Home » জেনে নিন আপনার ঠোঁট ফাটার কারণ ও প্রতিকারের উপায়

জেনে নিন আপনার ঠোঁট ফাটার কারণ ও প্রতিকারের উপায়

by Ayesha
ঠোঁট ফাটার ওষুধ, ঠোঁট ফাটার কারণ, গরমে ঠোঁট ফাটার কারণ, ঠোঁট ফাটা কমানোর উপায়,

আপনার ঠোঁট ফাটছে? শীতে, গরমে বা সারাবছরই ঠোঁট ফাটা সমস্যায় ভুগছেন? উপায় কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন না? তাহলে সঠিক আর্টিকেলটিই পড়ছেন। আজকে আমি আলোচনা করবো ঠোঁট ফাটার কারণ ও ঠোঁট ফাটা কমানোর উপায় সম্পর্কে।

ঠোঁট ফাটার কারণ

সাধারণত ঠোঁট ফাটার কারণ হিসেবে দেখা হয় শুষ্কতাকে। আর এই শুষ্কতা বেশি দেখা যায় শীতকালে। তাই শীতকালে ঠোঁট ফাটা একটি সাধারণ বিষয়। এসময় ঠোঁটের শুষ্কতা রোধে অনেকে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজান, কিন্তু ঠোঁট ফাটা বন্ধ হওয়ার পরিবর্তে আরও বাড়ে।

আমাদের দেহের ত্বকে সিবেসিয়াস গ্রন্থি নামে একধরনের তৈলাক্ত রস ক্ষরিত হয় যাকে সিবাম বলা হয়। এই সিবাম ঘামের সাথে মিশে সারা শরীরের ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে এবং ত্বককে আর্দ্র ও মসৃণ রাখে। সেজন্য ত্বক ফাটে না।

শীতকালে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব কম থাকে। তাই সিবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে বেরিয়ে আসা সিবাম আমাদের সারা শরীরের চামড়ায় ঠিকমতো পৌঁছতে পারে না। এজন্য শরীরের চামড়াগুলো শুকিয়ে কুঁচকে ফেটে যায়।

ঠোঁট খুব পাতলা ও নরম হওয়ায় এটি আরও বেশি শুকনো থাকে। এছাড়াও এর অবস্থান নাকের নিচে হওয়ার ফলে নিঃশ্বাসের গরম বাতাস ঠোঁটকে আরও শুকনো করে ফেলে। তাই শীতকালে সবারই ঠোঁট ফাটে। কিন্তু গরমকালে? গরমকালেও যে অনেকের ঠোঁট ফাটে! আসুন জেনে নিই।

অন্যান্য লেখা:

শীতে ত্বকের যত্নে সেরা ১০ টি ঘরোয়া উপায় – চেহারা হবে উজ্জ্বল

কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার তালিকা ও কোলেস্টেরল কমানোর উপায়

শরীর সুস্থ রাখার উপায় দোয়া রুটিন খাবার ব্যায়াম ও অন্যান্য

গরমে ঠোঁট ফাটার কারণ

প্রচন্ড গরমের দিনেও অনেকে ঠোঁট ফাটার যন্ত্রণায় ভুগেন। শুধুমাত্র মেয়েদের নয়, ছেলেদেরও এই সমস্যা হতে দেখা যায়। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা আবহাওয়া বা জলবায়ু পরিবর্তনকেই দেখছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সব ঋতুরই কিছু না কিছু বৈশিষ্ট্য পাল্টে গেছে যা সরাসরি মানবশরীরে প্রভাব পড়ছে।

অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট, কিডনি ও ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ঔষধ আমাদের শরীর থেকে পানি বের করে নেয়। সেকারণেও ত্বকে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যায়, বিশেষ করে ঠোঁটে।

ঠোঁট ফাটার অন্যান্য কারণ

এছাড়াও ঠোঁট ফাটার অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-

  • বারবার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট চাটা
  • পুষ্টি ও ভিটামিনের অভাব
  • প্রচন্ড সূর্যের তাপে পানিশূন্যতা,
  • এলার্জি ও থাইরয়েডের সমস্যা,
  • ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অভাব,
  • লিপস্টিক, লিপবাম বা লিপজেলের প্রতি এলার্জি। এসবে ল্যানোলিন, স্যালিসিলিক অ্যাসিড থাকায় অনেকের ঠোঁটে এই সমস্যা বাড়ায়।
  • সাইট্রাস জাতীয় ফল বেশি খেলে অনেকের ঠোঁট ফেটে যায়।

ঠোঁট ফাটা কমানোর উপায়

ঠোঁট ফাটা কমানোর জন্য কিছু বিষয়ে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। এবং কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। এগুলো হলো-

  • শরীরে কোনোভাবেই যাতে পানিশূন্যতা তৈরি না হয়, তার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
  • ঠোঁট সবসময় যাতে ভেজা তথা আর্দ্র থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এলার্জিজনিত সমস্যা না থাকলে ঠোঁটে লিপবাম বা ভ্যাসলিন জাতীয় ময়েশ্চারাইজার লাগাতে পারেন। এছাড়াও রোদে বেরোনোর আগে ঠোঁটে সানস্ক্রিন লাগাতে পারেন।
  • অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া ঘি, মধুও ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো আপনার ঠোঁটকে নরম রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
  • লিপস্টিক ওঠাতে ক্লিনজার ব্যবহার করার পরে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে পারেন।
  • ঠোঁট ফাটা আটকাতে নারকেল তেলও লাগাতে পারেন।
  • যদি ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরোয়, তবে অবশ্যই ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিবেন।

ঠোঁট ফাটার ওষুধ

আমি অনলাইন ব্লগে ঠোঁট ফাটার ওষুধ সাজেস্ট করবো না। আপনি যদি ওষুধ খেতে চান অবশ্যই একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিবেন। আমি এখানে ঘরোয়াভাবে ঠোঁট ফাটা কমানোর কিছু উপায় সম্পর্কে বলতে পারি যেগুলোকে ঠোঁট ফাটার ঘরোয়া ওষুধও বলা যেতে পারে। এগুলো হলো-

নারকেল তেল: খুবই সহজলভ্য একটি জিনিস। এটি ঠোঁট ফাটা কমাতে দারুণ সাহায্য করে থাকে। এর মধ্যে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড ঠোঁটকে আর্দ্র ও ভেজা রাখে। তাই আপনার ঠোঁট ফাটা কমাতে ঘরোয়াভাবে নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।

মধু-ভ্যাসলিন: মধু খুবই উপকারি একটি পদার্থ। বিভিন্ন ঔষধি গুণে ভরপুর মধুতে আছে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী উপাদান। অন্যদিকে ভ্যাসলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি ত্বককে শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করে নরম রাখে। তাই এই দুইয়ের মিশ্রণ মাখলে ঠোঁট ফাটা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েলকে বলা হয় প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার ও লুব্রিকেন্ট। এতেও নারকেল তেলের মতো প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা আপনার ঠোঁটকে নরম ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করবে।

ঘৃতকুমারী: রূপচর্চার জন্য বিখ্যাত হলো অ্যালোভেরা তথা ঘৃতকুমারী। এতে প্রাকৃতিক যে উপাদানগুলো রয়েছে সেগুলো ঠোঁটকে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

আরও পড়তে পারেন:

জেনে নিন ২০টি পেটের গ্যাস কমানোর খাবার

১০টি হাটুর ব্যাথা সারানোর ব্যায়াম

হার্টের ব্লক দূর করার ১০টি ব্যায়াম

শেষ কথা

ঠোঁট ফাটা একটি সাধারণ বিষয় হলেও দীর্ঘদিন বা সারাবছর ঠোঁট ফাটা সমস্যায় ভুগলে একে অবহেলা করা উচিত নয়। যদি ঠোঁট ফাটা কমানোর উপায় গুলো অনুসরণ করার পরও ঠোঁট ফাটা কমাতে না পারেন, তবে আপনার অবশ্যই একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করা উচিত। লেখাটি থেকে উপকৃত হলে অবশ্যই শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিবেন।

Related Posts