Home » গণমাধ্যম কি? গণমাধ্যমের প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য

গণমাধ্যম কি? গণমাধ্যমের প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য

by Rezaul Karim
গণমাধ্যম কি, গণমাধ্যমের প্রকারভেদ, গণমাধ্যমের বৈশিষ্ট্য,

গণমাধ্যম কি?

গণমাধ্যম সমাজবিজ্ঞানে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় হিসেবে বিবেচ্য। সামষ্টিক আচরণ (Collective behaviour) বা গণআচরণ (Mass behaviour) হচ্ছে জনগোষ্ঠীর সাদৃশ্যপূর্ণ অপেক্ষাকৃত পরিবর্তনশীল ও ক্ষণস্থায়ী আচরণ। গণযোগাযোগের মাধ্যমে এসব আচরণের বিকাশ ঘটে। গণযোগাযোগের মাধ্যমগুলো গণমানুষের চিন্তাচেতনা ও মানসিকতার পরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।

ল্যাটিন শব্দ Masse শব্দ থেকে ইংরেজি Mass শব্দের উদ্ভব, যার অর্থ হচ্ছে ‘গণ’ বা ‘বৃহৎ জনগোষ্ঠী’। অর্থাৎ যখন বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হয় তখন তাকে গণমাধ্যম বা গণযোগাযোগ বলে।

গণযোগাযোগ হচ্ছে ব্যক্তিক (Personal) এবং আন্তঃব্যক্তিক (Impersonal) যোগাযোগের একটি বিস্তৃত রূপ। মানবীয় চিন্তাচেতনা এবং ভাবনাগুলো পারস্পরিক আদানপ্রদানের মাধ্যমে গ্রহণ করাই হচ্ছে গণযোগাযোগ।

আরও পড়ুন:   শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকা আলোচনা কর।

গণমাধ্যমের সংজ্ঞা

‘Oxford Dictionary of Sociology’ তে বলা হয়েছে, “The mass communication are defined as large scale organizations which use one or more of these technologies to communicate with large numbers of people.”

C. Wright Mill তাঁর ‘The Power Elite’ (1956) গ্রন্থে উল্লেখ করেন,

“Mass communication involves messages sent from mass sources in mass ways to audiences, often to make mass money.” D. S. Methta বলেন, “একই সময়ে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর নিকট সংবাদ, ধ্যানধারণা, বিনোদন ইত্যাদি পরিবেশন করাকে গণযোগাযোগ বলে।”

Di Mequail তাঁর ‘Mass Communication Theory‘ গ্রন্থে বলেন, “গণযোগাযোগ হচ্ছে সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়া (Cultural Process)। মানবগোষ্ঠীর কোন সুনির্দিষ্ট ভাষার (Language) উপর যেসব বিধি ও প্রতীক (Symbol) বাছাই করে দেয়া হয়েছে সেগুলোর ব্যবহারের উপর এর প্রক্রিয়া নির্ভরশীল।”

R. P. Molo এর মতে, “যে প্রক্রিয়ার দ্বারা কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকার জনসাধারণের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে তাকে গণযোগাযোগ বলে।”

অতএব বলা যায়, বিভিন্ন তথ্য, মনোভাব এবং আগ্রহকে কোন মাধ্যমের সাহায্যে বহুসংখ্যক লোকের নিকট পৌছানোর প্রক্রিয়াকে গণযোগাযোগ হিসেবে অভিহিত করা য়ায়। বস্তুত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে যাবতীয় তথ্য, সংবাদ ইত্যাদি সর্বসাধারণের অবগতির জন্য ব্যাপক হারে প্রচার করে তখন তাকে গণমাধ্যম বলে।

গণমাধ্যমের বৈশিষ্ট্য

১. গণযোগাযোগ একটি সামগ্রিক বিষয়।

২. জনগণকে উদ্দেশ্য করে বার্তা পরিবেশন করা হয়।

৩. সমগ্র মানবগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশের সাথে সম্পর্কিত।

৪. গণযোগাযোগে শ্রোতারা (Audience) বিচ্ছিন্ন (Scattered) থাকে। ৫. এটি হচ্ছে একটি একমুখী প্রক্রিয়া (One way process).

গণমাধ্যমের প্রকারভেদ

তথ্য বা সংবাদ পরিবেশনের জন্য বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যম ব্যবহৃত হয়ে থাকে। John D. Millit তিন ধরনের গণমাধ্যমের কথা বলেছেন। যথা:

ক. শ্রাব্য মাধ্যম,

খ. দর্শনীয় মাধ্যম ও

গ. শ্রাব্য দর্শনীয় মাধ্যম।

Chester I. Bernard তাঁর ‘The Function of the Executive, Cambridge Mass’ শীর্ষক গ্রন্থে গণমাধ্যমের শ্রেণি বিভাজন করেছেন নিম্নোক্তভাবে:

১. প্রত্যক্ষ বার্তাগ্রাহী গণমাধ্যম যে মাধ্যমের সাহায্যে মানুষের কাছে সরাসরি তথ্য বা সংবাদ পৌছে, সে সকল মাধ্যমকে প্রত্যক্ষ বার্তাগ্রাহী গণমাধ্যম বলে। Bernard এর মতানুযায়ী, প্রত্যক্ষ বার্তাগ্রাহী গণমাধ্যমের শ্রেণিবিন্যাস নিম্নরূপ-

ক. শ্রবণ মাধ্যম রেডিও, মাইক্রোফোন, রেকর্ড প্লেয়ার।

খ. মুদ্রিত মাধ্যম > সাময়িকী, সংবাদপত্র, বুলেটিন, বইপুস্তক।

গ. শ্রবণ-দর্শন মাধ্যম > টি.ভি, চলচ্চিত্র, ভিসিআর, ভিসিপি।

ঘ. গণ সম্বোধন > সভাসমিতি।

ঙ. প্রচলিত বা সনাতন মাধ্যম যাত্রামঞ্চ, নাট্যাভিনয়, লোকসংগীত ইত্যাদি।

২. পরোক্ষ গণমাধ্যম যে সকল ব্যক্তি বা সংস্থা জনসাধারণের কাছে পরোক্ষভাবে তথ্য বা বার্তা পৌঁছে দেয় তাকে পরোক্ষ গণমাধ্যম বলে। পরোক্ষ গণমাধ্যম সমূহ হলো-

ক. সরকারি তথ্য মন্ত্রণালয়,

খ. সাংবাদিক সংঘ,

গ. সংবাদ সংস্থাসমূহ এবং

ঘ. বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি দল।

Related Posts