কোনো জিনিসের উপযোগ বলতে ওই জিনিসের মানুষের প্রয়োজন বা অভাব মেটানোর ক্ষমতাকে বোঝায়। যেকোনো জিনিস যদি চাওয়া হয় এবং তা যদি তৃপ্তি দেয় তবে তার উপযোগ আছে। যে দ্রব্যের উপযোগ নেই, মানুষ তা ভোগের মাধ্যমে ব্যবহার করে না। উপযোগ নেই এমন দ্রব্য মানুষ অর্থ দিয়ে ক্রয়ও করে না। মানুষ বেঁচে থাকার জন্য অনেক দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করে থাকে। এসব দ্রব্যসামগ্রী ছাড়া মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বইপত্র, ওষুধ প্রভৃতি দ্রব্যসামগ্রী মানুষের অভাব মেটায়। তাই কোনো দ্রব্যের মধ্যে মানুষের অভাব মোচনের বা পূরণের ক্ষমতাকে অর্থনীতিতে উপযোগ বলা হয়।
উপযোগ কাকে বলে?
সাধারণ অর্থে উপযোগ হলো কোনো জিনিসের উপকারিতা। কিন্তু অর্থনীতিতে ‘উপযোগ’ শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থনীতিতে উপযোগের অর্থ তৃপ্তি, উপকারিতা বা অভাব পূরণের ক্ষমতা। কোনো দ্রব্যের মানুষের অভাব মেটানোর ক্ষমতাকে উপযোগ বলে। মানুষ দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন প্রকার দ্রব্যসামগ্রীর অভাব অনুভব করে থাকে। এ অভাব মেটানোর জন্য মানুষের যেসব দ্রব্যের প্রয়োজন হয় সেগুলোর উপযোগ রয়েছে। আর উপযোগ থাকলেই এর চাহিদা থাকে। দ্রব্যটি বস্তুগত বা অবস্তুগত যাই হোক না কেন, বস্তু যদি অভাব পূরণ করতে পারে তবে তার উপযোগ আছে বলে মনে করতে হবে। যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, ঘরবাড়ি, ওষুধ ইত্যাদি মানুষের অভাব পূরণ করে বলে তা উপযোগবিশিষ্ট।
ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর |
অর্থনীতিবিদ আলফ্রেড মার্শাল (Alfred Marshal) এ ধারণাটি প্রদান করেন। তিনি উপযোগ ধারণাটি বিশ্লেষণ করতে নিচের বিষয়সমূহের প্রতি দৃষ্টি দিয়েছেন-
প্রথমত, উপযোগের সাথে নৈতিকতার কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন- ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত, ভালো-মন্দ ইত্যাদির সাথে এসব প্রশ্ন জড়িত থাকে না।
দ্বিতীয়ত, উপযোগ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। মানুষের অভ্যাস, রুচি, আয় প্রভৃতির ওপর উপযোগ বা আকাঙ্ক্ষার তীব্রতা প্রকাশ পায়।
তৃতীয়ত, উপযোগ একটি মানসিক ধারণামাত্র। ভোগের মাধ্যমে মানুষের অভাব পূরণ হয় এবং অভাব পূরণের পর উপযোগ থাকে না।
অধ্যাপক মেয়ার্স (Mayers) বলেন, “উপযোগ হলো কোনো দ্রব্যের বিশেষ গুণ বা ক্ষমতা, যা মানুষের অভাব পূরণে সক্ষম।” (Utility is the quality or capacity of a goods which enables it to satisfy human wants.)
উপযোগের বৈশিষ্ট্য
- উপযোগ একটি মানসিক ধারণা।
- উপযোগ ভোগের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
- ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উপযোগ বিভিন্ন রকম হয়।
- উপযোগ সংখ্যার মাধ্যমে পরিমাপযোগ্য।
- ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে উপযোগ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
- উপযোগ নৈতিকতা দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
- উপযোগ অর্থের মাধ্যমে পরিমাপযোগ্য।
উপযোগ পরিমাপ
উপযোগ পরিমাপের একককে ইউটিল (Util) বলা হয়। দ্রব্য ভোগের মাধ্যমে প্রাপ্ত উপযোগ কীভাবে পরিমাপ করা যায় এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদগণ দুই ধারায় বিভক্ত। অর্থাৎ উপযোগ পরিমাপ পদ্ধতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
সংখ্যাগত বা পরিমাণবাচক উপযোগ (Cordinal Utility) ও
পর্যায়গত উপযোগ (Ordinal Utility)।
সামষ্টিক অর্থনীতি কাকে বলে | সামষ্টিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য সমূহ |
১. সংখ্যাগত বা পরিমাণবাচক উপযোগ
ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণের (যেমন- Gossen, Jevone, Walras, Marshall) মতে, কোনো দ্রব্যের উপযোগ সংখ্যাগতভাবে পরিমাপ করা যায়। মূলত আলফ্রেড মার্শাল পরিমাণগত উপযোগ ধারণার বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এ উপযোগ ধারণায় গাণিতিক সংখ্যা বিবেচনা করে তার ভিত্তিতে উপযোগ পরিমাপ করা হয়। সাধারণত 1, 2, 3… ইত্যাদি Cardinal সংখ্যা। এ সংখ্যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এদের যেকোনোটিকে অন্যটির অনুপাত হিসেবে এবং একটি সংখ্যা অন্যটির কতগুণ সেভাবেও প্রকাশ করা যায়। এ সংখ্যাগত উপযোগ ধারণা দ্বারা বিভিন্ন দ্রব্য থেকে প্রাপ্ত উপযোগের মধ্যে তুলনা করা যায়। আবার একই দ্রব্যের বিভিন্ন একক থেকে প্রাপ্ত উপযোগের মধ্যে তুলনা করা যায়। কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি দ্রব্যের বিভিন্ন একক থেকে প্রাপ্ত উপযোগ যোগ করে মোট উপযোগ নির্ণয় করা যায়।
২. পর্যায়গত উপযোগ
নয়া ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণের (Pareto, Antonelli, Fisher, Hicks-Allen) মতে, উপযোগ একটি মানসিক ধারণা। তাই তা সংখ্যায় পরিমাপ করা যায় না। এ উপযোগ ধারণায় উপযোগ সংখ্যার মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়। এ পর্যায় ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ… এভাবে নির্ধারিত হয়। এভাবে পর্যায়গতভাবে উপযোগ পরিমাপ করে বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে তুলনাও করা যায়।
অতএব, উপরের আলোচনা থেকে আপনারা উপযোগ কাকে বলে, উপযোগের বৈশিষ্ট্য ও উপযোগ পরিমাপ সম্পর্কে ধারণা লাভ করলেন।
1 comment
[…] উপযোগ কাকে বলে? উপযোগের বৈশিষ্ট্য ও পর… […]
Comments are closed.