Home » বেকারত্ব দূর করার উপায় | বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের উপায়

বেকারত্ব দূর করার উপায় | বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের উপায়

by Rezaul Karim
বেকারত্ব দূর করার উপায়, বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের উপায়,

বেকারত্ব একটি জাতি, পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য অভিশাপ। তাই এর মোকাবিলা করা অত্যাবশ্যকীয়। আজকের আলোচনায় আমরা বেকারত্ব দূর করার উপায় তথা বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের উপায় গুলো সম্পর্কে জানবো। চলুন শুরু করা যাক।

বাংলাদেশে বেকারত্ব দূর করার উপায়

বাংলাদেশে বেকারত্বের বীজ গভীরভাবে সমাজকাঠামোতে গ্রথিত। এর মূল উৎপাটনে কেবল অর্থনৈতিক কারণগুলোকে মৌলিক কারণ হিসেবে চিহ্নিত করলে চলবে না, এর সাথে সামাজিক কারণগুলোকেও প্রাধান্য দিতে হবে। যদিও অনেকে মনে করেন দারিদ্র্য ও বেকারত্ব প্রত্যক্ষভাবে সামাজিক সমস্যা নয়, তবুও এর প্রভাবে বহু সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। বিশেষ করে বেকারত্ব ও দরিদ্রতার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের দেশে বেকারত্ব ও দরিদ্রতার ফলে বহু সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বিরাজমান বেকারত্বের ভয়াবহতা দূর করতে হলে কেবল রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের আশায় চেয়ে থাকলে চলবে না, সেজন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সেজন্য স্বনির্ভর উন্নয়ন কৌশল অবলম্বন, সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও রক্ষণশীলতা দূর করতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে, কৃষিব্যবস্থার সংস্কার ও প্রকৃত কৃষকদের উৎপাদনের জন্য ফসলের বীজ, সার ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রতিরোধে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে আরো বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারিগরি শিক্ষা, প্রযুক্তির ব্যবহার ও উচ্চশিক্ষার বাস্তব চাহিদানুযায়ী করার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার এবং কার্যকরী জনশক্তি তৈরি করে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন এবং আঞ্চলিক সম্পদের ভিত্তিতে শিল্পকারখানা গড়ে তুলে প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা খনির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন।

বেকারত্ব কি? বাংলাদেশে বেকারত্বের কারণ গুলো কি কি?

বাংলাদেশে বর্তমান বিরাজমান বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবে নিম্নে উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে। যথা:

১. স্বনির্ভর উন্নয়ন কৌশল অবলম্বন যে সমাজে জীবন নির্বাহে উৎপাদনমূলক

কাজের বদলে অনুৎপাদনমূলক কাজের গুরুত্ব বেশি, সে সমাজে শ্রমের মর্যাদা লোপ পায়। আমাদের দেশেও শ্রমের মর্যাদা দানে জনগণের উদাসীনতা ও অনীহা লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের মাঝে কায়িক শ্রমদানের প্রতি যে অনীহাভাব শহর-গ্রামে দেখা যাচ্ছে তা তাদেরকে উপার্জনমূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হতে নিরুৎসাহিত করে। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ না নিয়ে বেকারত্বের শিকার হয়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে কৃষিতে পশু খামার, পোল্ট্রি ফার্ম বা হাঁস-মোরগ-মুরগি খামার, মৎস্য খামার প্রভৃতি স্থাপন করে আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প গ্রহণ বেকার সমস্যা সমাধানের সহায়ক হবে। সেজন্য শিক্ষিত বেকারদের আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ প্রদান করা প্রয়োজন।

২. বেকারত্বের ধরন ও প্রকৃতি নির্ণয়ে সামাজিক জরিপ

প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে বেকারত্বের পরিসংখ্যানভিত্তিক যে সংখ্যা উল্লেখ করা হয় তা সর্বক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উপযোগী নয়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে কৃষিতে নির্ভরশীল অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় বেকারত্বের যে চিত্র আমরা পাই এর সাথে অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবে গরমিল লক্ষ্য করা যায়। আবার শহরাঞ্চলে শিক্ষিত ও অর্ধ শিক্ষিত বেকারত্বের প্রকৃতি নির্ণয়ে কেবল সংখ্যাতাত্ত্বিক কৌশল অবলম্বন করা হয়। এতে বেকারত্বের প্রতিকারে কার্যকারণ বিষয়গুলো অস্পষ্ট থেকে যাচ্ছে। শিল্পকারখানা, সরকরি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে কর্মক্ষম বেকারের প্রকৃতি, ধরন ও প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয়ে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের প্রেক্ষিতে বেকার সমস্যা প্রতিকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সামাজিক জরিপ একান্ত প্রয়োজন।

৩. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আমাদের দেশে যে হারে কর্মসংস্থানের চাহিদা বাড়ছে সে হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো কোন মতেই সম্ভব নয়। এ অবস্থায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রতিহত করা ছাড়া বেকার সমস্যার মোকাবিলা করা যাবে না। সেজন্য জনগণের সচেতনতা সৃষ্টি করে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৪. অর্থনৈতিক কাঠামো উন্নয়ন

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দেশের চাহিদা ও রপ্তানি বাণিজ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন এবং ক্ষতিগ্রস্ত চামড়া, বস্ত্র, পাট, চিনিশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে দেশের বেকার শ্রমশক্তির জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূরীকরণের উপায় গুলো কি কি?

৫. বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি

মধ্যপ্রাচ্যসহ বহু দেশে দক্ষ ও অদক্ষ জনশক্তির উল্লেখযোগ্য চাহিদা রয়েছে। জনশক্তি রপ্তানির আনুষ্ঠানিক জটিলতা দূর করে জনশক্তি রপ্তানিকে জোরদার করতে হবে।

৬. বিশেষ ধরনের মৌসুমী কর্মসূচি

অঞ্চলভেদে আমাদের দেশের কৃষকদের প্রায় তিন থেকে ছয় মাস জমিতে চাষাবাদের কোন কাজ থাকে না। এদের জন্য সে সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ এর মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের পূর্তকাজ বাস্তবায়নে নিয়োজিত রাখার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে একদিকে যেমন অবকাঠামোসমূহের মেরামত ও উন্নয়ন হবে অন্যদিকে মৌসুমী বেকারত্বের দুর্বিষহ যন্ত্রণা থেকেও মুক্তি পাবে।

৭. কুটিরশিল্পের পুনরুদ্ধার

বিদেশি বৃহদায়তন শিল্পের প্রতিযোগিতা, রুচির পরিবর্তন, কাঁচামাল সংগ্রহ করার এবং শিল্পজাত সামগ্রী বিক্রয় করার উপযুক্ত সংগঠন না থাকায় গ্রামীণ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র শিল্পগুলো বিপর্যয়ের সম্মুখীন। আগে এসব কুটিরশিল্প থেকে পল্লী অঞ্চলের বহু লোকের আংশিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো। এসব শিল্পের বিপর্যয়ের ফলে অনেক লোকেরই পার্শ্ববর্তী উপজীবিকার অভাব হয়। দেশে-বিদেশের রুচি ও চাহিদানুসারে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের জন্য গ্রামের নিম্নবিত্ত এবং ভূমিহীন কৃষক পরিবার এবং কারিগর শ্রেণির লোকদেরকে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও প্রাথমিক অবস্থায় স্বল্প সুদ বা বিনা সুদে ঋণদানের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশের লুপ্ত প্রায় কুটিরশিল্পের পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন করা হলে বেকার সমস্যা অনেকাংশে লাঘব হবে। কুটিরশিল্পজাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে দেশে বিদেশে বাজার সৃষ্টির জন্য কুটিরশিল্প উন্নয়ন ব্যুরোকে আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে।

পরিশেষে আমরা এখানে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক মনে করছি যে, উপরে উল্লিখিত বেকারত্ব সমস্যার প্রতিকারের বিষয়গুলো সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে সক্রিয় রয়েছে। বেকারত্বের মতো একটি জটিল ও ব্যাপক সমস্যা দূরীকরণ একদিকে যেমন সময়সাপেক্ষ অপরদিকে প্রতিযোগিতামূলক পুঁজিবাজার অর্থনীতি ও তথ্য প্রযুক্তিকে মোকাবিলা করে জনশক্তি তৈরি করাটাও কম কষ্টকর নয়।

Related Posts