Home » মুদ্রার মূল্য বলতে কি বুঝ | মুদ্রার চাহিদা কাকে বলে

মুদ্রার মূল্য বলতে কি বুঝ | মুদ্রার চাহিদা কাকে বলে

by Rezaul Karim
মুদ্রার মূল্য বলতে কি বুঝ, মুদ্রার চাহিদা কাকে বলে,

মুদ্রার মূল্য

মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যম। মুদ্রার সাধারণ ক্রয়ক্ষমতা আছে। সুতরাং মুদ্রা দ্বারা যা ক্রয় করা হয়, তাই মুদ্রার মূল্য। একটি বিশেষ স্থানে, একটি বিশেষ সময়ে, এক একক মুদ্রা দ্বারা যে পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করা যায়, তাই উক্ত একক মুদ্রার মূল্য। মুদ্রার মূল্য বা মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা দ্রব্যমূল্যের ওপর নির্ভর করে।

অধ্যাপক ডি. এইচ. রবার্টসন (D. H. Robertson) বলেন, “মুদ্রার নির্দিষ্ট এককের বিনিময়ে সাধারণভাবে যে পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম পাওয়া যায় তাকে মুদ্রার মূল্য বলা হয়।” (The value of money we mean the amount of things in general which will be given in exchange for a unit money.)

বিহিত মুদ্রা কি, কত প্রকার ও কি কি? আমানত কি বা কাকে বলে?

অর্থনীতিবিদ জে. এল, হ্যানসেনের মতে, “মুদ্রা যা ক্রয় করে তাই মুদ্রার মূল্য।” অর্থনীতিবিদ কে. কে. কুরিহারা বলেন, “মুদ্রার অভ্যন্তরীণ মূল্য বলতে অভ্যন্তরীণ দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের প্রেক্ষিতে ওই মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতাকে নির্দেশ করে এবং মুদ্রার বহিঃস্থ মূল্য বলতে মুদ্রার বৈদেশিক বিনিময় হারকে বোঝায়।”

অধ্যাপক আরভিং ফিশার (Irving Fisher) বলেন, “মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা এবং দামস্তর বিপরীতভাবে সম্পর্কযুক্ত।” কারণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে মুদ্রার মূল্য হ্রাস পায় এবং দ্রব্যমূল্য হ্রাস পেলে মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধি পায়। সুতরাং দেখা যায়, অর্থের মূল্য ও দ্রব্য মূল্যের মধ্যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান। মুদ্রার মূল্যের সূত্রটি হলো-

মুদ্রার মূল্য = ১/মূল্যস্তর

বা, V = 1/P

এখানে, V = মুদ্রার মূল্য, P = মূল্যস্তর।

মুদ্রার চাহিদা

মুদ্রার নিজস্ব কোনো চাহিদা নেই। মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এছাড়া মুদ্রা মূল্যের ধারক হিসেবেও কাজ করে। ফলে মানুষ সবসময় নগদ মুদ্রা হাতে রাখতে চায়। হাতে ধরে রাখার এ প্রবণতাকেই মুদ্রার চাহিদা বলা হয়। মুদ্রার চাহিদা সৃষ্টি করে ব্যক্তি, বিমা কোম্পানি, বিনিয়োগ ট্রাস্ট, সঞ্চয়ী ব্যাংক, শিল্প প্রতিষ্ঠান, সরকার, বিলের দালাল ইত্যাদি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। অর্থনীতিবিদ লর্ড কেইন্স (Lord Keynes) তার ‘নগদ পছন্দ তত্ত্বে’ মানুষ কেন নগদ অর্থ হাতে রাখতে চায় তার ব্যাখ্যা দেন। লর্ড কেইন্সের মতে, মানুষ তিনটি উদ্দেশ্যে নগদ মুদ্রা হাতে রাখতে চায়। যথা-

১. লেনদেন উদ্দেশ্য (Exchange Intention),

২. সতর্কতামূলক উদ্দেশ্য (Precautionary Object) ও

৩. ফটকা উদ্দেশ্য (Speculative Object) |

১. লেনদেন উদ্দেশ্য (Exchange Intention)

মানুষের আয়-ব্যয়ের মধ্যে সময়ের একটি ব্যবধান থাকে। এ সময়ের জন্য দৈনন্দিন লেনদেন মেটাতে মানুষ কিছু নগদ মুদ্রা হাতে রাখে। এভাবে মুদ্রা ধরে রাখাকেই লেনদেনের উদ্দেশ্যজনিত মুদ্রার চাহিদা বলা হয়। লেনদেনের উদ্দেশ্যজনিত চাহিদার পরিমাণ মানুষের লেনদেনের পরিমাণ তার ব্যয়ের অভ্যাস, আয়স্তর আয়-ব‍্যয়ের মধ্যকার সময়ের ব্যবধান ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।

২. সতর্কতামূলক উদ্দেশ্য (Precautionary Object)

মানুষ অনেক সময় হঠাৎ করেই আর্থিক সংকটে পড়তে পারে। যেমন- অসুস্থতা, দুর্ঘটনা, অনুষ্ঠানাদি, চাঁদা প্রদান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি জরুরি অবস্থা অনেক ক্ষেত্রে মোকাবিলা করতে হয়। এজন্য মানুষ নগদ মুদ্রা হাতে রাখতে চায়। সতর্কতামূলক উদ্দেশ্যজনিত চাহিদার পরিমাণ আয়স্তর, মুদ্রা প্রাপ্তির সুযোগ, অনিশ্চয়ত্রী প্রভৃতি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।

৩. ফটকা উদ্দেশ্য (Speculative Object)

মানুষ অনেক সময় মুনাফা লাভের আশায় নগদ মুদ্রা হাতে রাখতে চায়। সে অনেক সময় ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয় করে সুযোগ বুঝে মুনাফা অর্জন করতে পারে। ঋণপত্রের বাজারমূল্য কমে গেলে অনেকেই ঋণপত্র ক্রয় করে এবং চড়া বাজারে তা বিক্রয় করে মুনাফা অর্জন করতে পারে। এ উদ্দেশ্যে মুদ্রা হাতে রাখাকে ফটকা উদ্দেশ্য বলা হয়।

মুদ্রা কি | মুদ্রা কাকে বলে | আধুনিক অর্থনীতিতে অর্থের গুরুত্ব লিখ

Related Posts