সংস্কারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও সংস্কার সাধন করেন তখন তাকে বলা হয় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির পরিবর্তন হয়েছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের দ্বারা অর্থনীতি প্রভাবিত হয়ে থাকে এবং এ পরিবর্তন দ্বারা ইতিহাসের অর্থনৈতিক শাখার পরিবর্তনকে বুঝানো হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে একজন অর্থনীতিবিদের দেয়া তত্ত্ব ও তথ্যের আলোকে যদি অর্থনৈতিক ক্ষেত্র পরিবর্তিত হয় এবং এর জন্য যদি ইতিহাসের গতি- প্রকৃতিতে কোন পরিবর্তন সাধিত হয় তাহলে বলা হয় এক্ষেত্রে অর্থনীতির দ্বারা ইতিহাস পরিবর্তিত হয়েছে। তাছাড়া অর্থনৈতিক সংকট বা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণে যদি কোন ঘটনা ঘটে তাহলেও বলা হয় অর্থনীতির দ্বারা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তথা ইতিহাস প্রভাবিত হয়েছে। অতএব দেখা যায়, ইতিহাস ও অর্থনীতি উভয়েই অবস্থার প্রেক্ষিতে একে অপরকে প্রভাবিত করতে পারে।

আরও পড়ুন:

ইতিহাসের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা

উল্লেখ্য যে, কোন একটি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পেছনের কারণগুলো ভালভাবে জানা না থাকলেও শুধু অর্থনৈতিক কারণ সম্যকভাবে জানা থাকলেই ঐ ঘটনার প্রকৃত রহস্য অনেক ক্ষেত্রে উদ্ঘাটন করা সম্ভব। একইভাবে বলা যায়, শুধু অর্থনৈতিক মানদণ্ডের দ্বারা যথাযথভাবে ব্যাখ্যার মাধ্যমে সমসাময়িক ও আধুনিক সমাজের উদ্ভব সম্পর্কে অবগত হওয়াও অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব। সত্যিকার অর্থে ইতিহাসে এমন কোন যুগ ও ঘটনা নেই যেখানে অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক উপাদানের প্রভাবকে গুরুত্বহীন মনে করা হয়। যে কারণে একজন ঐতিহাসিককে ইতিহাস রচনার সময় অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত ও এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করতে হয়। একজন ঐতিহাসিক যখন সমকালীন সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থার সঠিক চিত্র সম্পর্কে জ্ঞাত হতে পারেন তখনই তার পক্ষে ঐ সমাজের সকল দিকের ইতিহাস বস্তুনিষ্ঠভাবে রচনা করা সম্ভবপর হয়। সমকালীন অর্থনীতি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতে না পারলে সঠিক ও নিরপেক্ষ ইতিহাস রচনা করা কোন ঐতিহাসিকের পক্ষেই সম্ভবপর নয়। ইতিহাসের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক অনন্য।

একেবারে সহজভাবে বলা যায়, মানুষের অতীত কর্মের বিবরণ হল ইতিহাস। এখানে অতীতের মানুষের সকল প্রকার কর্মকেই বুঝানো হয়েছে। বৃহত্তর অর্থে একজন মানুষ হিসেবে একজন অর্থনীতিবিদের কর্ম, তত্ত্ব ও তথ্যও ইতিহাসের বিষয়বস্তুর আওতার মধ্যে পড়ে। একজন অর্থনীতিবিদ বর্তমান অর্থনীতির তত্ত্বকে দাঁড় করানোর জন্য অতীতের কোন অর্থনৈতিক তত্ত্বের সাহায্য গ্রহণ করে থাকেন। আর এ অতীতের তত্ত্ব মানেই ইতিহাসের পাতায় ভর করা। এভাবে অর্থনৈতিক ক্রমবিবর্তনের ধারাকে যথাযথভাবে জানতে হলে যেকোন অর্থনীতিবিদকে ইতিহাসের পাতায় আশ্রয় নিতে হয়।

উল্লেখ্য, আধুনিক অর্থনীতির মূলসূত্র ও তত্ত্বের শেকড় প্রোথিত আছে মধ্যযুগের অর্থনীতির সূত্র ও তত্ত্বের ওপর। আবার মধ্যযুগের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিকনির্দেশনার জন্য সমকালীন অর্থনীতিবিদদেরকে আরো অতীতের অর্থাৎ প্রাচীন যুগের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হয় এবং প্রাচীন যুগের অর্থনৈতিক রূপরেখা গড়ে তোলা হয় প্রাগৈতিহাসিক যুগের (বিশেষ করে নবোপলীয় যুগের) অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে। উল্লেখ্য, এই যে অর্থনীতির ক্রমবিবর্তন এবং শত-সহস্রাব্দের অগণিত মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড- এ সবই বর্তমান অর্থনীতিবিদদের কাছে তুলে ধরে ইতিহাস। অতীতে কোন অবস্থার প্রেক্ষিতে অর্থনীতির ক্ষেত্রে কোন্ তত্ত্ব সাফল্যমণ্ডিত হয় এবং কোন্ তত্ত্ব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়- তার সঠিক চিত্র অর্থনীতিবিদদের কাছে উপস্থাপন করে ইতিহাস। কার্যত মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ধারাবাহিকতায় অর্থনীতির সার্বিক পটপরিবর্তনকে ইতিহাস সূতোর মত গ্রথিত করে সংঘবদ্ধ আকারে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে।

ইতিহাস যদি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও তত্ত্বকে ইতিহাসের বিষয়বস্তুরূপে গণ্য করে ধরে না রাখত তাহলে অর্থনীতি থেকে যেত অসম্পূর্ণ ও অনেকটা বিকলাঙ্গরূপে। অতীতের দ্রব্যমূল্য তালিকা, অর্থনীতির সূচক ও নিয়ামক, শেয়ার বাজার, সমষ্টিক ও ব্যষ্টিক অর্থনীতির অতীত খতিয়ান, গাণিতিক অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয় অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠলেও এর সবই কোন না কোন ঐতিহাসিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে গড়ে ওঠেছে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত ছাড়া রাজনীতি, সমাজ ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যেমন কোন পরিবর্তনের দরকার হয় না, তেমনি ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত ছাড়া অর্থনীতিরও শাখা-প্রশাখা ও বিভাজন সম্ভবপর হয় না।

বিগত অর্থনীতির ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতের ওপর গড়ে ওঠেছে আজকের অর্থনীতি এবং আজকের অর্থনীতির ওপর গড়ে ওঠবে আগামী দিনের অর্থনীতি। বিগত অর্থনীতি, আজকের অর্থনীতি ও আগামী দিনের অর্থনীতির মধ্যে প্রেক্ষিত গড়ে তোলে ইতিহাস এবং সকল যুগের অর্থনীতিকে একই সূত্রে গ্রথিত করেও ইতিহাস। অতীতের অর্থনীতি তথা অর্থনৈতিক ইতিহাসকে অর্থনীতির অতি গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে অভিহিত করা হয়। অতএব দেখা যায়, ইতিহাসের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক বেশ গভীর। ইতিহাস ও অর্থনীতি পরস্পরের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত এবং একটি ছাড়া অপরটি পরিপূর্ণ ও ফলপ্রসূ হতে পারে না। সুতরাং বলা যায়, জ্ঞানের যথাযথ বিকাশ সাধন ও বুদ্ধিবৃত্তির পরিস্ফুটনের জন্য ইতিহাস ও অর্থনীতির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

Related Posts