Home » চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম গুলো কি কি?

চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম গুলো কি কি?

by Rezaul Karim
চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম,

চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম

চাহিদা বিধিতে বলা হয়েছে, দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে চাহিদা হ্রাস পায় এবং দাম হ্রাস পেলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। চাহিদা বিধির এ কার্যকারিতার জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। এসব শর্তের পরিবর্তনে চাহিদা বিধির কিছু ব্যতিক্রম দেখা যায়। চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম সমূহ নিচে আলোচনা করা হলো-

১. রুচি ও অভ্যাসের পরিবর্তন

চাহিদা বিধিতে ধরে নেওয়া হয়েছে, ভোক্তার রুচি ও অভ্যাস স্থির থাকবে। কিন্তু বাস্তবে ভোক্তার রুচি ও অভ্যাস স্থির থাকে না। ফলে চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম ঘটে।

২. গিফেন দ্রব্য

স্যার রবার্ট গিফেন (Sir Robert Giffen) প্রথমে এ ধরনের দ্রব্যের অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেন বলে তার নামানুসারে এসব দ্রব্যের নাম ‘গিফেন দ্রব্য’ রাখা হয়। গিফেন দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা বিধিটির ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়। জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যেমন- চাল, ডাল, আলু, লবণ, তেল প্রভৃতিকে নিকৃষ্ট দ্রব্য বলা হয়। এসব নিকৃষ্ট দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে ভবিষ্যতে দাম আরও বৃদ্ধি পেতে পারে ভেবে ভোক্তারা বেশি পরিমাণে এসব দ্রব্য ক্রয় করে। ফলে দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে দ্রব্যের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। আবার দাম হ্রাস পেলে ভবিষ্যতে দাম আরও হ্রাস পেতে পারে ভেবে কম পরিমাণ দ্রব্য ক্রয় করে। ফলে দাম হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে দ্রব্যের চাহিদাও হ্রাস পায়।

চাহিদা বিধি কি? – উদাহরণ ও চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা

৩. ভেবলেন দ্রব্য

উনবিংশ শতকের অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী থর্সটেইন ভেবলেনের মতে, ভেবলেন দ্রব্য বা বিলাসজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে দাম ও চাহিদার মধ্যে সমমুখী সম্পর্ক বিরাজ করে। সমাজ বিত্তশালী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রদর্শন মনোভাবের কারণে মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ প্রকার ব্যতিক্রম ঘটে। স্বর্ণ, হীরা ইত্যাদি জিনিসের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রভাব লক্ষ করা যায়। এ দ্রব্যের চাহিদা রেখা বাম দিক থেকে ডান দিকে ঊর্ধ্বগামী হয়।

৪. ক্রেতার অজ্ঞতা

কোনো কোনো ক্রেতা দ্রব্যের দামকেই দ্রব্যের গুণগত মানের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে ক্রেতার অজ্ঞতার কারণে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও চাহিদার পরিমাণ কমে না বরং বৃদ্ধি পায়।

৫. আয়ের পরিবর্তন

দ্রব্যের দাম পরিবর্তনের হার অপেক্ষা যদি ক্রেতার আয় পরিবর্তনের হার অধিক হয় অর্থাৎ ক্রেতার প্রকৃত আয়ের পরিবর্তনে চাহিদা বিধি কার্যকর নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে আয় বৃদ্ধি পেলে দ্রব্যের দাম বাড়লেও ক্রেতা কম ক্রয় করে না। অর্থাৎ দামের পরিবর্তনের ফলে চাহিদার পরিমাণ পরিবর্তিত হয় না।

৬. ভবিষ্যৎ দাম পরিবর্তনের সম্ভাবনা

কোনো দ্রব্যের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকলে বর্তমানে বেশি দামেও ওই দ্রব্যের চাহিদা কমবে না বরং বৃদ্ধি পাবে। কারণ ভবিষ্যতে দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনার কারণে জনগণ বর্তমানে ওই দ্রব্য বেশি পরিমাণে ক্রয় করে।

৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রে

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রে (লবণ, ওষুধ) চাহিদা বিধি কার্যকর হয় না। এক্ষেত্রে চাহিদা রেখা দাম অক্ষের সমান্তরাল। অর্থাৎ দামের বৃদ্ধি বা হ্রাসের ফলে এ সকল দ্রব্যের চাহিদার কোনো পরিবর্তন হয় না।

৮. অবস্থাগত কারণ

অনেক সময় পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দ্রব্যের দাম হ্রাস পেলেও চাহিদা বৃদ্ধিও পায় না। যেমন কোনো এলাকায় কলেরা দেখা দিলে মাছের দাম হ্রাস পেলেও চাহিদা বৃদ্ধি পাবে না। এ সময় কলেরা প্রতিষেধক ওষুধের দাম বৃদ্ধি পেলেও চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।

চাহিদা কি | চাহিদা কাকে বলে | চাহিদার বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ

৯. শেয়ারবাজার

কোনো শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেলে শেয়ারের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কারণ লোকে মনে করে, শেয়ারের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। এজন্যই এক্ষেত্রে চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম দেখা যায়।

১০. বিকল্প কিংবা পরিপূরক দ্রব্য

কোনো একটি দ্রব্যের দাম পরিবর্তিত হলে এর বিকল্প কিংবা পরিপূরক দ্রব্যের চাহিদার পরিবর্তন হয়। যদি চায়ের দাম হ্রাস পায়, তবে যেসব ক্রেতা কফি ক্রয় করে কফির পরিবর্তে চায়ের ব্যবহার আরম্ভ করবে। আবার পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি পেলেও হোন্ডা ব্যবহারকারীরা হোল্ডার ব্যবহার কমাবে না।

১১. অন্যান্য বিষয়ের পরিবর্তন

চাহিদা বিধির সাথে আমরা একটি বিষয় যুক্ত করেছিলাম। যেমন অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত থাকলে। এ অন্যান্য বিষয় হলো ভোগকারীর আয়, রুচি, অন্যান্য দ্রব্যের দাম, বণ্টন ব্যবস্থা, সময়, আবহাওয়া, ভোগকারীর সংখ্যা ইত্যাদি। এসব বিষয় পরিবর্তিত হলে কোনো দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও চাহিদা হ্রাস পাবে না বা দাম হ্রাস পেলেও চাহিদা বৃদ্ধি পাবে না।

Related Posts

1 comment

চাহিদা সূচি কি | চাহিদা সূচি কাকে বলে | চাহিদা সূচির প্রকারভেদ February 27, 2024 - 10:21 am

[…] চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম গুলো কি কি? […]

Comments are closed.