Home » কর্তৃত্ব কত প্রকার ও কি কি | কর্তৃত্বের প্রকারভেদ

কর্তৃত্ব কত প্রকার ও কি কি | কর্তৃত্বের প্রকারভেদ

by Rezaul Karim
কর্তৃত্ব কত প্রকার, কর্তৃত্বের প্রকারভেদ,

কর্তৃত্ব কত প্রকার?

কর্তৃত্ব কত প্রকার তথা কর্তৃত্বের প্রকারভেদ সম্পর্কে সমাজতাত্ত্বিকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী Max Weber কর্তৃত্বের উৎস এর উপর ভিত্তি করে একে তিনটি শ্রেণিতে বিভাজন করেছেন। শ্রেণি তিনটি হলো:

ক. ঐতিহ্যবাহী কর্তৃত্ব (Traditional Authority),

খ. ঐন্দ্রজালিক বা সম্মোহনী কর্তৃত্ব (Charismatic Authority),

গ. যৌক্তিক আইনগত কর্তৃত্ব (Rational Legal Authority).

ক. ঐতিহ্যবাহী কর্তৃত্ব

ঐতিহ্যবাহী কর্তৃত্ব হচ্ছে সে ধরনের কর্তৃত্ব যা প্রাক আধুনিক সমাজে দেখা যায়, যা কোন বিশ্বাস বা ঐতিহ্যগত অনুমোদনের ফলে কোন বিশেষ ব্যক্তি ভোগ করে থাকে। এটি বংশপরম্পরায় কেউ পেতে পারে, আবার অর্পিত হতে পারে।

আরও দেখুন:   কর্তৃত্ব কি | কর্তৃত্ব কাকে বলে | কর্তৃত্বের সংজ্ঞা দাও

ঐতিহ্যবাহী কর্তৃত্ব হলো সবচেয়ে আবেদনশীল এবং গতানুগতিক। ঐতিহ্যের বৈধতার স্বীকৃতির ভিত্তিতেই এ ধরনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। বংশানুক্রমিক শাসনের একটা ঐতিহ্য থাকে এবং সেই ঐতিহ্যের পিছনে অনুমোদন থাকে। ক্ষমতা প্রয়োগের বৈধতাকে এ অনুমোদন প্রতিষ্ঠিত করে। শাসকের প্রতি জনগণ তাদের আনুগত্য প্রদর্শন করে থাকে। সুতরাং দীর্ঘকালের ঐতিহ্যই হলো ঐতিহ্যনির্ভর কর্তৃত্বের উৎস। ঐতিহ্যবাহী কর্তৃত্বের উপযুক্ত উদাহরণ হিসেবে গ্রেট ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজতন্ত্রের কর্তৃত্বের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়।

বৈশিষ্ট্য:

১. এটি অলিখিত আইন ও পবিত্র গুণাগুণের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।

২. সনাতন নিয়ম, রীতিনীতি ও পদ্ধতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

৩. ঐতিহ্যের অনুমোদনের ভিত্তিতে ক্ষমতার বৈধতাকে স্বীকার করা হয়।

৪. এই কর্তৃত্বের প্রতি আনুগত্য নৈর্ব্যক্তিক নয়।

৫. প্রচলিত নিয়মরীতির ভিত্তিতে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়।

৬. এটি বংশপরম্পরায় বাহিত হয়।

৭. এটি অতীতের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে।

৮. এটি কোন মৌলিক পরিবর্তনে আগ্রহী নয়।

খ. ঐন্দ্রজালিক বা সম্মোহনী কর্তৃত্ব

ঐন্দ্রজালিক বা সম্মোহনী কর্তৃত্ব হচ্ছে সেই ধরনের কর্তৃত্ব যা কোন ব্যক্তি তাঁর অসাধারণ গুণাবলি; যেমন- নৈতিক, সাহসিক কিংবা ধর্মীয় গুণাবলির জন্য অন্যদের কাছ থেকে আনুগত্য দাবি করে।

ব্যক্তিগত গুণাবলির জন্য তিনি তার সমর্থকদের মধ্যে গভীর প্রত্যয় ও শ্রদ্ধার মনোভাব এবং আনুগত্যের সৃষ্টি করেন। তিনি তাঁর অনুসারীদের মনে এমন প্রত্যয় সৃষ্টি করেন যে, তিনি কখনো ভুল করতে পারেন না। তিনি একটি চিহ্নিত সমাজ বা গোষ্ঠীর প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি পান। গোষ্ঠীর সদস্যরা নেতার বিচার বিবেচনা সম্পর্কে সমালোচনা থেকে বিরত থাকেন এবং তার প্রজ্ঞায় গভীর আস্থা প্রকাশ করেন। নেতার গুণাবলিতে মুগ্ধ হয়ে তার কর্তৃত্ব ও শাসন মেনে চলেন। দেশের সংকটময় মুহূর্তে এরূপ কর্তৃত্বের আবির্ভাব ঘটে। এ ধরনের কর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের উদাহরণ হচ্ছে নেপোলিয়ান, মাওসেতুং, লেনিন, মহাত্মা গান্ধী, জর্জ ওয়াশিংটন প্রমুখ।

বৈশিষ্ট্য:

১. ব্যক্তির এক ধরনের নিজস্ব সম্মোহনী আকর্ষণ থাকে।

২. এর আইনগত বৈধতা থাকে না।

৩. ঐ ব্যক্তির প্রতি মানুষের অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস থাকে।

৪. নেতার অনুপস্থিতিতে তার আদর্শ কর্তৃত্বারোপ করতে পারে।

৫. ব্যক্তির গুণাবলির ভিত্তিতেই ক্ষমতা প্রয়োগের বৈধতা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়।

গ. যৌক্তিক আইনগত কর্তৃত্ব

যখন কোন ব্যক্তি যৌক্তিক কারণে বা আইনগত কারণে কারো উপর কর্তৃত্ব করেন Weber তাকে যৌক্তিক আইনগত কর্তৃত্ব বলেছেন। Weber এর মতে, শুধু যৌক্তিক আইনগত কর্তৃত্বেরই আইনগত ভিত্তি এবং যুক্তিপ্রবণতা রয়েছে। কেননা ‘Power is limited by law’ অর্থাৎ, ক্ষমতা এখানে আইনের দ্বারা সীমাবদ্ধ। যুক্তি এবং আইনই এখানে মূল বিষয়, কোন ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয়, নৈর্ব্যক্তিক সম্পর্কই প্রাধান্য লাভ করে।

আরও দেখুন:   ক্ষমতা কাকে বলে এবং ক্ষমতার শ্রেণিবিভাগ

এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন দ্বারা সময়ের ও আইনের বাধ্যবাধকতার ভিত্তিতে প্রশাসন তথা সংগঠন বা রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। এ ধরনের কর্তৃত্বকে জনসাধারণ সহজ ও স্বাভাবিকভাবে স্বীকার করে নেয়। Weber এ ধরনের ব্যবস্থাকে যৌক্তিক আমলাতন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন যা আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পরিলক্ষিত হয়।

বৈশিষ্ট্য:

১. এর বৈধতার ভিত্তি হলো আইনানুগ কাঠামো।

২. এর সবকিছু আনুষ্ঠানিক।

৩. এটি নৈর্ব্যক্তিক।

৪. নিয়মকানুন পরিবর্তন বা প্রবর্তনের জন্য আইনসভা বা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করতে হয়।

৫. নিয়োগের জন্য যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

৬. আইনের মাধ্যমে সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।

সমালোচনা:

১. কর্তৃত্বকে সুনির্দিষ্ট তিনটি ভাগে বিভাজন করা সমীচীন নয়। অন্যান্য আরো কর্তৃত্ব রয়েছে; যেমন- আধা-ঐতিহ্যবাহী কর্তৃত্ব, আধা আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ব।

২. অনেক সময় চরম আমলাতান্ত্রিক থেকে চরম সম্মোহনীতে রূপান্তর ঘটতে পারে। শান্তির সময় সেনাবাহিনী আমলাতান্ত্রিক হলেও যুদ্ধের সময় সম্মোহনী শক্তি লাভ করে।

৩. সম্মোহনী কর্তৃত্বের নেতা সমাজের উঁচু বা নিচু যে কোন স্তরে দেখা যায়। পরিশেষে বলা যায়, উপর্যুক্ত তিন ধরনের কর্তৃত্বের সমালোচনা থাকলেও বর্তমান

রাজনৈতিক সমাজব্যবস্থায় একে অস্বীকার করার উপায় নেই। Max Weber এ তিন ধরনের কর্তৃত্বের কথা বললেও একথাও বলেছেন যে, একজন ব্যক্তির মধ্যে একাধিক কর্তৃত্বের কারণ বিদ্যমান থাকতে পারে। যেমন- হিটলারের মধ্যে Charisma ছিল, জার্মান আইন অনুযায়ী Rational Legal Authority ছিল এবং জার্মানের Folk Tradition অনুযায়ী জাতীয় সমাজতন্ত্রবাদের আবেদনও ছিল। বস্তুত কর্তৃত্ববিহীন সমাজ নেই এবং সমাজের সার্বিক শৃঙ্খলার জন্য কর্তৃত্ব অপরিহার্য।

অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে কর্তৃত্ব কত প্রকার তা জানতে পারলেন। এর মাধ্যমে আপনি উপকৃত হলে অন্যদের সাথেও শেয়ার করুন।

Related Posts