Home » চাহিদার নির্ধারক সমূহ কি কি? – আলোচনা কর

চাহিদার নির্ধারক সমূহ কি কি? – আলোচনা কর

by Rezaul Karim
চাহিদার নির্ধারক সমূহ কি কি, চাহিদার নির্ধারক গুলো কি কি,

চাহিদার নির্ধারক সমূহ

কোনো একজন ক্রেতা কোনো একটি দ্রব্য কী পরিমাণ ক্রয় করবে তা কতিপয় বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এসব বিষয়ের যেকোনো একটির পরিবর্তন ঘটলে দ্রব্যটির চাহিদার পরিবর্তন ঘটে। চাহিদা বেশকিছু উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। এসব উপাদানকে চাহিদার নির্ধারক বলা হয়। চাহিদার নির্ধারকের সূত্রটি হলো-

Qx = ƒ(Px, Ps, Pc, Y, T, E, N, A, G, t, lt) এখানে, Qx = চাহিদার পরিমাণ, Px = দ্রব্যের দাম, Ps = পরিবর্তক দ্রব্যের দাম, Pc = পরিপূরক দ্রব্যের দাম, Y = ভোক্তার আয়, T = সময়, E = দামের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন সম্পর্কে অনুমান, N= ভোক্তার সংখ্যা, A = বিজ্ঞাপন, G = সরকারের ভূমিকা, t = ভোক্তার রুচি, It = আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ধরন, f= অপেক্ষক। 

চাহিদা রেখা ডানদিকে নিম্নগামী হয় কেন? – ব্যাখ্যা কর

নিচে চাহিদার নির্ধারক সমূহ আলোচনা করা হলো-

১. দ্রব্যের দাম

ভোগকারীর নিকট কোনো দ্রব্যের চাহিদা সেই দ্রব্যের দামের ওপর নির্ভর করে। দামের পরিবর্তনের ফলে চাহিদার বিপরীত দিকে পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে চাহিদা হ্রাস পায় এবং দাম হ্রাস পেলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

২. সংশ্লিষ্ট দ্রব্যের দাম

কোনো দ্রব্যের চাহিদা শুধু তার দামের ওপর নির্ভর করে না, সংশ্লিষ্ট দ্রব্যের দামের ওপরও নির্ভর করে। সংশ্লিষ্ট দ্রব্য বলতে বিকল্প বা পরিবর্তক এবং পরিপূরক দ্রব্য বোঝায়। যেমন চিনির পরিবর্তক গুড় এবং গাড়ির পরিপূরক পেট্রোল। এক্ষেত্রে চিনির দাম বৃদ্ধি পেলে গুড়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। আবার পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি পেলে গাড়ির চাহিদা হ্রাস পাবে।

৩. ভোক্তার আয়

ভোক্তার আর্থিক আয় বৃদ্ধি পেলে তার দ্রব্য ক্রয়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে বিভিন্ন দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। আবার ভোক্তার আর্থিক আয় হ্রাস পেলে তার দ্রব্য ক্রয়ের ক্ষমতাও হ্রাস পায়। ফলে দ্রব্যের চাহিদা হ্রাস পায়।

৪. সময়কাল

সময়ের পরিবর্তনের ফলে চাহিদারও পরিবর্তন ঘটে। শীতকালে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে গরম কাপড়ের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। আবার গরমকালে বৈদ্যুতিক পাখার চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

৫. দামের ভবিষ্যৎ গতি

ক্রেতা বা ভোক্তা যদি মনে করে ভবিষ্যতে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পাবে, তাহলে বর্তমান দামে তার চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। আর ভোক্তা যদি মনে করে, ভবিষ্যতে দ্রব্যের দাম হ্রাস পাবে, তাহলে বর্তমান দামে সে কম পরিমাণ দ্রব্য ক্রয় করবে।

৬. জনসংখ্যা

দেশের জনসংখ্যার ওপর চাহিদা নির্ভর করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোগকারীর চাহিদা সম্প্রসারিত হয়। আবার জনসংখ্যা হ্রাস পেলে ভোগকারীর সংখ্যা কমে দ্রব্যের চাহিদা হ্রাস পায়।

৭. বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন বা প্রচারের ওপর অনেক সময় চাহিদা নির্ভর করে। কোনো পণ্যের প্রচারের ওপর জনসাধারণ আকৃষ্ট হয়ে থাকে। ফলে ভোক্তাকে আকৃষ্ট করতে বিজ্ঞাপন বা প্রচার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৮. ভোক্তার পছন্দ, অভ্যাস, রুচি

ভোক্তার পছন্দ ও রুচি দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা নির্ধারণ করে। ভোক্তার পছন্দ ও রুচির পরিবর্তন হলে দ্রব্যের চাহিদার পরিবর্তন ঘটবে। এছাড়া অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটলেও দ্রব্যের চাহিদার পরিবর্তন ঘটবে।

৯. সরকারের ভূমিকা

দেশে উৎপাদন ও ব্যবসায় বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশের ওপরও কোনো দ্রব্যের চাহিদা নির্ভর করে, যেখানে সরকারের ভূমিকা রয়েছে। অর্থাৎ সরকারের ভূমিকা ইতিবাচক হলে দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। আর সরকারের ভূমিকা নেতিবাচক হলে দ্রব্যের চাহিদা হ্রাস পায়।

১০, সঞ্চয়প্রবণতা

দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশে সঞ্চয়প্রবণতা কম, ভোগপ্রবণতা বেশি। তাই এসব দেশে দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা বেশি হবে এবং উন্নত দেশে সঞ্চয়প্রবণতা বেশি; কিন্তু ভোগপ্রবণতা কম। তাই এসব দেশে দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা কম হয়।

১১. আয় বণ্টন

সমাজে আয় বণ্টনের ওপর দ্রব্যের চাহিদা নির্ভর করে। আয়ের বণ্টন সুষম হলে জনগণের আয় বৃদ্ধি পায় বলে চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। আয় বণ্টনে বৈষম্য থাকলে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থার অবনতির কারণে সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস পাবে।

 

একটি কাল্পনিক চাহিদা সূচি থেকে চাহিদা রেখা অঙ্কন কর

১২. সামাজিক নিরাপত্তা

সামাজিক নিরাপত্তা সুরক্ষিত হলে দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। আর সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা হ্রাস পাবে।

১৩. করের প্রভাব

সমাজে করের বোঝা বেশি হলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। ফলে তার দ্রব্যের চাহিদা কমবে। আর যদি করের প্রভাব কম হয় তবে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিহেতু দ্রব্যের চাহিদা বাড়বে।

১৪. পারিপার্শ্বিক প্রভাব

ব্যক্তিবিশেষের চাহিদা পারিপার্শ্বিক বিষয়ের ওপরও নির্ভর করে। বিত্তবান প্রতিবেশী এবং বন্ধুবান্ধবের উচ্চ জীবনযাত্রার মান কেউ অনুসরণ করলে বিলাসজাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।

১৫. ব্যবসায় বাণিজ্য ও উৎপাদন পদ্ধতি

ব্যবসায় বাণিজ্যের গতি ও উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তনের সাথে সাথে চাহিদারও পরিবর্তন ঘটতে পারে। ব্যবসায় বাণিজ্যের অবস্থা ভালো হলে এবং উৎপাদন পদ্ধতির উন্নতি ঘটলে সাধারণ লোকের প্রকৃত আয় বৃদ্ধি পেয়ে চাহিদা সম্প্রসারিত হবে। বিপরীতক্রমে ভোগকারীর চাহিদা হ্রাস পাবে।

সুতরাং চাহিদার অনেক নির্ধারক রয়েছে। উপরে বর্ণিত নির্ধারক সমূহ ছাড়া আরও কিছু বিষয় দ্বারা চাহিদার পরিবর্তন হয়ে থাকে। যেমন- অর্থের যোগানের পরিবর্তন হলে, নতুন দ্রব্যের উদ্ভাবন হলে, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হলে প্রভৃতি প্রবণতার কারণে চাহিদা প্রভাবিত হয়।

Related Posts

1 comment

Comments are closed.