Home » নারী নির্যাতন কি? নারী নির্যাতনের ৫টি কারণ আলোচনা কর

নারী নির্যাতন কি? নারী নির্যাতনের ৫টি কারণ আলোচনা কর

by Rezaul Karim
নারী নির্যাতন কি, নারী নির্যাতনের ৫টি কারণ,

নারী নির্যাতন

নারী নির্যাতন একটি ব্যাপক অর্থবহ প্রত্যয়। পুরুষ কর্তৃক নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে অথবা বলপ্রয়োগ করে কোনকিছু করতে বাধ্য করাই নারী নির্যাতন। এছাড়া নারী নির্যাতনের সুস্পষ্ট সংজ্ঞায় বলা যায় যে, নারী নির্যাতন এমন একটি লিঙ্গীয় অপরাধমূলক কাজ, যার ফলে নারী লিঙ্গীয় অথবা মানসিক ক্ষতি হয় অথবা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া এ ধরনের দুষ্কর্ম ঘটানোর হুমকি দেওয়া, নানা রকম জোর জবরদস্তি করা, চলাফেরার বিঘ্ন ঘটানোও নির্যাতনের সংজ্ঞায় পড়ে। ১৯৯৫ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক নিম্নোক্ত সংজ্ঞাটি প্রদান করা হয়: “Gender violence is a violence against women that results in physical, mental, sexual, coercion or orbitaray deprived and a violation of human rights.”

২০০২ সালে ঢাকায় আয়োজিত “Sub-Regional Expert Group Meeting on Eliminating Violence Against Women” শীর্ষক নেপালের সেন্টার ফর উইম্যান এন্ড কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের কান্ট্রি রিপোর্টে নারী নির্যাতন সম্পর্কে বলা হয়, “Violence against women is not just an assult against an individual but against women’s personhood, mental or physical integrity or over freedom of movement on account of their gender.” অর্থাৎ, নারী নির্যাতন শুধু কোন ব্যক্তির উপর আক্রমণাত্মক বিশেষ কিছু নয় বরং নারীর বিরুদ্ধে মানসিক অথবা শারীরিক অথবা স্বাধীনভাবে চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ।

বেকারত্ব কি? বাংলাদেশে বেকারত্বের কারণ গুলো কি কি?

উপর্যুক্ত সংজ্ঞানুযায়ী শারীরিক মানসিক লিঙ্গীয় নির্যাতন যেমন- যৌতুক অনাদায়ে নির্যাতন, ধর্ষণ, নারী পাচার ও লিঙ্গীয় শোষণ, স্ত্রীকে মারধর করা, নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণ ও শারীরিক অত্যাচার, যৌন হয়রানি, পাচার ও পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করা ইত্যাদি অপরাধমূলক কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

নারী নির্যাতনের ধরন

নারী নির্যাতন সাধারণত দু’ভাবে হয়ে থাকে। যেমন- (ক) শারীরিক নির্যাতন ও (খ) মানসিক নির্যাতন। কিন্তু বর্তমানে সংবাদপত্র, পুলিশ এবং কিছু কিছু স্টাডি রিপোর্ট থেকে যে তথ্য পাওয়া যায় তা থেকে দেখা যায় যে, নারী ও কন্যা শিশুরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। যেমন-

i. যৌন হয়রানি

ii. ধর্ষণ

iii. লিঙ্গীয় অঙ্গহানী

iv. কন্যা শিশু হত্যা বা মেয়ে শিশুর ভূণ হত্যা

v. নারী হত্যা

vi. যৌতুকের কারণে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে হত্যা

vii. এসিড নিক্ষেপে বিকলাঙ্গকরণ বা হত্যা।

viii. সশস্ত্র সংঘাত বা রাজনৈতিক সামাজিক অস্থিরতাকালীন গণধর্ষণ।

নারী নির্যাতনের ৫টি কারণ

নারী নির্যাতনের বহুবিধ কারণ রয়েছে। কেননা বিভিন্ন নারী বিভিন্ন কারণে অথবা একই নারী একাধিক কারণে নির্যাতনের শিকার হতে পারে। নিম্নে নারী নির্যাতনের ৫টি কারণ তুলে ধরা হল-

পারিবারিক কারণ

নারী নির্যাতনের কারণের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুতর ও ঘৃণ্য হচ্ছে পারিবারিক নির্যাতন। আর এ পারিবারিক নির্যাতনের আওতায় প্রথমে পড়ে যৌতুক প্রথা। ঘৃণ্য যৌতুক প্রথার যৌতুকের পরিমাণের উপর বউয়ের পারিবারিক মর্যাদা ও আদর নির্ভরশীল। প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যৌতুক দিতে বিলম্ব হলে অনেক সময় স্বামী ও শ্বশুর শাশুড়ির হাতে মার খেতেও দেখা যায়। এদিক থেকে মেয়েরা তার শ্বশুরবাড়িতে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করে থাকে।

আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থা হচ্ছে পিতৃতান্ত্রিক। এ পারিবারিক ব্যবস্থায় নারী শিক্ষার বিমুখতা দেখা যায়। বহুবিবাহের ফলে পরিবারের স্ত্রীর মানমর্যাদা খুবই কম থাকে এবং স্বামীর ইচ্ছামতো না চললে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়েদের বিয়ের সময় পারিবারিকভাবে কোন মতামত নেওয়া হয় না। ফলে মেয়ের স্বামী পছন্দ না হলেও মুখ বুজে সারাটি জীবন মানসিক নির্যাতনে সংসার করতে হয়।

সামাজিক কারণ

নারী নির্যাতনের শ্রেণিভুক্তকরণের মধ্যে সামাজিক কারণও অন্যতম প্রধান। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:

  • সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়।
  • পুরুষশাসিত তথা পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা।
  • সামাজিক কুসংস্কার
  • নারী-পুরুষের সামাজিক বৈষম্য।
  • সামাজিক নিরাপত্তার অভাব।
  • উত্তরাধিকারসূত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পদের অসম বণ্টন ব্যবস্থা।
  • অজ্ঞতা ও নিরক্ষরতার কারণে সামাজিকভাবেই নারীদেরকে মানসিকভাবে অবমূল্যায়নের প্রবণতা।
  • সামাজিকভাবে নারী সচেতনতার অভাব।
  • যৌতুক প্রদানের ঘৃণ্য সামাজিক প্রথা।
  • নানা রকম সামাজিক অস্থিরতার প্রভাবে অনেকেই তার আচরণকে সর্বদা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়। এজন্য মূল্য দিতে হচ্ছে নারী সমাজকে। ফলে অনিচ্ছাকৃতভাবেও নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে।

অর্থনৈতিক কারণ

অর্থনৈতিক কারণেও নারীরা অহরহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কারণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে স্তিমিত উন্নয়ন সেখানে কম্পিত। আমাদের দেশের নারীসমাজ যেহেতু অর্থনৈতিক দিক থেকে একেবারে প্রতিষ্ঠিত নয় সেহেতু তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবেও নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়। যেসব অর্থনৈতিক কারণগুলো নারী নির্যাতনের জন্য দায়ী সেগুলো হলো:

  • অর্থনৈতিক দিক থেকে নারীরা পুরুষের উপর নির্ভরশীলতার কারণে নারীরা সর্বত্র অবহেলিত।
  • অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য বিদেশে নারী ও শিশু পাচার।
  • যৌতুকের নামে বউ এর উপর নিমর্ম অত্যাচার
  • দরিদ্রতার কারণে তথা আর্থিক অনটনে পড়ে ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও অনেক মেয়ে আর্থিক উপার্জনে দেহ ব্যবসায় লিপ্ত হয় এবং নির্যাতনের শিকার হয়।
  • আর্থিক উপার্জনের অক্ষমতার আক্রোশে অনেক সময় পরিবারের পুরুষগণ নারীদের প্রতি নির্মম অত্যাচার করে।
  • অনেক ক্ষেত্রে বিকৃত রুচির অনেক উচ্চাভিলাষী ব্যক্তিগণ অনেক টাকার অহংকারে মেয়েদের দাসী ও পণ্যরূপে ব্যবহার করে।
  • আমাদের পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের অর্থনৈতিক অবমূল্যায়ন সত্যিই ঘৃণ্য পন্থা।

মনস্তাত্ত্বিক কারণ

নারী নির্যাতনের বিশেষ একটি দিক হচ্ছে মানসিক নিপীড়ন; যার পরিণতিতে বিপুল সংখ্যক মহিলা মানসিক কষ্টে জীবনযাপন করে এবং শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করে বসে। নারী নির্যাতনের জন্য মানসিক বা মনস্তাত্ত্বিকভাবে যে কারণগুলোকে সচরাচর দায়ী বলে মনে করা হয় সেগুলো হলো:

  • সমাজের মানুষের নৈতিক অবক্ষয়।
  • আত্মমর্যাদাবোধের সুস্পষ্টতা ও আত্মভাবমূর্তির অস্পষ্টতার কারণে নারীরা নিজেদেরকে কেবল নারী বলে মনে করে। ফলে তারা নিজেদের অধিকার আদায়ে সক্ষম হয় না। অধিকার আদায় না করতে পারার কারণে তারা মানসিকভাবে কষ্টে জীবনযাপন করে।
  • পুরুষের খেদমত করাই নারীর প্রধান দায়িত্ব এ মানসিকতার ফলে তাদের প্রতি অন্যায় করা হলেও নারীসমাজের প্রতিবাদহীন ভূমিকা।
  • নারীদের দুর্বল মানসিকতা।
  • পুরুষদের কাম লালসা চরিতার্থ এবং চরিত্রহীনতা।
  • যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নারীরা যোগ্যতার মূল্য পায় না। কারণ নারীদের শুধুই নারী বলে মনে করা হয়।
  • আমাদের সমাজের পুরুষকে সম্পদ বলে বিবেচনা করা হয় এবং কন্যা সন্ত নিকে অভিশাপ বলে মনে করা হয়। সঙ্গত কারণেই তারা মানসিকভাবে সমাজে অবহেলিত।
  • সহজ, সরল, সৎ ও কর্তব্যপরায়ণ তথ্য নিষ্ঠাবান ব্যক্তিরা সামাজিক অস্থিরতা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে এদের মনের চাপা অভিব্যক্তি ক্ষোভ, দুঃখ কর্কশ ভাষায় প্রকাশ করে গৃহ পরিবেশে। ফলে অনিচ্ছাকৃত হলেও নারীরা মানসিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে।

জৈবিক কারণ

যৌন চাহিদা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আর এই চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের দেশে শিশু নারীসহ সকল বয়সের নারীরা ধর্ষণ, এমনকি গণধর্ষণের শিকার হচ্ছে প্রতিদিন। আবার যৌন চাহিদা মিটাতে এবং অধিক পুত্র সন্তান লাভের প্রত্যাশায় স্ত্রীর মতের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌনাচরণ করে থাকে।

বেকারত্ব দূর করার উপায় | বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের উপায়

এই ৫টি কারণ ছাড়াও নারী নির্যাতনের আরও অন্যন্য যেসব কারণ রয়েছে সেগুলো নিম্নরূপ-

দৈহিক কারণ

শারীরিকভাবে নারীরা জীবনের বিভিন্ন চাপ মোকাবিলায় অক্ষম, আর সেই দুর্বলাতার সুযোগে অনেকে নারীদের উপর অন্যায় অত্যাচার করে থাকে। আবার ইলমে তাশতাহে (দেহবিজ্ঞান) অনুসন্ধানকার্যে প্রমাণিত হয়েছে নারীর দৈহিক শক্তি পুরুষ অপেক্ষা কম। এ সুযোগে অনেকে তাদের প্রতি জোরপূর্বক অন্যায় অত্যাচার করে থাকে।

আইন-শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কারণ:

  • স্বাধীনতার উত্তরকালে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে আইন- শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এ সুযোগে অন্যান্য অনেক সমস্যার ন্যায় নারী নির্যাতনের হারও বৃদ্ধি পায়।
  • সমাজে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ ব্যভিচার ও নারী নির্যাতন বন্ধ করতে না পারা প্রশাসনিক দুর্বলতাই প্রমাণ করে।
  • আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার। যেমন- মাঝে মাঝে শোনা যায় এবং পত্র-পত্রিকায় দেখা যায় পুলিশ কর্তৃক ইয়াসমিনের মতো মেয়েরা ধর্ষিত হওয়ার খবর।
  • আইনের সুস্পষ্ট প্রয়োগ না হওয়ায় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় নারী নির্যাতন দিন দিন বেড়েই চলেছে।

কুসংস্কারগত কারণ

নারী নির্যাতনের অন্যতম কারণ হচ্ছে ধর্মীয় গোঁড়ামি তথা ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার। এর মধ্যে পড়ে-

  • বিবাহবিচ্ছেদ।
  • ১৮ বছরের কম বয়সে কন্যা শিশুদের বিবাহ দেওয়া।
  • ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীসমাজের উপর কিছু স্বার্থান্বেষী ফতোয়াবাজদের ফতোয়া জারি।

Related Posts

2 comments

নারী নির্যাতনের প্রভাব আলোচনা কর February 1, 2024 - 9:30 am

[…] নারী নির্যাতন কি? নারী নির্যাতনের ৫টি … […]

নারী নির্যাতন প্রতিরোধের উপায় গুলো কি কি? February 1, 2024 - 9:50 am

[…] নারী নির্যাতন কি? নারী নির্যাতনের ৫টি … […]

Comments are closed.