চাহিদা কি?
সাধারণত কোনোকিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে চাহিদা বলে। কিন্তু অর্থনীতিতে কোনোকিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকেই চাহিদা বলা যায় না। কারণ আকাঙ্ক্ষাই যদি চাহিদা হতো, তবে ভিক্ষুকের গাড়ি কেনার আকাঙ্ক্ষাকে চাহিদা বলা হতো। কিন্তু এটি চাহিদা নয়। চাহিদা হলো একজন লোকের ওইরূপ আকাঙ্ক্ষা, যে আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য তার অর্থ ব্যয় করার ইচ্ছা এবং আর্থিক সামর্থ্য থাকে।
চাহিদার বৈশিষ্ট্য
চাহিদার মূল উপাদান বা বৈশিষ্ট্য তিনটি। যথা-
(ক) ভোগ করার ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা,
(খ) ক্রয় করার অর্থনৈতিক সামর্থ্য ও
(গ) অর্থ ব্যয় করার ইচ্ছা।
এ তিনটি বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে কার্যকরী চাহিদা সৃষ্টি হয়।
ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি ব্যাখ্যা কর |
চাহিদার সংজ্ঞা
বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্নভাবে চাহিদার সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
অর্থনীতিবিদ বেনহাম (Benham) বলেন, “কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ক্রেতা বিভিন্ন সম্ভাব্য দামে একটি দ্রব্যের যে বিভিন্ন পরিমাণ ক্রয় করতে প্রস্তুত, তাই ওই দ্রব্যের চাহিদা।” (Demand for anything at a given price is the amount of it which will be bought per unit of time at that price.)
অর্থনীতিবিদ ববার (Bober) বলেন, “একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো বাজারে ক্রেতারা বিভিন্ন দামে বা বিভিন্ন আয়ে অথবা সম্পর্কযুক্ত দ্রব্যের বিভিন্ন দামে কোনো নির্দিষ্ট দ্রব্য বা সেবার যে বিভিন্ন পরিমাণ ক্রয় করে তাকে চাহিদা বলে।”
অধ্যাপক পেনসন (Penson) বলেন, “কোনো দ্রব্য পাওয়ার ইচ্ছার পশ্চাতে অর্থ ব্যয় করার সামর্থ্য ও অর্থ ব্যয় করার ইচ্ছা থাকলে তাকে চাহিদা বলা হয়।” (The desire for any commodity backed by ability and willingness to spend is considered as demand in economics.)
সুতরাং কোনো দ্রব্য বা সেবা ক্রয়ের সামর্থ্য ও অর্থ ব্যয়ের ইচ্ছা দ্বারা সমর্থিত আকাঙ্ক্ষাই চাহিদা। অর্থনীতিবিদদের মতে, চাহিদার পরিমাণ হলো সেই পরিমাণ দ্রব্য যা ভোক্তা নির্দিষ্ট দামে ক্রয় করতে ইচ্ছুক। তবে চাহিদা বলতে আবার বিশেষ দামে চাহিদার পরিমাণকে বোঝায়।
চাহিদার প্রকারভেদ
চাহিদা সাধারণত তিন ধরনের হয়। যথা-
১. দাম চাহিদা,
২. আয় চাহিদা ও
৩. আড়াআড়ি চাহিদা।
১. দাম চাহিদা দ্রব্যের দাম দ্বারা নির্ধারিত চাহিদাকে দাম চাহিদা বলে। অর্থাৎ অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত থাকা অবস্থায় নির্দিষ্ট দামের সাপেক্ষে ভোক্তা দ্রব্য ও সেবা ক্রয় করে। এ পরিমাণকে দাম চাহিদা বলা হয়। এ দামের পরিবর্তনে চাহিদা পরিবর্তিত হয়।
মোট উপযোগ ও প্রান্তিক উপযোগের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা |
২. আর চাহিদা ভোক্তার আয় দ্বারা নির্ধারিত চাহিদাকে আয় চাহিদা বলে। এক্ষেত্রে অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থেকে ভোক্তার বিভিন্ন আয়ের সাপেক্ষে কোনো দ্রব্য ও সেবা ক্রয় করে এ পরিমাণকে আয় চাহিদা বলে। আয়ের পরিবর্তনের ফলে এরূপ চাহিদার পরিবর্তন হয়।
৩. আড়াআড়ি চাহিদা সম্পর্কিত অন্য দ্রব্যের দাম দ্বারা নির্ধারিত চাহিদাকে আড়াআড়ি চাহিদা বলে। অর্থাৎ আড়াআড়ি চাহিদা বলতে কোনো দ্রব্যের ওই পরিমাণকে বোঝায় যা একজন ভোক্তা ওই দ্রব্য নয় বরং সম্পর্কিত অন্য দ্রব্যের দামের পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে ক্রয় করে। এক্ষেত্রে সম্পর্কিত দ্রব্যের দামের পরিবর্তনের ফলে বিবেচ্য দ্রব্যের চাহিদা পরিমাণ প্রভাবিত হয়।
অতএব উপরের আলোচনা থেকে আপনার চাহিদা কি বা কাকে বলে এবং চাহিদার বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে পারলেন।