Home » বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য সমূহ মনোবিজ্ঞানের আলোকে বর্ণনা কর

বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য সমূহ মনোবিজ্ঞানের আলোকে বর্ণনা কর

by Rezaul Karim
বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য সমূহ,

বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য সমূহ

বিজ্ঞান কতকগুলো বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভরশীল। যথা:

১. প্রায়োগিক সংজ্ঞা (Operational definition)

প্রায়োগিক সংজ্ঞা বিজ্ঞানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রায়োগিক সংজ্ঞা বলতে বোঝায় কোনো বিষয়বস্তু বা ঘটনার মধ্যে যেসব শব্দ থাকবে তার সংজ্ঞা বিজ্ঞানী এমনভাবে দিবেন যাতে সেগুলোকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় ও পর্যবেক্ষণযোগ্য হয়। মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণা পরিচালনার সময় বিষয়বস্তুকে স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীনভাবে বর্ণনা করে থাকেন।

২. ব্যক্তিনিরপেক্ষতা (Objectivity)

ব্যক্তিনিরপেক্ষতা বিজ্ঞানের একটি বৈশিষ্ট্য। আধুনিক মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হলো আচরণ, যার ব্যক্তিনিরপেক্ষতা রয়েছে। কারণ সব গবেষকই প্রাণির আচরণকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

মনোবিজ্ঞানের শাখা সমূহ আলোচনা কর

৩. নিয়ন্ত্রণ (Control)

বিজ্ঞানসম্মত পর্যবেক্ষণ হবে সুনিয়ন্ত্রিত ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ। মনোবিজ্ঞানীগণ পরীক্ষণপদ্ধতিতে প্রাণির আচরণ সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন এবং এই পদ্ধতির পরীক্ষণের ওপর
গবেষকের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকে।

৪. পুনরাবৃত্তি (Repetition)

বিজ্ঞানের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো পুনরাবৃত্তি। একই বিষয়ের ওপর বার বার গবেষণা পরিচালনা করাকে পুনরাবৃত্তি বলে। মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় পুনরাবৃত্তি সম্ভব। কারণ মনোবিজ্ঞানীগণ তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে পরীক্ষাপদ্ধতিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন এবং এই পদ্ধতির পরীক্ষণের পুনরাবৃত্তি সম্ভব।

৫. সার্বিকীকরণ (Generalization)

অল্প সংখ্যক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে একটি সাধারণ সূত্র প্রতিষ্ঠা করাকে সার্বিকীকরণ বলে। মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় বিজ্ঞানী মানুষ ও অন্যান্য প্রাণির একটি প্রতিনিধিত্বমূলক দলের ওপর গবেষণা করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একটি সাধারণ সূত্র প্রণয়ন করেন।

৬. যথার্থ্য প্রমাণ (Verification)

যথার্থ্য প্রমাণ বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কোনো ঘটনার উপর বার বার গবেষণা পরিচালনা করে একই রকম ফলাফল পাওয়া গেলে তাকে যথার্থ প্রমাণ বলা হয়। মনোবিজ্ঞানেও কোনো একটি ঘটনার উপর বিভিন্ন গবেষক বার বার গবেষণা করে একই রকম ফলাফল পেয়ে থাকেন।

৭. পরিমাপ (Measurement)

বিজ্ঞানসম্মত গবেষণায় পরিমাপকের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কোনো বিশেষ নিয়মানুসারে বস্তু বা ঘটনাকে সংখ্যার সাহায্যে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াকে পরিমাপ বলে। সংখ্যার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন বিষয় বা ঘটনাকে চিহ্নিত করতে পারি; যেমন বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব, বয়স, উচ্চতা ইত্যাদি বিষয়কে সংখ্যার সাহায্যে পরিমাপ করা যায়। মনোবিজ্ঞানীগণ সংগৃহীত তথ্যকে সংখ্যায় প্রকাশ করে বিশ্লেষণ করতে পারেন।

৮. প্রয়োগশীলতা (Applicability)

প্রয়োগশীলতা বিজ্ঞানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু এমন হবে যাতে বাস্তবে ব্যবহার বা প্রয়োগ করা যায়। বিজ্ঞানের মৌলিক ধারণাগুলোকে বিজ্ঞানী ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে থাকেন। মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানকেও জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব। মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য, মনোবিজ্ঞানীদের প্রদত্ত মতবাদ ও সূত্রের বহুমুখী ব্যবহার আজ সমগ্র বিশ্বে লক্ষ করা যায়। শিক্ষা, সাহিত্য, বীমা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা, শিল্প, ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবন এমনকি প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানকে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব।

মনোবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর

৯. বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি (Scientific Outlook)

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি বলতে বোঝায় নতুন নতুন বিষয়কে গ্রহণ করবার প্রবণতা। পুরাতন জ্ঞানকে সর্বশেষ জ্ঞান বলে মনে করাকে বিজ্ঞান পছন্দ করে না। বিজ্ঞান সর্বদা প্রগতিশীল, উন্নয়নমুখী এবং সম্পূর্ণভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপর নির্ভরশীল। তথ্যের এবং তত্ত্বের পরিবর্তনের সাথে সাথে কোনো ঘটনাকে গ্রহণ করার দৃষ্টিভঙ্গি বিজ্ঞানীর থাকতে হবে। মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যেও এরূপ দৃষ্টিভঙ্গি পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ, প্রাণি ও মানুষের আচরণ সম্পর্কিত কোনো বিষয়ের ওপর বার বার পরীক্ষণ চালিয়ে মনোবিজ্ঞানী যে ফলাফল পান সে ফলাফলকে তিনি গ্রহণ করে থাকেন।

আধুনিক মনোবিজ্ঞান একটি বহুল পরীক্ষিত ও গবেষণাসমৃদ্ধ বিজ্ঞান। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণির আচরণ সম্পর্কে অনুধ্যান করতে গিয়ে মনোবিজ্ঞান পরীক্ষণ ও নিরীক্ষণপদ্ধতিকে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করে থাকে। এক কথায়, মনোবিজ্ঞান বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির রীতি-নীতি অনুসরণ করে। তথ্য ও তত্ত্বের পরিবর্তনের সাথে সাথে কোনো বিষয়বস্তুকে গ্রহণ করার দৃষ্টিভঙ্গি এ বিজ্ঞানীর আছে।

Related Posts