Home » বাংলাদেশে শিক্ষার স্তর কয়টি ও কী কী?

বাংলাদেশে শিক্ষার স্তর কয়টি ও কী কী?

by Rezaul Karim
শিক্ষার স্তর কয়টি ও কী কী

বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষার স্তর কয়টি ও কি কি এ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তাই গুগলে খুঁজতে চলে আসেন। আপনিও নিশ্চই এই বিষয়টি জানতে এই ব্লগে এসেছেন। তাহলে সঠিক ব্লগটিই পড়ছেন। আজকের আর্টিকেলে আপনি বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন, বর্তমানে শিক্ষার স্তর কয়টি ও কি কি। শুধু তাই নয়, সাধারণ শিক্ষার স্তর গুলো জানার পাশাপাশি ধর্মীয় বা মাদ্রাসা শিক্ষার স্তর গুলো সম্পর্কেও জানতে পারবেন এই ব্লগটি পড়ে।

বাংলাদেশের শিক্ষার স্তর

শিক্ষা ব্যবস্থা একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা রূপায়ণের ও ভবিষ্যৎ সমাজ বিনির্মাণের হাতিয়ার। কাজেই দেশের কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্তসহ সকল জনগণের জীবনে নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনের উপলব্ধি জাগানো, নানাবিধ সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা অর্জন এবং তাদের বাঞ্ছিত নতুন সমাজ সৃষ্টির প্রেরণা সম্ভারই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান দায়িত্ব ও লক্ষ্য।

শিক্ষা কি | শিক্ষা কাকে বলে | শিক্ষার সংজ্ঞা

বাংলাদেশের শিক্ষার স্তর দুটি প্রবাহে চালিত-

১. সাধারণ শিক্ষা ও

২. ধর্মীয় ও মাদ্রাসা শিক্ষা।

শিক্ষা ব্যবস্থা এ দুটি ধারায় তিনটি স্তরে বিন্যস্ত এবং সরকারি ও বেসরকারিভাবে পরিচালিত। স্তরগুলো হলো:

ক. প্রাথমিক শিক্ষা;

খ. মাধ্যমিক শিক্ষা;

গ. উচ্চ শিক্ষা;

১. সাধারণ শিক্ষা

ক. প্রাথমিক শিক্ষা

শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক ভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষা। এটি সাধারণত ছয় বছর বয়স হতে শুরু হয়। প্রাথমিক শিক্ষা ৫ বছর মেয়াদি প্রথম শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। থানা ভিত্তিক পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে এবং উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের মেধাভিত্তিক বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক।

খ. মাধ্যমিক শিক্ষা

মাধ্যমিক শিক্ষার তিনটি পর্যায় রয়েছে। যথা: নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা। নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা, ষষ্ঠ শ্রেণি হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা একাদশ শ্রেণি হতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত।

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার পাঠক্রম সারাদেশে একই রকম। এ পর্যায়ে অষ্টম শ্রেণি পাবলিক পরীক্ষার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। যাকে বলা হয় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (JSC) এবং পরীক্ষা সারা দেশে ছাত্রছাত্রীদের সার্টিফিকেটের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। নবম শ্রেণি হতে ত্রিমুখী পাঠক্রম প্রচলিত। যেমন- বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা। দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি সমাপ্তির পর যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এস.এস. সি) নামে অভিহিত করা হয়।

উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষা দু’বছর মেয়াদি। যথা: একাদশ শ্রেণি ও দ্বাদশ শ্রেণি। এ শ্রেণির পাঠ্যসূচি সমাপ্তির যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তাকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচ.এস.সি) পরীক্ষা বলা হয়। উভয় পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

গ. উচ্চ শিক্ষা

বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা ও মেধা অনুযায়ী যে কোন কোর্সে অর্থাৎ পাস/ অনার্স/ অন্যান্য বৃত্তিমূলক উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ রয়েছে। পাস কোর্স ডিগ্রি তিন বছর মেয়াদি এবং অনার্স ডিগ্রি চার বছর মেয়াদি। পাস কোর্স ডিগ্রিধারীদের জন্য মাস্টার্স ডিগ্রি দুই বছর মেয়াদি এবং অনার্স ডিগ্রি পরিষদের জন্য এক বছর শিক্ষা। ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কৃষি ডিপ্লোমার মেয়াদ চার বছর। ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি ডিপ্লোমা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করতে হবে।

মেডিকেল ব্যাচেলর ডিগ্রির মেয়াদ পাঁচ বছর। মেডিকেল ব্যাচেলর ডিগ্রি দেশের তিনটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় যথা: ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রদান করা হয়। অন্যান্য বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এ ডিগ্রি প্রদান করে থাকে। এছাড়া এমফিল ও পি. এইচ. ডি ডিগ্রির মেয়াদ যথাক্রমে দুই বা তিন বছর। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষার স্বীকৃতি বাবদ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ বিষয়ে এই ডিগ্রি প্রদান করা হয়ে থাকে।

২. মাদরাসা শিক্ষা

সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষা চালু রয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষা পদ্ধতি দু’ধরনের যথা:

ক. আলিয়া / সাধারণ মাদারাসা (পাবলিক শিক্ষা পদ্ধতির আওতাভুক্ত) ও

খ. খারেজী / প্রাইভেট মাদ্রাসা শিক্ষা (কওমি ও নিজামী পদ্ধতিভুক্ত)

ক. আলিয়া মাদ্রাসা এর স্তরসমূহ নিম্নরূপ:

ইবতেদায়ী পাঁচ বছর মেয়াদি শিক্ষা (প্রাথমিক শিক্ষার সমতুল্য) জেডিসি মাধ্যমে অনুষ্ঠিত) ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা (পাবলিক পরীক্ষার দাখিল ইবতেদায়ী পাসের পর পাঁচ বছর মেয়াদি শিক্ষা (মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার সমতুল্য)

আলিম → দাখিল পাসের পর দুই বছর মেয়াদি (উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার সমতুল্য)

ফাজিল → আলিম পাসের পর তিন বছর মেয়াদি (স্নাতক পর্যায় সমতুল্য)

কামিল → ফাজিল পাসের পর দুই বছর মেয়াদি শিক্ষা (স্নাতকোত্তর সমতুল্য)

ইবতেদায়ী ছাড়া প্রত্যেক পর্যায়ে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার পদ্ধতি সাধারণ শিক্ষার মতো এবং তা মাদ্রাসা বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

খ. খারেজী/ প্রাইভেট মাদ্রাসা কওমি ও নিজামী শিক্ষা পদ্ধতিভুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষা নিম্নরূপ:

আল-মারহাতুল ইবতেদায়ী ছয় বছর মেয়াদি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা।

আল- মারহাতুল মোতাওয়াস সীতাহ ৬+৪ = দশ বছর মেয়াদি কওমি শিক্ষা।

আল-মারহাতুন ফজিলত → ৬ + ৪ + ৩ = তের বছর মেয়াদি কওমি শিক্ষা।

আল- আল মারহাতুন তামিল ৬ + ৪ + ৩ + ১ = চৌদ্দ বছর মেয়াদি কওমি শিক্ষা এই চার স্তরের পরীক্ষা বাংলাদেশের বেফাকুল মাদারিস কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে।

শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গুলো কি কি?

অন্যান্য শিক্ষা

ক. কারিগরি শিক্ষা: কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত। যথা: সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা এবং ডিগ্রি। অষ্টম শ্রেণি পাস করা ছাত্রদের বিভিন্ন ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটসহ ইঞ্জিনিয়ারিং কমার্শিয়াল এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিষয়সমূহে ডিপ্লোমা প্রদান করা হয়ে থাকে। টেকনিক্যাল কোর্সের মেয়াদ তিন বছর এবং কমার্শিয়াল কোর্সের মেয়াদ দুই বছর। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্ররা টেকনিক্যাল ও কমার্শিয়াল কোর্সে ভর্তি হতে পারে। এ সকল কোর্সের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ ও সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।

খ. হোমিওপ্যাথি: এইচ.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। এই কোর্স পাঁচ বছর মেয়াদি শিক্ষা।

গ. ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক: এস. এস. সি/ আলিম/ কওমি শিক্ষা পাস করার পর ঔষধ শাস্ত্রে ইউনানী পড়তে হয়। এ কোর্স চার বছর মেয়াদি।

তাছাড়াও বাংলাদেশে অনেক বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে যেখান থেকে পেশাগত সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা এবং ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এর পাশাপাশি গণশিক্ষা কার্যক্রম এবং শিক্ষম প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট চালু রয়েছে।

পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষা কাঠামো ব্রিটিশ আমল থেকে একই ধারায় পরিচালিত আছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কমিশন তৈরি হলেও অদ্যবধি কোন শিক্ষা ব্যবস্থা ও কাঠামো সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে নি। বস্তুত বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্বব্যাপী Intellectual Competition-এ টিকে থাকার প্রয়োজনে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তবেই এ দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে বিশ্ব দরবারে।

Related Posts