ঐতিহাসিক পদ্ধতি
যে পদ্ধতির সাহায্যে অতীত সমাজের ঘটনা, সামাজিক রীতি-নীতি এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্পর্কে ধারাবাহিক বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে তাকে ঐতিহাসিক পদ্ধতি বলে। পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বর্তমান সমাজের উৎপত্তি, প্রকৃতি এবং ভূমিকা সম্বন্ধে জ্ঞান অনুসন্ধান করা।
ঐতিহাসিক পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা মানবসমাজের উৎপত্তি, প্রকৃতি ও কার্যধারা সম্বন্ধে জ্ঞানলাভের জন্য অতীত সভ্যতা ও সামাজিক আচার-বিধি ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করে থাকি।
ই. ওয়েস্টারমার্ক (E. Westermarck) এর মতে, “The historical method refers to a study of events, processes and institutions of past civilization, for the purpose of finding the origin of antecedents of contemporary social life and t this understanding its nature and working.”
আরও পড়ুন: পদ্ধতি ও কৌশলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর
ঐতিহাসিক পদ্ধতি পরস্পর নির্ভরশীল দু’টি ধারায় প্রবাহিত:
ক. ইতিহাসের দর্শন এবং
খ. জীববিজ্ঞানের বিবর্তনবাদ।
ঐতিহাসিক পদ্ধতি সামাজিক গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমান সমাজের বীজ লুকিয়ে আছে অতীত ইতিহাসের পাতায়। ইতিহাসের পাতা থেকে লব্ধ জ্ঞানের দ্বারাই বর্তমান সমাজের সঠিক চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়।
ঐতিহাসিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন সামাজিক রীতি-নীতি ও প্রতিষ্ঠান বর্তমানে কী অবস্থায়, অতীতে কী অবস্থায় ছিল এবং কিভাবে রূপান্তরিত হচ্ছে তা বিশ্লেষণ করে দেখতে হলে এ পদ্ধতি প্রয়োগের সময় লক্ষ্য করতে হবে যে, সংগৃহীত ঐতিহাসিক তথ্য যেন সঠিক, সুস্পষ্ট ও যুক্তিসঙ্গত হয়।
এ পদ্ধতিকে অনেকেই যুক্তিসঙ্গত মনে করেন নি। কিন্তু আমরা জানি যে, বর্তমান অবস্থা অতীত ইতিহাসকে মূল্য দেয় এবং পরিস্থিতি বিচারের জন্য অতীতকে জানতে হয়। আর এ পদ্ধতির মূলবক্তব্য হচ্ছে, অতীত জীবনেই বর্তমান জীবনের মূল সূত্র নিহিত রয়েছে। সুতরাং ‘ঐতিহাসিক পদ্ধতি’ সমাজ গবেষণার একটি বিশেষ পদ্ধতি, যাকে মূল্যহীন বলা চলে না। কারণ এ পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা মানবসমাজের উৎপত্তি, প্রকৃতি ও কার্যধারা সম্বন্ধে জ্ঞান লাভের জন্য অতীত সভ্যতা ও সামাজিক আচার-আচরণ প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণা করে থাকি। আমাদের বর্তমান সমাজের রীতি- নীতি, জীবন-যাপন পদ্ধতি প্রভৃতির মূল নিহিত রয়েছে অতীতে এবং সেই অতীত উৎসের যথোপযুক্ত অনুসন্ধানের মাধ্যমেই এসবের ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব।
ঐতিহাসিক পদ্ধতির গুরুত্ব
বাংলাদেশের সমাজ গবেষণায় ঐতিহাসিক পদ্ধতির তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কেননা বাংলাদেশ প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি। এদেশের মানুষের মধ্যে প্রাচীন চিন্তা- ভাবনা, রীতি-নীতি, বিশ্বাস এখনো প্রভাব বিস্তার করে আছে। অনেক সমাজ গবেষক সমাজ গবেষণায় ঐতিহাসিক পদ্ধতির আশ্রয় নেয়ার সুপারিশ করেছেন।
প্রথমত, বাংলাদেশ একটি অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার অংশ। এদেশের অতীত সমাজ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানতে হলে ঐতিহাসিক পদ্ধতির গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।
দ্বিতীয়ত, বর্তমান সমাজের গবেষণায় একটি ঐতিহাসিক পটভূমি জানা প্রয়োজন। কেননা অতীতের গর্ভেই জন্মলাভ করে বর্তমান সমাজ।
তৃতীয়ত, অতীত সমাজের সাথে বর্তমান সমাজের তুলনা করতে প্রয়োজন হয় ঐতিহাসিক পদ্ধতির।
চতুর্থত, বাংলাদেশের বৃহদায়তন সমাজ সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে হলে গোটা দেশের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ঐতিহাসিক পদ্ধতির গুরুত্ব রয়েছে।
পঞ্চমত, বাংলাদেশের মাটি ও মানুষ, এখানকার সমাজব্যবস্থা, ধর্ম, সংস্কৃতি প্রভৃতির সাথে পরিচয় গড়ে তুলতে হলে এদেশের অতীত ঐতিহ্যের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। তাই ইতিহাসের আশ্রয়ে দেশ ও সমাজকে জানতে হলে ঐতিহাসিক পদ্ধতি অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ধাপ সমূহ কি কি?