Home » ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর

ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর

by Rezaul Karim
ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য

ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য

অর্থনীতির যন্ত্রের প্রত্যেকটি বিশেষ অংশের পৃথক আলোচনা ব্যষ্টিক অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত। পক্ষান্তরে, অর্থনীতি যন্ত্রের সামগ্রিক ক্রিয়া সামষ্টিক অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত। নিচে ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্যগুলো আলোচনা করা হলো-

পার্থক্য বিষয় ব্যষ্টিক অর্থনীতি সামষ্টিক অর্থনীতি
১ . আলোচনার পরিধি ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থনীতির একটি ক্ষুদ্রাংশ আলোচনা করা হয়। সামষ্টিক অর্থনীতিতে একক বা ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক সমস্যার বিশ্লেষণ না করে সামগ্রিক বা জাতীয় অর্থনৈতিক সমস্যার আলোচনা করা হয়।
২. আলোচ্য বিষয় ব্যষ্টিক অর্থনীতির আলোচ্য বিষয় একজন ব্যক্তি বা একক ফার্মের আচরণ, চাহিদা, ভোগ, আয়, ব্যয়, সঞ্চয়, মুনাফা ইত্যাদি। সামষ্টিক অর্থনীতির আলোচ্য বিষয় দেশের সামগ্রিক উৎপাদন, জাতীয় আয়, জাতীয় সঞ্চয়, জাতীয় বিনিয়োগ, সুদের হার, সাধারণ দামস্তর ইত্যাদি।
৩. ব্যক্তি ও সমষ্টি ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে একজন ভোগকারী কত দামে কী কী দ্রব্য কতটুকু ক্রয় করলে সর্বোচ্চ তৃপ্তি লাভ করবে তা আলোচনা করা হয়। সামষ্টিক অর্থনীতিতে দেশের সকল লোক কী কী দ্রব্য কী পরিমাণ ভোগ করলে সর্বোচ্চ সামাজিক কল্যাণ সাধিত হবে তা আলোচনা করে।
৪. সিদ্ধান্তের সঠিকতা ব্যষ্টিক অর্থনীতি অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত দেয়। যেমন- মন্দার সময় ব্যক্তির সঞ্চয়ের উপযোগিতা থাকলেও সামগ্রিক সঞ্চয়ের উপযোগিতা নেই। পক্ষান্তরে, এতে ব্যষ্টিক অর্থনীতির তুলনায় ভুল সিদ্ধান্ত কম হয়। কারণ এটি সামগ্রিক ব্যাখ্যা করে।
৫. মুনাফা ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে একজন উৎপাদনকারী কী কী দ্রব্য কত দামে এবং কী পরিমাণ উৎপাদন করলে সর্বোচ্চ মুনাফা হবে তা আলোচনা করা হয়। সামষ্টিক অর্থনীতিতে দেশে কী কী দ্রব্য ও কতটুকু দ্রব্য উৎপাদন করলে দেশের সর্বোচ্চ উন্নয়ন সাধিত হবে তা নির্ণয় করা হয়।
৬. ভারসাম্য যেকোনো একক খাতের বিশ্লেষণ তথা আংশিক বিশ্লেষণে এটি জড়িত। সামগ্রিক ভারসাম্য বিশ্লেষণের সাথে এটি জড়িত।
৭. ব্যয় সর্বনিম্ন ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে একজন উৎপাদনকারী কোন উপকরণ কতটুকু ক্রয় করে উৎপাদনে নিয়োগ করলে ব্যয় সর্বনিম্ন হবে তা আলোচনা করা হয়। সামষ্টিক অর্থনীতিতে দেশের মোট উৎপাদনের বা সম্পদের কত অংশ কী কী দ্রব্য উৎপাদনে বরাদ্দ বা নিয়োগ করতে হবে তা আলোচনা করা হয়।
৮. বিভিন্ন খাতের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে প্রতিটি খাতের সমস্যাসমূহ পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হয় বলে একে অন্যের সাথে কোনো সম্পর্ক থাকে না। সামষ্টিক অর্থনীতিতে সামগ্রিকভাবে আলোচিত হয় বলে খাতসমূহের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিরাজমান।
৯. বিনিয়োগ ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে একজন বিনিয়োগকারী কতটুকু বিনিয়োগ করবে তা আলোচনা করা হয়। সামষ্টিক অর্থনীতিতে দেশে কত মূলধন গঠিত হবে, কীভাবে মূলধন গঠিত হবে এবং কতটুকু পুঁজি ভোগ্যদ্রব্য উৎপাদনে ও কতটুকু পুঁজি উৎপাদক দ্রব্য উৎপাদনে ব্যয় হবে তা আলোচনা করা হয়।
ব্যষ্টিক অর্থনীতি কাকে বলে | ব্যষ্টিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি
১০. যোগসূত্র পৃথক পৃথকভাবে সমস্যা আলোচনা করা হয় তাই এদের মধ্যে কোনো যোগসূত্র থাকে না। সামগ্রিক বিশ্লেষণ করা হয় বলে এদের মধ্যে যোগসূত্র থাকে।
১১. দামস্তরের পরিবর্তন ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে একটি দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে তা কী করে হ্রাস করা যায় তা আলোচনা করা হয়। সামষ্টিক অর্থনীতিতে দেশের মুদ্রাস্ফীতি অর্থাৎ সকল দ্রব্যের সাধারণ মূল্যস্তর বৃদ্ধি পেলে কী কী ব্যবস্থা অবলম্বন করা উচিত। তা আলোচনা করা হয়।
১২. দেশের প্রকৃত অর্থনৈতিক অবস্থা ব্যষ্টিক অর্থনীতির আলোকে কোনো দেশের প্রকৃত অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ণয় করা যায় না। সামষ্টিক অর্থনীতির আলোকে কোনো দেশের প্রকৃত অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ণয় করা যায়।
১৩. অর্থনৈতিক অবস্থা এ অর্থনীতির মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা জানা যায় না। এ অর্থনীতির মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা জানা যায়।
১৪. নিয়োগ ব্যবস্থা ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে দেশে পূর্ণ নিয়োগ অবস্থা বিরাজমান বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু এটি অবাস্তব ধারণা। সামষ্টিক অর্থনীতিতে কখনই দেশে পূর্ণ নিয়োগ অবস্থা বিদ্যমান ধরে নেওয়া যায় না।
ব্যষ্টিক অর্থনীতি কাকে বলে | ব্যষ্টিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি

সুতরাং ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে উপরিউক্ত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই; বরং এরা একে অপরের পরিপূরক। ব্যষ্টিক অর্থনীতির সমর্থক হলেন ক্লাসিক্যাল এবং নিও-ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণ। পক্ষান্তরে, সামষ্টিক অর্থনীতির সমর্থক হলেন আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ।

Related Posts