Home » মাশরুমের উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম ও অন্যান্য

মাশরুমের উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম ও অন্যান্য

by Rezaul Karim
মাশরুমের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

মাশরুমের উপকারিতা – মাশরুম খুব সুস্বাদু উপাদেয় খাবার। এর স্বাদ কোনো কিছুর সাথে তুলনীয় নয়। আমার তো মাশরুমকে স্বর্গীয় খাদ্য বলেই মনে হয়। এত কথা থাক। আজ আপনাদের জানাবো মাশরুমের উপকারিতা, মাশরুম খাওয়ার নিয়ম সহ মাশরুম সম্পর্কে অন্যান্য বিভিন্ন অজানা বিষয় যা আপনারা জানার জন্য গুগলে সার্চ করেন। 

মাশরুম কি?

মাশরুম এক ধরনের ছত্রাক যা ব্যাসিডিওমাইকোটা এর অন্তর্ভুক্ত। এর কিছু প্রজাতি অ্যাসকোমাইকোটার অন্তর্ভুক্ত। অন্যান্য সকল উদ্ভিদের ন্যায় মাশরুম সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরি করে না। তাই এর খাদ্য তৈরিতে সূর্যের আলোর প্রয়োজন পড়ে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মাশরুম বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার। এশিয়া অঞ্চলের চীন, কোরিয়া মাশরুম চাষের জন্য বেশ পরিচিত। চীন তো বিশ্বের সর্বোচ্চ মাশরুম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে স্বীকৃত। এটি পৃথিবীর মোট উৎপাদিত মাশরুমের অর্ধেকের বেশি উৎপাদন করে থাকে।

মাশরুম চাষ পদ্ধতি

মাশরুমের কথা আসলে প্রথমেই আসে মাশরুম চাষ পদ্ধতির কথা। যাক আমরা মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ডিটেইলসে অন্য আরেকটি লেখায় জানবো। তারপরও আপনার যদি এখনি জানতে খুব ইচ্ছে হয় তবে নিচের এই ভিডিওটি দেখে জেনে নিতে পারেন মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।

আমরা প্রধান আলোচনায় ফিরে যায়।

মাশরুমের উপকারিতা

মাশরুম হল ঔষধিগুণের সম্ভার। বলতে হবে এটি কি না উপকার করে? মাশরুমের এত এত গুণ যে সবটা তুলে ধরা সম্ভব না। তারপরও আমরা এখানে মাশরুমের উপকারিতা সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরবো।

১. গর্ভবতী মা ও শিশুদের রোগ প্রতিরোধে

গর্ভবতী মা ও শিশুদের রোগ প্রতিরোধে মাশরুম বেশ উপকারি ভূমিকা রাখে। কারণ মাশরুমে থাকা আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেল শরীরের ইমিউন সিষ্টেমকে উন্নত করে। এছাড়া নিয়োসিন ও অ্যাসকরবিক এসিড বা ভিটামিন সি’র প্রাচুর্য থাকায় মাশরুম স্কার্ভি, পেলেগ্রা প্রভৃতি শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

২. বহুমুত্র প্রতিরোধে

বহুমুত্র বা ডায়াবেটিস প্রতিরোধেও মাশরুম বেশ উপকারি। যেহেতু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের শর্করা ও ফ্যাট জাতীয় খাবার ক্ষতিকারক, তােই ফ্যাট ও শর্করা কম এবং আঁশ জাতীয় খাবার হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মাশরুম বিশেষ উপকারী ও ডায়াবেটিস রোগীদের আদর্শ খাবার। এটি নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগারও কমে যায়।

৩. চর্মরোগ প্রতিরোধে মাশরুম

আমরা মাশরুমের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কথা জানি। আর তাই চর্মরোগ প্রতিরোধেও যে এটি ভালো ভূমিকা রাখবে তা নিশ্চই অনুমেয়। আপনারা জানলে হয়তো অবাক হবেন যে, ঝিনুক মাশরুমের নির্যাস থেকে খুশকি প্রতিরোধী ঔষধ তৈরি করা হয়।

৪. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ প্রতিরোধে

মাশরুমের মধ্যে কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন, লোভাষ্টটিন, এনটাডেনিন, কিটিন এবং ভিটামিন বি, সি ও ডি থাকায় উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ প্রতিরোধে মাশরুম বেশ কার্যকরী।

৫. দাঁত ও হাড় গঠনে

মাশরুমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি থাকায় এটি শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনে অত্যন্ত কার্যকরী।

৬. ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধে

মাশরুম ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। মাশরুমের বেটা-ডি, ল্যামপট্রোল, টারপিনয়েড ও বেনজো পাইরিন আছে যা ক্যানসার ও টিউমার প্রতিরোধ করে। গবেষণার মতে, ফ্রান্সবাসী পর্যাপ্ত পরিমাণ মাশরুম খান বলে গত এক শতাব্দী ধরে ক্যানসার রোগের প্রাদুর্ভাব কমে গেছে বলে দাবি করা হয়। এছাড়া জাপানের জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে মাশরুমের ক্যানসার প্রতিহত করার ক্ষমতা আছে।

৭. মাশরুম এইডস প্রতিরোধক

মাশরুমের মধ্যে থাকা ট্রাইটারপিন বর্তমানে বিশ্বে এইডস প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

৮. আমাশয় রোগ নিরাময়ে মাশরুম

মাশরুমে ইলুডিন এমওএস থাকাতে এটি আমাশয় রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।

৯. হাইপার টেনশন

মাশরুম শুধুমাত্র রোগ প্রতিরোধ করে না। এটি হাইপার টেনশন কমাতেও ভূমিকা রাখে। মাশরুমের মধ্যে স্ফিংগলিপিড এবং ভিটামিন-১২ বেশি থাকায় এটি স্নায়ুতন্ত্র ও স্পাইনাল কর্ডকে সুস্থ রাখে। আর তাই মাশরুম খেলে হাইপার টেনশন দূর হয় এবং মেরুদণ্ড দৃঢ় থাকে।

১০. পেটের পীড়ায় ও প্রোটিন যোগানে

প্রোটিন বেশ সুস্বাদু ও মুখরোচক। আর মাশরুমের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন। এছাড়া মাশরুমে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণ এনজাইম। বিশেষতঃ ট্রিপসিন এবং অগ্নাশয় থেকে নির্গত জারকরস আছে বলে মাশরুম খাদ্য পরিপাক ও হজমে সাহায্য করে, রুচিবর্ধক এবং পেটের পীড়া নিরামক।

১১. কিডনির রোগ প্রতিরোধে

মাশরুমে নিউক্লিক এসিড ও অ্যান্টি-এলার্জেন থাকায় এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকায়, কিডনি রোগ ও এলার্জি রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

১২. চুল পড়া ও পাকা প্রতিরোধে

আমরা জানি, সালফারের অভাবে চুল পড়ে ও দ্রুত পাকে। আর মাশরুমে আছে প্রচুর পরিমাণে সালফার সরবরাহকারী এমাইনো এসিড। ফলে মাশরুম নিয়মিত খেলে চুল পড়া ও পাকা প্রতিরোধ করে।

১৩. দৃষ্টিশক্তি রক্ষায়

মাশরুমের খনিজ লবণ চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষার জন্যও সমাদৃত।

১৪. হেপাটাইটিস-বি ও জন্ডিস

মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড, লৌহ এবং লিংকজাই-৮ নামক এমাইনো এসিড থাকায় এটি হেপাটাইটিস-বি ও জন্ডিসের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

১৫. এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা

শরীরে রক্তের স্বল্পতা দেখা দিলে এনিমিয়া রোগ হয়। আপনি যদি নিয়মিত মাশরুম খান তবে এ ধরনের রোগ থেকে রেহাই পাবেন। 

মাশরুম খাওয়ার নিয়ম

মাশরুম বিভিন্নভাবেই খাওয়া যায়। সাধারণত রান্না করে, স্যুপ বানিয়ে, নুডলস কিংবা অন্য কোনো তরকারির সাথে মিশিয়ে মাশরুম খাওয়া যায়। এছাড়াও মাশরুমকে আলাদা তেলে ভাজিয়ে মচমচা করে খাওয়া যায় যা মাশরুম ফ্রাই নামে পরিচিত। এটি বেশ সুস্বাদু ও মজাদার হয়।

এছাড়া আপনি যদি জানেন তবে মাশরুমের চপ, কোপ্তা ও বিভিন্ন তরকারির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি সব তরকারির সাথেই যায়। প্রচুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই খাবারটি যেকোনো তরকারিকে করে আরও সুস্বাদু ও মজাদার। বাজারে মাশরুমের গুড়া পাউডার পাওয়া যায়। এগুলোও খাওয়ার উপযোগী।

তবে সতর্কতা হিসেবে শুধুমাত্র চেনা প্রজাতি এবং চাষ করা মাশরুমই খাওয়া উচিত। কারণ মাশরুমের অনেকগুলো জাত বেশ বিষাক্ত ও খাওয়ার অনুপযোগী। আপনারা যেখানে সেখানে মাশরুম দেখলে তা খাওয়ার চেষ্টা করবেন না যদি না আপনি জানেন সেটা খাওয়ার উপযোগী কিনা। কিছু কিছু মাশরুমের প্রজাতি আছে যেগুলো এতটাই বিষাক্ত যে, যা খেলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

শেষ কথা

মাশরুমের উপকারিতা কতটা তা আপনার উপরের লেখা থেকে বুঝতে পারছেন। এছাড়া মাশরুমের খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কেও জেনেছেন। মাশরুমের মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপকারি উপাদান আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ সহ বিভিন্নভাবে সাহায্য করে। আর খাওয়ার বেলায় আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে অচেনা মাশরুম জাত খাওয়ার ব্যাপারে। তবে চাষ করা মাশরুম খেতে পারেন নির্দ্বিধায়।

কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

মাশরুম কি?

মাশরুম এক ধরনের ছত্রাক যা ব্যাসিডিওমাইকোটা এর অন্তর্ভুক্ত। এর কিছু প্রজাতি অ্যাসকোমাইকোটার অন্তর্ভুক্ত। অন্যান্য সকল উদ্ভিদের ন্যায় মাশরুম সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরি করে না। তাই এর খাদ্য তৈরিতে সূর্যের আলোর প্রয়োজন পড়ে না।

মাশরুম বীজের দাম কত?

সাধারণত মাশরুম বীজকে স্পন হিসেবে চেনা হয়। মাশরুম বীজের দাম নির্ভর করে এর পরিমাণ এবং জাতের উপর। তবে ২৫০ গ্রামের মত একটি মাশরুম স্পন ২০-৩০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। জায়গাভেদে এর দাম বাড়ে-কমে। কোথাও কোথাও এই পরিমাণ একটি স্পন ৪০ টাকা দামেও কেনাবেচা হতে দেখা যায়।

মাশরুম কোথায় বিক্রি করা যায়?

মাশরুম যেহেতু খুব সুস্বাদু একটি খাবার, তাই এর বিক্রি নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। আপনি মাশরুম চাষ করছেন জানতে পারলেই আপনার পাড়া-প্রতিবেশীরা কিনতে চলে আসবে। এছাড়া বাণিজ্যিক পর্যায়ে চাষ করলে আপনি বাজারে, বিভিন্ন রেস্তোঁরায় বিক্রি করতে পারেন। রেস্টুরেন্টগুলো মাশরুমের নিয়মিত কাস্টমার হয়ে থাকে।

মাশরুম কত টাকা কেজি?

এটা নির্ভর করে সীজন অনুযায়ী। অফ সীজনে এবং আগাম শীতের আগে আগাম উৎপাদনে বেশ দাম পাওয়া যায়। আমি একবার গড় সীজনে রাঙ্গামাটিতে দেখেছি ২৫০ গ্রাম বা ১ পোয়া মাশরুম ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করছে। সে হিসেবে এক কেজি ১২০০ টাকা পড়ে। তবে এটি অতিমাত্রায় এবং স্বাভাবিক নয়। আপনাকে হিসাব করতে হবে গড় হিসাবে। সাধারণত বাজারে ১ পোয় ৬০-১২০ টাকা বিক্রি করতে পারবেন সীজন অনুযায়ী। সে হিসেবে এক কেজি ২৫০-৪৫০ টাকা পাওয়া যায়।

মাশরুমের বীজ কোথায় পাওয়া যায়?

মাশরুম বীজ বা মাশরুম স্পন যারা তৈরি করে তাদের কাছে পাওয়া যায়। আপনি প্রথমে আপনার নিজের ও আশপাশের এলাকায় খুঁজে দেখবেন কেউ মাশরুম বীজ তৈরি করছে কিনা। তাদের থেকে নিতে পারবেন। দূরের কোথাও থেকেও কুরিয়ারে নিতে পারবেন, তবে সেক্ষেত্রে দাম বেশি পড়বে এবং মাশরুমের বীজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

মাশরুম চাষের ট্রেনিং কোথায় হয়?

ঢাকার সাভারে অবস্থিত মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে মাশরুম চাষ সম্পর্কে ট্রেনিং দেয়া হয়। এছাড়া আপনার এলাকায় ট্রেনিংপ্রাপ্ত কারোও কাছ থেকেও এ সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। এর বাদেও যুব উন্নয়নসহ বিভিন্ন এনজিও মাঝে মাঝে মাশরুম চাষের ট্রেনিং দিয়ে থাকে।

তথ্যসূত্র: সাজগোজ

Related Posts