Home » পরীক্ষণ পদ্ধতি কি? পরীক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য লিখ

পরীক্ষণ পদ্ধতি কি? পরীক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য লিখ

by Rezaul Karim
পরীক্ষণ পদ্ধতি কি, পরীক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য,

পরীক্ষণ পদ্ধতি

বিজ্ঞান হিসেবে মনোবিজ্ঞান বিকাশে পরীক্ষণ পদ্ধতির গুরুত্ব অপরিসীম। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সকল বৈশিষ্ট্যই পরীক্ষণ পদ্ধতিতে বিদ্যমান; যেমন প্রায়োগিক সংজ্ঞা, ব্যক্তিনিরপেক্ষতা, নিয়ন্ত্রণ, পুনরাবৃত্তি, যথার্থ প্রমাণ প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যসমূহ পরীক্ষণ পদ্ধতির পরীক্ষণে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে বিজ্ঞানী সুসামঞ্জস্যভাবে এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরীক্ষণ-পাত্রের উপর উদ্দীপক-উপস্থাপন করে প্রতিক্রিয়ার পরিমাণ নির্ণয় করে থাকেন। এ পদ্ধতির পরীক্ষণে বিজ্ঞানীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকে। সুতরাং পরীক্ষণ পদ্ধতি বলতে আমরা এমন পদ্ধতিকে বুঝি যার সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে অনির্ভরশীল চল (Independent variable) প্রয়োগ করে নির্ভরশীল চল (Dependent variable) বা প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করা যায়। পরীক্ষণ পদ্ধতির পরীক্ষণ সম্পর্কে কয়েকজন মনোবিজ্ঞানীর মতামত নিম্নে প্রদত্ত হলো:

১. Barry. F. Anderson বলেন- ‘An experiment is a situation in which one observes the relationship between two variables by deliberately producing change in one and looking to see whether this alteration produces a change in the other. 14″ (অর্থাৎ, পরীক্ষণ হলো এমন একটি পরিবেশ যেখানে কেহ দুটি চলের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য একটির মধ্যে পরিবর্তন এনে দেখতে পারেন ‘এর ফলে অন্যটির মধ্যে কোনো পরিবর্তন সংঘটিত হয় কিনা।)

অন্তদর্শন পদ্ধতি কি? মনোবিদ্যায় অন্তদর্শন পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা

২. Wayne Weiten বলেন- ‘The experiment is a research method in which the investigator manipulate a variable under carefully controlled conditions and observes whether there are changes in a second variable as a result. 15″ (অর্থাৎ পরীক্ষণ হলো এমন একটি গবেষণাপদ্ধতি যেখানে অনুসন্ধানকারী সুনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে একটি চল প্রয়োগ করেন এবং দ্বিতীয় চলে ফলাফল হিসেবে কোনো পরিবর্তন হয় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করেন।)

৩. William Buskist এবং David W. Gerbing বলেন- ‘An experiment is a research method in which te investigator manipulates certain variables and measures their effects on other variables.” (অর্থাৎ, পরীক্ষণ হলো এমন একটি গবেষণাপদ্ধতি যেখানে গবেষক কতকগুলো চল প্রয়োগ করেন এবং অন্যান্য চলের উপর এর কার্যকারিতা পরিমাপ করেন।)

৪. Rober A Baron, (2004) বলেন- Experimentation (The experimental Method): A research method in which reseaschers systematically alter one or more variables in order to determine whether such changes influence some aspect of behaviour. 17 (অর্থাৎ, পরীক্ষণ (পরীক্ষণপদ্ধতি) একটি গবেষণামূলক পদ্ধতি যেখানে গবেষকগণ নিয়ন্ত্রিতভাবে এক বা একাধিক চল পরিবর্তন এবং নির্ধারণ করে দেখেন যে এরূপ পরিবর্তন আচরণের কোন দিকের উপর প্রভাব বিস্তার করে কিনা।)

অতএব পরীক্ষণ পদ্ধতিতে পরীক্ষক সুনির্দিষ্টভাবে সুনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বিশেষ প্রকল্পের ভিত্তিতে অনির্ভরশীল চল প্রয়োগ করে নির্ভরশীল চল পরিমাপ করেন এবং সেজন্য আনুষঙ্গিক অন্যান্য চলকে অকার্যকর রাখার সুনিশ্চিত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

পরীক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য

পরীক্ষণ পদ্ধতিতে নিম্নবর্ণিত বৈশিষ্ট্য সমূহ পরিলক্ষিত হয়।

১) পুনরাবৃত্তি (Repetition)

পুনরাবৃত্তি পরীক্ষণ পদ্ধতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পরীক্ষণ পদ্ধতিতে কোন একটি বিষয়ের ওপর ওপর বার বার পরীক্ষণ পরিচালনা করা সম্ভব। অর্থাৎ কোন একটি বিষয়ের ওপর একাধিকার গবেষণা করা চলে। যেমন, গোলযোগপূর্ণ পরিবেশ শিক্ষণের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। এ পরীক্ষণটির পুনরাবৃত্তি সম্ভব। গবেষক যে কোন সময় গবেষণাগারে গোলযোগপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে শিক্ষণের ওপর এর প্রভাব লক্ষ্য করতে পারেন।

২) ইচ্ছানুযায়ী চলের পরিবর্তন (Manipulation of variable)

পরীক্ষণ পদ্ধতির দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ইচ্ছানুযায়ী চল পরিবর্তন সাধন। এ পদ্ধতিতে গবেষক ইচ্ছা করলে যে কোন সময়ে কোন একটি বিশেষ অনির্ভরশীল চল সৃষ্টি করে দেখতে পারেন, তা নির্ভরশীল চলের ওপর কিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। যেমন, পরীক্ষক যদি জানতে আগ্রহী হন যে, শিক্ষণ পরিস্থিতিতে প্রাণীকে পুরস্কৃত করলে তার শিক্ষণ দ্রুত সংঘটিত হয় কিনা। এখানে পুরস্কার প্রদান করা হল অনির্ভরশীল চল এবং শিক্ষণের পরিমাণ হল নির্ভরশীল চল। পরীক্ষক এ ধরনের অনির্ভরশীল চল সৃষ্টি করে এর কার্যকারিতা যে কোন সময় পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। অবশ্য পরিবেশধর্মী পরীক্ষণে এরূপ সুবিধা থাকে না।

৩) নির্ভরযোগ্যতা (Reliability)

এ পদ্ধতির তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নির্ভরযোগ্যতা। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির নিয়ম-নীতি অনুসরণে এ পদ্ধতির পরীক্ষণ পরিচালিত হয় বলে এর ফলাফল অধিক নির্ভরযোগ্য হয়ে থাকে। কোন একটি ঘটনার ওপর বার বার পরীক্ষণ পরিচালনা করে যদি একই ফলাফল পাওয়া যায় তা হলে বলা যাবে যে এ পরীক্ষণের নির্ভরযোগ্যতা আছে। পরীক্ষণ পদ্ধতিতে কোন একটি বিষয়ের ওপর বার বার পরীক্ষণ পরিচালনা করে একই ফলাফল পাওয়া সম্ভব।

বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য সমূহ মনোবিজ্ঞানের আলোকে বর্ণনা কর

৪) চলের সংজ্ঞা প্রদান (Definition of variables)

চলের সংজ্ঞা প্রদান পরীক্ষণ পদ্ধতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পরীক্ষণ পরিচালনা করার পূর্বে পরীক্ষক চলসমূহের সংজ্ঞা প্রদান করে থাকেন। কি ধরনের অনির্ভরশীল চল প্রয়োগ করবেন এবং কিভাবে নির্ভরশীল চল পরিমাপ করবেন এ সম্বন্ধে তাকে স্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীন বর্ণনা প্রদান করতে হবে। যেমন, মুক্ত বনাম নিয়ন্ত্রিত শব্দানুষঙ্গের প্রতিক্রিয়া কাল নির্ণয় পরীক্ষণের অনির্ভরশীল চল হল মুক্ত ও নিয়ন্ত্রিত শব্দসমূহের উপস্থাপন এবং নির্ভরশীল চল হচ্ছে পরীক্ষণ-পাত্রের প্রতিক্রিয়া কাল।

৫) চলের নিয়ন্ত্রণ (Control of variables)

একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে কোন একটি আচরণ নানা রকম ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। এর ফলে বলা মুশকিল হয়ে উঠে যে, এ আচরণটি একটি ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে না একাধিক ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজন ঘটনার নিয়ন্ত্রণ বা চলের নিয়ন্ত্রণ। চল নিয়ন্ত্রণের অর্থ পরীক্ষণের নির্ভরশীল চল যেন অনির্ভরশীল চল দ্বারা সৃষ্টি হতে পারে সে জন্য নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রয়োগ করা। অনেক সময় নির্ভরশীল চল অনির্ভরশীল চল দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে অন্যান্য বহু ঘটনার সমন্বয়ে সংঘটিত হতে পারে। এরূপ অবাঞ্ছিত ঘটনার প্রভাব থেকে বিজ্ঞানী নির্ভরশীল চলকে মুক্ত রাখেন।

৬) পরিসংখ্যানগত পরিমাপ (Statistical Test)

পরীক্ষণ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত উপাত্তের ওপর পরিসংখ্যানের বিভিন্ন পরিমাপ প্রয়োগ করা যায়। যেমন, গড়, মধ্যমা, প্রচুরক, গড় বিচ্যুতি, আদর্শ বিচ্যুতি প্রভৃতি অংকের সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণ করা যায়।

৭) বস্তুনিষ্ঠতা (Objectivity)

পরীক্ষণ পদ্ধতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বস্তুনিষ্ঠতা। এ পদ্ধতিতে গবেষক বস্তুনিষ্ঠভাবে গবেষণা কার্য পরিচালনা করেন। এখানে গবেষকের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দের স্থান নেই।

Related Posts