Home » একতরফা দাখিলা পদ্ধতি কাকে বলে, বৈশিষ্ট্য ও অসুবিধা সমূহ

একতরফা দাখিলা পদ্ধতি কাকে বলে, বৈশিষ্ট্য ও অসুবিধা সমূহ

by Rezaul Karim
একতরফা দাখিলা পদ্ধতি কাকে বলে, একতরফা দাখিলা পদ্ধতির অসুবিধা,

একতরফা দাখিলা পদ্ধতি

যে হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থায় দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির মূলনীতি সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করা হয় না তাকে একতরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে।

এ পদ্ধতিতে শুধুমাত্র ব্যক্তিবাচক হিসাব এবং নগদান ও ব্যাংক হিসাব সংরক্ষণ করা হয়। নামিক ও সম্পত্তিবাচক হিসাব রাখা হয় না। ফলে এ পদ্ধতিতে কোনো কোনো সময় লেনদেনের দুটি পক্ষ আবার কোনো কোনো সময় একটি পক্ষকে লিপিবদ্ধ করা হয়। আবার কোনো সময় কোনো লেনদেনকে মোটেই লিপিবদ্ধ করা হয় না।

তাই আক্ষরিক অর্থে, একতরফা দাখিলা পদ্ধতি বলতে লেনদেনের একটি পক্ষ লিপিবদ্ধ বুঝালেও প্রকৃতপক্ষে তা হলো একতরফা, দু’তরফা ও বেদাখিলার মিশ্রণ মাত্র।

সংজ্ঞা

নিম্নে বিভিন্ন হিসাববিজ্ঞানী কর্তৃক প্রদত্ত একতরফা দাখিলা পদ্ধতির সংজ্ঞা দেওয়া হলো-

জে. আর. বাটলিবয় এর মতে “একতরফা দাখিলা পদ্ধতি প্রকৃতপক্ষে কোনো পদ্ধতি নয়। বরং এটা দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির একটা অসম্পূর্ণ ও বিশৃঙ্খল রূপমাত্র।

সমন্বয় দাখিলা কি? সমন্বয় দাখিলার সুবিধা ও প্রকারভেদ আলোচনা

অধ্যাপক উইলিয়াম পিকলস এর মতে, “একতরফা দাখিলা নামের পদ্ধতিটি একতরফা, দু’তরফা বেদাখিলার সংমিশ্রণ ছাড়া আর কিছুই নয়।”

সুতরাং আমরা বলতে পারি একতরফা দাখিলা পদ্ধতি এক অসম্পূর্ণ ও অবৈজ্ঞানিক হিসাবব্যবস্থা।

একতরফা দাখিলা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য

একতরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি অসম্পূর্ণ, ত্রুটিপূর্ণ ও অবৈজ্ঞানিক হিসাবব্যবস্থা।রএই পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো:

১. কারবার প্রতিষ্ঠান: একমালিকানা ও অংশীদারি ছোট ছোট কারবার প্রতিষ্ঠানে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

২. মিশ্র হিসাবব্যবস্থা: এ পদ্ধতিতে কোনো কোনো লেনদেনের দুটো পক্ষ এবং কোনো কোনো লেনদেনের একটিমাত্র পক্ষ হিসাবভুক্ত করা হয়। আবার এমনও রয়েছে যে, লেনদেন ঘটেছে, কিন্তু এটা সম্পূর্ণভাবে হিসাবভুক্ত করা হয় না। অর্থাৎ এ পদ্ধতি এক তরফা দাখিলা, দু’তরফা দাখিলা ও বিনাদাখিলার একটি মিশ্র হিসাবব্যবস্থা।

৩. হিসাবরক্ষণ: এ পদ্ধতি সাধারণত লেনদেনের দ্বৈতসত্তায় হিসাব রাখা না হলেও নগদান ও ব্যক্তিবাচক হিসাব রাখা হয়ে থাকে।

৪. লাভ-লোকসান নির্ণয়: এ পদ্ধতিতে আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করা হয় না। বছর শেষে সমাপনী মূলধন হতে প্রারম্ভিক মূলধনের পার্থক্য নির্ণয় করে লাভ-লোকসানের পরিমাণ বের করা হয়।

৫. হিসাবের শ্রেণিবিন্যাস: এ পদ্ধতি সম্পত্তি ও আয়-ব্যয়বাচক হিসাবসমূহ হিসাবভুক্ত করা হয় না। শুধুমাত্র নগদান হিসাব ও ব্যক্তিবাচক হিসাব সংরক্ষণ করা হয়।

৬. আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত: এ পদ্ধতি নির্দিষ্ট সময় শেষে উদ্বৃত্তপত্র প্রস্তুত না করে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়।

৭ . সার্বজনীন স্বীকৃতি নীতিমালা: একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে কোনো সার্বজনীন নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না, মালিকের সুবিধা অনুযায়ী হিসাব রাখা হয়।

৮. গোপনীয়তা: এ পদ্ধতিতে কারবারের মালিক স্বয়ং কারবারের হিসাবরক্ষণ করে বলে আর্থিক লেনদেননের গোপনীয়তা রক্ষা পায়।

একতরফা দাখিলা পদ্ধতির অসুবিধা

অবৈজ্ঞানিক এবং ব্যবসায়ীর খেয়াল খুশিমতো হিসাব রাখার পদ্ধতি হলো একতরফা দাখিলা পদ্ধতি। এ পদ্ধতির বহুবিধ অসুবিধা রয়েছে। সংক্ষেপে অসুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো।

১. অসম্পূর্ণ হিসাব সংরক্ষণ

এ পদ্ধতিতে লেনদেনের দ্বৈতসত্তা বা উভয় পক্ষ লিপিবন্ধ করা হয় না বলে অসম্পূর্ণ ও আংশিক হিসাব সংরক্ষিত হয়।

২. রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণ

এ পদ্ধতিতে রক্ষিত হিসাবগুলোর সাহায্যে রেওয়ামিল প্রস্তুত করা যায় না বলে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায় না।

৩. আর্থিক অবস্থা

এ পদ্ধতিতে সম্পত্তি সম্পর্কীয় হিসাবগুলো রাখা হয় না বলে উদ্বৃত্তপত্র প্রস্তুত করা সম্ভব হয় না। ফলে ব্যবসায়ের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা জানা যায় না।

৪. ভুলত্রুটি সংশোধন

এ পদ্ধতি একটি অসম্পূর্ণ হিসাবব্যবস্থা। কাজেই এ পদ্ধতিতে ভুলত্রুটি উদ্‌ঘাটন করা যায় না।

৫. কারচুপি ও জালিয়াতি

কোনো নির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে হিসাব রাখা হয় না। কারচুপি ও জালিয়াতির সম্ভাবনা অধিক।

৬. ব্যয় নিয়ন্ত্রণ

প্রতিষ্ঠানের ব্যয় পৃথক পৃথকভাবে হিসাব সংরক্ষণ করা হয় না। তাই সময়মতো ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে আয় বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া যায় না।

সমন্বয় দাখিলা ও সমাপনী দাখিলার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর

৭. বিশ্বাসযোগ্যতা

একতরফা দাখিলা পদ্ধতির হিসাব ব্যবস্থায় গৃহীত তথ্যাদি সবার নিকট বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।

৮. আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

সুনির্দিষ্ট ভিত্তিতে হিসাব সংরক্ষণ করা হয় না বলে এ পদ্ধতির কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি থাকে না।

৯. ব্যবহার

ছোট ছোট কারবার প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে একমালিকানা কারবার প্রতিষ্ঠানে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

১০. ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হিসাব হতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না।

Related Posts