Home » পশুপালন সমাজ কাকে বলে ও বৈশিষ্ট্য

পশুপালন সমাজ কাকে বলে ও বৈশিষ্ট্য

by Rezaul Karim
পশুপালন সমাজ কাকে বলে, পশুপালন সমাজের বৈশিষ্ট্য,

পশুপালন সমাজ

আদিম সমাজে যখন মানুষ খাদ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হলো তখন তাদের জীবন অনেকটা নিরাপদ মনে করতো। গোড়ার দিকে স্থুলাকৃতি পাথরের হাতিয়ার দিয়ে তারা পশুপাখি, জীবজন্তু শিকার করে জীবিকানির্বাহ করতো। এ সময় তাদের জীবন ছিল যাযাবর প্রকৃতির। যখন বনের জীবজন্তুকে তারা পোষ মানাতে শিখলো তখন থেকেই পশুচারণ সমাজের ভিত রচিত হলো। ধারণা করা হয় যে, প্রায় বিশ হাজার বছর পূর্বে শিকারি এবং খাদ্য সংগ্রহকারী গোষ্ঠী তাদের গৃহপালিত পশুকে পোষ মানাতে শিখে এবং কৃষিকাজে ব্যবহার করে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করে। কোন কোন পণ্ডিত মনে করেন যে, খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার বা তারও পূর্বে মিশর, মেসোপটেমিয়া এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে বন্যপশুকে পোষ মানিয়ে লালনপালন শুরু করে। আর পশুপালনকে কেন্দ্র করে যে অর্থনীতির বিকাশ ঘটে তা হলো খাদ্য উৎপাদন অর্থনীতির প্রাথমিক স্তর।

শিকার ও খাদ্য সংগ্রহ ভিত্তিক সমাজের বৈশিষ্ট্য

পশুপালন পর্যায়ে মানুষ একস্থান থেকে অন্যস্থানে বিচরণ করতো। কারণ তৃণভূমিতে পশুপালন সহজ মনে করে তারা তৃণভূমির সন্ধানে ঘুরে বেড়াত। যাযাবর পশুপালকেরা তৃণভূমিতে অবস্থান করে ক্রমান্বয়ে কৃষি পদ্ধতি আবিষ্কার করে। এ সময়ে পাথরের নিড়ানিই তাদের হাতিয়ার হিসেবে প্রাধান্য লাভ করে। যতকাল পর্যন্ত এ পাথরের নিড়ানি কৃষিকাজে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ততদিন পর্যন্ত এ সময়কালকে নৃবিজ্ঞানিগণ ‘হো-কালচার’ (Hoe-Culture) বলে আখ্যায়িত করেন। সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে তারা গৃহপালিত পশুকে কৃষিকাজে নিয়োগ করতে শিখে। ফলে খাদ্য সংগ্রহ অর্থনীতির পর্যায় থেকে খাদ্য উৎপাদক অর্থনীতির পর্যায়ে উন্নীত হয়।

পশুপালন সমাজে বনের গরু, ঘোড়া, ছাগল, কুকুর, মেষ ইত্যাদিকে পোষ মানিয়ে পালন করতে শিখে। এসব পশুর মাংস ও দুধ তারা খাদ্য হিসেবে এবং হাড়কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো। তাছাড়া গৃহপালিত পশু থেকে প্রচুর লোম ও গায়ের চামড়া দিয়ে তাদের নানাবিধ প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হলো।

Lowie তাঁর ‘An Introduction to Cultural Anthropology’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, অর্থনৈতিক কারণেই শুধু পশুকে গৃহপালিত করা হয় নি, বরং এদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ এবং ধর্মীয় উৎসবে পশু বলি দেওয়ার উদ্দেশ্যেও পশুকে গৃহপালিত করা হয়। তাছাড়া যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ঘোড়া এবং গাধা ব্যবহার করা হতো এবং মালপত্র বহনেও এদের যথেষ্ট ভূমিকা ছিল।

সমাজ কত প্রকার ও কি কি?

পশুপালন সমাজের বৈশিষ্ট্য

১. পশুর খাদ্যের অন্বেষণে এ সমাজের মানুষকে প্রায়শই যাযাবরের ন্যায় বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে হতো।

২. এ সমাজে স্থায়ী রাষ্ট্র বা অর্থব্যবস্থা ছিল না।

৩. পশুপালন সমাজের মানবগোষ্ঠী ছিল দুর্ধর্ষ ও শক্তিশালী।

৪. কৃষিনির্ভর আদিম সমাজ পশুপালন সমাজের মানুষ কর্তৃক প্রায়ই আক্রান্ত হয়েছে।

৫. কখনো কখনো কৃষিজীবীরা পরাজিত হয়ে পশুপালন সমাজের কর্তৃত্ব ও আধিপত্য মেনে নিত।

৬. এ যুগে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম ছিল।

৭. লিঙ্গভিত্তিক শ্রমবিভাজন পশুপালন সমাজে বিদ্যমান ছিল।

বস্তুত পশুপালন সমাজই পশুকে ক্রমান্বয়ে কৃষিতে ব্যবহার করতে শুরু করে এবং এ ধারাবাহিকতারই ফলস্বরূপ পরবর্তী কৃষিভিত্তিক সমাজের আবির্ভাব ঘটে।

Related Posts

1 comment

কৃষিভিত্তিক সমাজ ও বৈশিষ্ট্য February 5, 2024 - 9:36 am

[…] পশুপালন সমাজ কাকে বলে ও বৈশিষ্ট্য […]

Comments are closed.