Home » প্রান্তিক ব্যয় কি? গড় ব্যয় ও প্রান্তিক ব্যয়ের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর

প্রান্তিক ব্যয় কি? গড় ব্যয় ও প্রান্তিক ব্যয়ের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর

by Rezaul Karim
প্রান্তিক ব্যয় কি, গড় ব্যয় ও প্রান্তিক ব্যয়ের মধ্যে সম্পর্ক,

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় শিক্ষার্থীরা। আশাকরি, সকলেই ভালো আছেন। আজকে অর্থনীতির খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে ব্লগে হাজির হলাম। এই বিষয়টি অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকেন এবং এ সম্পর্কিত গোছালো কোন লেখা খুঁজে পেলাম না। তাই নিজেই, সবার উপকারার্থে এই বিষয়টি সম্পর্কে লিখতে বসলাম। বিষয়টি হচ্ছে, প্রান্তিক ব্যয় কি এবং গড় ব্যয় ও প্রান্তিক ব্যয়ের মধ্যে সম্পর্ক। চলুন বিষয়টির আলোচনা শুরু করি।

প্রান্তিক ব্যয় কি?

প্রথমে জেনে নিই প্রান্তিক ব্যয় সম্পর্কে। অতিরিক্ত এক একক উৎপাদন বৃদ্ধি করলে মোট উৎপাদন ব্যয়ের সাথে যে অতিরিক্ত ব্যয় যুক্ত হয়, তাকে প্রান্তিক ব্যয় বলে। অথবা এক একক উৎপাদন হ্রাস করলে মোট উৎপাদন ব্যয় হতে যে ব্যয় বাদ দেওয়া হয়, তাকে প্রান্তিক ব্যয় বলা হয়। সুতরাং পূর্বের মোট ব্যয় এবং পরবর্তী মোট ব্যয়ের ব্যবধানই প্রান্তিক ব্যয়। মনে করি, এক একক উৎপাদন করতে মোট ব্যয় ৫ টাকা হয়। ২ একক উৎপাদনে ৮ টাকা ব্যয় হয়। তাহলে প্রান্তিক উৎপাদন = (৮-৫) = ৩ টাকা। প্রান্তিক ব্যয়কে নিম্নলিখিত সূত্রের সাহায্যে প্রকাশ করা যায়-

প্রান্তিক ব্যয় = মোট ব্যয়ের পরিবর্তন/মোট উৎপাদনের পরিবর্তন

বা, MC = ΔTC/ΔQ

এখানে,

MC = প্রান্তিক ব্যয়,

ΔTC = মোট ব্যয়ের পরিবর্তন,

ΔQ = মোট উৎপাদনের পরিবর্তন।

আরও পড়ুন

গড় ব্যয় কি? স্বল্পকালীন গড় ব্যয় রেখা u আকৃতির হয় কেন?

তালিকায় প্রকাশ: উৎপাদনের বিভিন্ন ব্যয় হলো মোট ব্যয় (TC), গড় ব্যয় (AC) এবং প্রান্তিক ব্যয় (MC)। উৎপাদনের এ ব্যয়সমূহ নিম্নবর্ণিত তালিকায় প্রকাশ করা হলো-

উৎপাদনের পরিমাণ (Q) মোট ব্যয় (T) গড় ব্যয় (AC) প্রান্তিক ব্যয় (MC)
১ একক ১০০ টাকা ১০০ টাকা ১০০ টাকা
২ একক ১৮০ টাকা ৯০ টাকা ৮০ টাকা
৩ একক ২৪০ টাকা ৮০ টাকা ৬০ টাকা
৪ একক ২৮০ টাকা ৭০ টাকা ৪০ টাকা
৫ একক ৩৫০ টাকা ৭০ টাকা ৭০ টাকা
৬ একক ৪৮০ টাকা ৮০ টাকা ১৩০ টাকা
৭ একক ৬৩০ টাকা ৯০ টাকা ১৫০ টাকা

তালিকায় দেখা যায়, উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে মোট ব্যয় বৃদ্ধি পায়। কিন্তু উৎপাদনের প্রথমদিকে গড় ব্যয় ও প্রান্তিক ব্যয় ক্রমশ হ্রাস পায়। উৎপাদনের পরিমাণ যখন ৪ একক প্রান্তিক খরচ তখন সর্বনিম্ন হয়। উৎপাদনের পরিমাণ ৫ একক হলে গড় খরচ ও প্রান্তিক খরচ পরস্পর সমান হয়। এরপর গড় ও প্রান্তিক খরচ উভয়ে বাড়তে থাকে।

গড় ব্যয় ও প্রান্তিক ব্যয়ের মধ্যে সম্পর্ক

কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদন করতে যে পরিমাণ মোট অর্থ ব্যয় হয়, তাকে উৎপাদিত দ্রব্যের মোট পরিমাণ দিয়ে ভাগ করলে একক প্রতি ব্যয় বা গড় ব্যয় পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে, উৎপাদন অতিরিক্ত এক একক বৃদ্ধি করলে মোট উৎপাদন ব্যয়ের সাথে যে অতিরিক্ত ব্যয় যুক্ত হয়, তাকে প্রান্তিক ব্যয় বলে। অথবা এক একক উৎপাদন হ্রাস করলে মোট উৎপাদন ব্যয় হতে যে ব্যয় বাদ দেওয়া হয়, তাকেই প্রান্তিক ব্যয় বলা হয়। গড় ব্যয় ও প্রান্তিক ব্যয়ের মধ্যে সম্পর্ক তালিকায় দেখানো হলো-

উৎপাদনের পরিমাণ (Q) মোট ব্যয় (T) গড় ব্যয় (AC) প্রান্তিক ব্যয় (MC)
১ একক ১০০ টাকা ১০০ টাকা ১০০ টাকা
২ একক ১৮০ টাকা ৯০ টাকা ৮০ টাকা
৩ একক ২৪০ টাকা ৮০ টাকা ৬০ টাকা
৪ একক ২৮০ টাকা ৭০ টাকা ৪০ টাকা
৫ একক ৩৫০ টাকা ৭০ টাকা ৭০ টাকা
৬ একক ৪৮০ টাকা ৮০ টাকা ১৩০ টাকা
৭ একক ৬৩০ টাকা ৯০ টাকা ১৫০ টাকা

তালিকায় দেখা যায়, গড় ব্যয় (AC) ও প্রান্তিক ব্যয় (MC) এর মধ্যে তিনটি মৌলিক সম্পর্কে রয়েছে।

প্রথমত, যখন গড় ব্যয় (AC) হ্রাস পায়, প্রান্তিক ব্যয়ও (MC) হ্রাস পায়। কিন্তু প্রান্তিক ব্যয়, গড় ব্যয় হতে বেশি হ্রাস পায়। যেমন- তৃতীয় একক উৎপাদনে গড় ব্যয় ১০ টাকা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু প্রান্তিক ব্যয় ২০ টাকা হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া তৃতীয় একক উৎপাদনে গড় ব্যয় ৮০ টাকা এবং প্রান্তিক ব্যয় ৬০ টাকা।

আরও পড়ুন

মাত্রাগত উৎপাদন কি? মাত্রাগত উৎপাদন কত প্রকার ও কি কি?

দ্বিতীয়ত, যখন গড় ব্যয় (AC) এবং প্রান্তিক ব্যয় (MC) সমান হয়, তখন গড় ব্যয় অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ পূর্বের পরিমাণের সমান থাকে।

তৃতীয়ত, যখন গড় ব্যয় (AC) বৃদ্ধি পায়, প্রান্তিক ব্যয়ও (MC) বৃদ্ধি পায়। কিন্তু প্রান্তিক ব্যয়, গড় ব্যয় হতে অধিক হারে বৃদ্ধি পায়। যেমন ষষ্ঠ একক উৎপাদনে গড় ব্যয় ১০ টাকা এবং প্রান্তিক ব্যয় ৬০ টাকা বৃদ্ধি পায়।

রেখাচিত্রে প্রকাশ: গড় ব্যয় ও প্রান্তিক ব্যয়ের মধ্যে সম্পর্ক রেখাচিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হলো-

গড় ব্যয় ও প্রান্তিক ব্যয়ের মধ্যে সম্পর্ক,

রেখাচিত্রে যখন AC রেখা নিচের দিকে নামে তখন MC রেখাও নিচে নামে। এ পর্যায়ে MC রেখা AC রেখার নিচে অর্থাৎ AC হতে MC কম হয়। অর্থাৎ প্রান্তিক ব্যয় (MC) গড় ব্যয় (AC) হতে কম হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়ে, যখন MC এবং AC সমান তখন AC সর্বনিম্ন অবস্থায় স্থির থাকে। অর্থাৎ গড় ব্যয় (AC) এবং প্রান্তিক ব্যয় (MC) = ME হয় যখন AC সর্বনিম্ন। তৃতীয় পর্যায়ে, AC রেখা উপরের দিকে ওঠে। ফলে MC রেখাও উপরের দিকে ওঠে। কিন্তু MC রেখা AC রেখা হতে দ্রুততর গতিতে উপরের দিকে ওঠে। এ পর্যায়ে MC রেখা AC রেখার উপরে অর্থাৎ AC হতে MC অধিক হয়।

আশাকরি, উপরের আলোচনা থেকে আপনারা প্রান্তিক ব্যয় কি এবং গড় ব্যয় ও প্রান্তিক ব্যয়ের মধ্যে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

Related Posts