Home » ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো

ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো

by Rezaul Karim
ইতিহাস লিখন পদ্ধতি

ইতিহাস লিখন পদ্ধতি

ইতিহাস লিখন পদ্ধতি কবে ও কোথায় প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছে তা সঠিক করে কেউ বলতে পারবে না। মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তন ও মানুষের অতীত কর্মের ওপর গবেষণার ফসল হল ইতিহাস। সুদূর অতীত ও নিকট অতীতের যথাযথ উৎসের সন্ধান লাভ এবং উৎসের ওপর সম্যক গবেষণা করে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য বের করে আনেন ঐতিহাসিক। ইতিহাস রচনা করার ক্ষেত্রে উৎস ও তথ্য হল কাঁচামাল স্বরূপ এবং ঐতিহাসিক হলেন নির্মাতা স্বরূপ। কোন কিছু সঠিকভাবে নির্মাণ করার জন্য যেমন যথাযথ নির্মাণ সামগ্রী ও দক্ষ কারিগর দরকার। ইতিহাস রচনা করার ক্ষেত্রটি অনেকটা তদ্রূপ। অতীতের ওপর সর্বাত্মক অনুসন্ধান চালিয়ে যতদূর সম্ভব সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং এ তথ্যের গভীরে প্রবেশ করে এর নিগূঢ় রহস্য উদ্ঘাটন করে ঐতিহাসিককে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করতে হবে। উৎস ও তথ্য ঐতিহাসিকের নাগালের সংস্পর্শে না এলে সেগুলোর কোন মূল্য নেই। আবার উৎস ও তথ্য ছাড়া ঐতিহাসিকের ইতিহাস লেখার কোন ক্ষেত্র নেই। অবশ্য উৎস, তথ্য ও ঐতিহাসিকের পাশাপাশি বস্তুনিষ্ঠ ও হৃদয়গ্রাহী ইতিহাস রচনার জন্য সুসংবদ্ধ পদ্ধতিরও বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। এ কারণে যথারীতি ও সুসংবদ্ধ পদ্ধতি অনুসৃত না হলে প্রামাণ্য ইতিহাস রচনা করা সম্ভবপর নয়।

উৎস ও তথ্য থাকা সত্ত্বেও শুধু ঐতিহাসিক না থাকাতে যে ইতিহাস রচনা করা সম্ভবপর নয় তা আমরা নিম্নোক্ত উদাহরণ থেকে বুঝতে পারি। যেমন— গ্রিক ঐতিহাসিক ও ইতিহাসের জনক হিরোডোটাসের পূর্বেও (৪৮৪-৪২০ খ্রিঃ পূঃ) পৃথিবীতে ইতিহাসের অনেক উৎস ও তথ্য ছিল। কিন্তু তখন শুধু ঐতিহাসিকের অভাবহেতু ইতিহাস রচনা করা সম্ভবপর হয়নি। ইতিহাস থেকেই ইতিহাস লেখার সূচনা সম্পর্কে জানা যায়। যে মহান মনীষী ইতিহাস লেখার সূত্রপাত করেন তিনি হলেন হিরোডোটাস। ৪৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিসের রাজধানী এথেন্স নগরীর ছাব্বিশ মাইল দূরবর্তী ম্যারাথন নামক স্থানে গ্রিস ও পারস্যের মধ্যে এক অসম যুদ্ধ শুরু হয়। এখানে পারস্যের ছিল ৬০০ যুদ্ধ জাহাজ ও এক লক্ষ বিশ হাজার সৈন্যের এক বিশাল সমরসজ্জা। পক্ষান্তরে এথেনীয় বাহিনীতে মাত্র ৯০টি, জাহাজ ও আট হাজারের মত সৈন্য ছিল। সৈন্যসংখ্যা ও যুদ্ধ জাহাজের বিপুল পার্থক্যের জন্য ম্যারাথনের যুদ্ধকে অসম যুদ্ধ বলে অভিহিত করা হয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এ যুদ্ধে গ্রিক বাহিনী দেশপ্রেমের দৃঢ় মনোবলের কারণে অবশেষে জয়লাভ করতে সক্ষম হয়। যদিও হিরোডোটাসের জন্মের পূর্বে ম্যারাথনের যুদ্ধ সংঘটিত হয় তথাপি তিনি এ যুদ্ধে গ্রিকরা যে অপরিসীম বীরত্ব প্রদর্শন করে তার দ্বারা ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ হন এবং গ্রিসের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এ যুদ্ধকে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রাখার ইতিহাস লেখা শুরু করেন। উল্লেখ্য, হিরোডোটাসের The Histories নামক গ্রন্থটি মূলত History of the Graeco-persian War-এর ওপর রচিত।

আরও পড়ুন:   

ইতিহাসের উৎস কি কি?

ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা

 

যথাযথ ঐতিহাসিকের সুনজরে পড়লে আমাদের চারপাশকে নিয়ে অতি মনোরম ও বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস লেখা হত। অতএব বলা যায়, ইতিহাস লিখন পদ্ধতির মধ্যে ঐতিহাসিকের ভূমিকা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। সর্বজনীন ও বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করার জন্য ঐতিহাসিককে নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করা একান্ত আবশ্যক।

ক. উৎস সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া : ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি উৎসভিত্তিক। উৎস ছাড়া ইতিহাস রচনা করা সম্পূর্ণ অসম্ভব। বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করার জন্য ঐতিহাসিককে যথাযথভাবে উৎস সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে। উৎস কত প্রকার হতে পারে এবং কোন উৎস কোন পদ্ধতিতে ঐতিহাসিকের নাগালে আনয়ন করা সম্ভব তা ভালভাবে জানতে হবে। যেমন-

১. প্রত্নতাত্ত্বিক ও স্থাপত্যিক উৎস,

২. মুদ্রাতাত্ত্বিক উৎস,

৩. নকশা, ছবি ও অনুরূপ নিদর্শন ভিত্তিক উৎস ও

৪. লিখিত বিবরণমূলক উৎস প্রভৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিকের স্বচ্ছ জ্ঞান থাকতে হবে। এ সকল উৎসের মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় ও বস্তুনিষ্ঠ উৎস, মোটামুটি প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় উৎস থাকতে পারে। সঠিক ইতিহাস রচনা করার জন্য ঐতিহাসিককে এভাবে উৎসসমূহকে যথাযথভাবে চিহ্নিত করতে হবে।

খ. উৎস হতে তথ্য বের করা : উৎস সংগ্রহ, উৎসের শ্রেণীবিভাগ, গুরুত্ব ও অপ্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করার পর সুসংবদ্ধ পদ্ধতিতে ঐতিহাসিককে উৎস হতে তথ্য বের করতে হবে। উৎস নিয়ে একান্ত নিবিষ্ট মনে নিরপেক্ষভাবে ঐতিহাসিককে গবেষণা করতে হবে। এক্ষেত্রে সঠিক গবেষণার জন্য ঐতিহাসিককে যথাসম্ভব উৎসের সমকালীন সময়ে ফিরে যেতে হবে। ঐতিহাসিককে গভীর অনুসন্ধান, গবেষণা ও প্রজ্ঞার দ্বারা উৎস কোন প্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয়েছিল তা উদঘাটন করতে হবে। তাহলে উৎস হতে সঠিক ও প্রামাণ্য তথ্য বের করে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে একজন ঐতিহাসিককে পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে মূলত একজন বৈজ্ঞানিকরূপে কাজ করতে হবে। উৎস হতে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য বের করার জন্য উৎস নির্মাতার মননশীলতা ও উৎসের সমসাময়িক যুগধর্ম তথা আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে। তাম্রশাসন, শিলালিপি বা কাগজের লিখিত বিবরণমূলক উৎসও যাচাই-বাছাই না করে কোন অবস্থাতেই গ্রহণ করা সমীচীন হবে না। উৎস হতে যথাযথ তথ্য বের করে আনার জন্য ঐতিহাসিককে নানাভাবে অনুসন্ধানী প্রশ্ন করতে হবে। তাছাড়া সংগৃহীত তথ্যগুলো স্বীয় নোটবইতে যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে। কারণ লিখিত কার্যক্রম ছাড়া ঐতিহাসিক কার্যক্রম সিদ্ধ হয় না। এভাবে ক্রমাগত বিচার-বিশ্লেষণ ও যাচাই- বাছাই করে প্রয়োজনীয় তথ্য লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলো বর্জন করতে হবে। তারপর নোটবই যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করতে হবে।

এখানে মনে রাখা দরকার যে, উৎসের শেষ নেই এবং গবেষণার সীমা নেই। কাজেই ভাল ইতিহাস রচনা করার জন্য যুগের পর যুগ ধরে উৎস সংগ্রহ করে দশকের পর দশক ধরে গবেষণা করতে থাকলে ইতিহাস গতিহীন হয়ে পড়বে। সেজন্য পরিমিত সময়ে পরিমিত উৎস সংগ্রহ করে তা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তাহলেই ইতিহাস থাকবে গতিশীল ইতিহাস হবে হৃদয়গ্রাহী ও বস্তুনিষ্ঠ। এক্ষেত্রে ঐতিহাসিককে যথাযথ ইতিহাস রচনা করার জন্য সব সময়েই প্রামাণিক তথ্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। অনেক সময় উৎস দুর্বোধ্য হওয়ার কারণে (যেমন- সিন্ধু সভ্যতার সিলমোহর দুর্বোধ্য) ঐতিহাসিককে অনুমান নির্ভরতা বা এক প্রকার মানসিক বিশ্বাসের ওপর ভর করে ইতিহাস লেখার দিকে অগ্রসর হতে হয়। কিন্তু এরূপভাবে ইতিহাস রচনা করা সঙ্গত নয়। যথাযথ ইতিহাস রচনা করার জন্য ঐতিহাসিককে অবশ্যই অনুমান নির্ভরতা, কল্পকাহিনী ও মানসিক বিশ্বাস পরিহার করে প্রামাণ্য তথ্য কেন্দ্রিক হতে হবে। এবং

গ. হিরোডোটাস ও থুসিডিডিসের ইতিহাস লিখন পদ্ধতি : ইতিহাসের জনক হিরোডোটাসের প্রতি যথাযথ সম্মান ও গুরুত্বারোপ করে বলা যায় যে, থুসিডিডিসের ইতিহাস রচনা পদ্ধতির সাথে তাঁর কলাকৌশলের বেশ পার্থক্য ছিল । হিরোডোটাস ইতিহাসের প্রামাণ্যতা ও বস্তুনিষ্ঠতার চেয়ে বর্ণনামূলকতার প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করেন। তাছাড়া তিনি মানুষের কর্মকাণ্ডে দেবতাদের হস্তক্ষেপের বিষয়টি বিশ্বাস করতেন। উল্লেখ্য, তিনি অতি প্রাকৃতিবাদতত্ত্বে কিছুটা বিশ্বাসী ছিলেন। এ সকল কারণে হিরোডোটাসের ইতিহাস সবটুকুই বস্তুনিষ্ঠ ও যুক্তিবাদী হিসেবে রচিত হয়নি। পক্ষান্তরে থুসিডিডিসের ইতিহাস লিখন পদ্ধতি পুরোপুরি বস্তুনিষ্ঠ ছিল। তাঁর ইতিহাস লিখন পদ্ধতির মূলভিত্তি ছিল প্রামাণ্য তথ্য (evidence)। থুসিডিডিস বলেন-“আমি সাক্ষ্যের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি (I consider in the light of evidence)”। তিনিই সর্বপ্রথম ইতিহাসের মূল বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ রেখে সমালোচনামূলক ইতিহাস লিখন পদ্ধতির সূচনা করেন। যে কারণে থুসিডিডিসকে বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের জনক বলা হয়। অতএব বলা যায়, ইতিহাস লেখার সূচনাকারীর সম্মান অবশ্যই পাবেন হিরোডোটাস এবং ইতিহাস লিখন পদ্ধতিকে বস্তুনিষ্ঠ করার কৃতিত্ব অবশ্যই থুসিডিডিসের প্রাপ্য।

ঘ. ধারাবাহিকতা ও সময়ানুক্রমিকতা : ধারাবাহিকতা ও সময়ানুক্রম ইতিহাসের মূলসূত্র। ঐতিহাসিকগণ প্রাপ্ত উৎস ও তথ্যসমূহকে বস্তুনিষ্ঠ করার পাশাপাশি সেগুলোকে ধারাবাহিক ও সময়ানুক্রমিকভাবে লিপিবদ্ধ করবেন। প্রতিটি ব্যক্তি, বিষয় ও ঘটনাকে সম্পূর্ণ হৃদয়ঙ্গম করে তার প্রাথমিক বা সূচনাপর্ব, মধ্যমাবস্থা বা গতি-প্রকৃতি এবং শেষাবস্থা বা ফলাফল মূলত এ তিন ভাগে বিভক্ত করে ক্রমানুযায়ী লিপিবব্ধ করতে হবে। ঘটনা ধারাবাহিকভাবে লিপিবদ্ধ করার পাশাপাশি যথাযথভাবে সময় উল্লেখ করতে হবে। উৎস, তথ্য ও ঘটনার সময় উল্লেখ না করলে ইতিহাস সঠিকভাবে রচনা করা হয় না। কোন্ ঘটনা কখন সংঘটিত হয়েছে তা ঐতিহাসিককে অবশ্যই লিপিবদ্ধ করতে হবে। যেমন- যদি বলা হয় নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তাহলে বর্ণনা সঠিক হল না। কারণ কত “খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে তা এখানে বলা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে লিখতে হবে ‘১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশী প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

ঙ. ভৌগোলিক অবস্থানগত নির্দেশনা : ইতিহাস রচনা করার সময় তথ্য যাচাইবাছাই করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি উৎস ও ঘটনার ভৌগোলিক অবস্থানগত নির্দেশনা থাকাও একান্ত আবশ্যক। ইতিহাস রচনা করার সময় ঐতিহাসিককে স্থানের উল্লেখসহ ইতিহাস রচনা করতে হবে। কারণ পৃথিবীর সকল ঘটনাই কোন না কোন ভৌগোলিক অবস্থানে সংঘটিত হয়ে থাকে। যেমন- যদি বলা হয় ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় তাহলে ইতিহাসের বর্ণনা সঠিক হল না। কারণ এখানে ভৌগোলিক অবস্থানের অর্থাৎ ‘পলাশী’ নামক স্থানের উল্লেখ নেই। সঠিকভাবে ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে ‘পলাশী’ নামক স্থানে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত, হয় বলে উল্লেখ করতে হবে।

ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সংক্রান্ত আলোচনার শেষাংশে আমরা বলতে পারি, সঠিক ইতিহাস রচনা করার ক্ষেত্রে যথাযথ উৎস, তথ্য, ধারাবাহিকতা, সময়ানুক্রমিকতা, ভৌগোলিক অবস্থান প্রভৃতির সৌম্য উপস্থিতি ও হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা থাকতে হবে। উৎস হতে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য বের করে সেগুলোকে স্বীয় মাধুর্য মিশিয়ে ঐতিহাসিক অতি মনোরম ও প্রাঞ্জল ভাষায় সেগুলো উপস্থাপন করবেন। প্রয়োজনীয় তথ্য রেখে অবশিষ্ট তথ্য পরিহার করে ঐতিহাসিক প্রামাণ্য ইতিহাস লেখা শেষ করেন।

Related Posts