মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা
মোবাইল ব্যাংকিং সীমিত আকারে হলেও দেশে চালু হওয়ার পর থেকে শহর থেকে প্রান্তিক এলাকার মানুষজন এর মাধ্যমে নানা ধরনের সুবিধা ভোগ করছেন। মোবাইল্ ব্যাংকিং এর সুবিধা নিচে দেওয়া হলো-
১. মোবাইল ব্যাংকিং-এর প্রথম সুবিধা হলো, এতে গ্রাহক যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে নিজ মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার করে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। ফলে ব্যাংকে না গিয়েও স্থানীয় এজেন্টের সহায়তায় মানুষজন একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে ও তা ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করতে হয়। মোবাইল ব্যাংকিং-এ এর পরিমাণ খুবই কম।
২. বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের মতে, মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু হওয়ার মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং খাত তথা আর্থিক খাতের একটি বিরাট মাইলফলক অর্জিত হলো। এর ফলে জনসাধারণ সাশ্রয়ী ও নিরাপদ ব্যাংকিং সেবা পাবে।
৩. মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একেবারে প্রান্তিক এলাকার মানুষ যেখানে এখনও প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থা পৌঁছতে পারেনি, সেখানেও ব্যাংকিং করা সম্ভব। তাছাড়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খুব সহজে অ্যাকাউন্ট খোলা যায় বলে তা সাধারণের আয়ত্তের মধ্যে থাকছে।
অনলাইন ব্যাংকিং এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলো আলোচনা কর |
৪. মোবাইল ব্যাংকিং-এর জন্য একটি এলাকায় সেই ব্যাংকের কোনো শাখা না থাকলেও চলে। যেসব ব্যাংক মোবাইল অপারেটরদের সহায়তায় এ সুবিধা প্রদান করছে, তারা দেশব্যাপী প্রচুর এজেন্ট নিয়োগ করছে। ফলে ব্যাংক না থাকলেও ব্যাংকের সাথে লেনদেন করা সম্ভব।
৫. মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে দেশব্যাপী যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে ব্যাংকিং করার সুবিধা পাওয়া যায়। তাছাড়া এ ধরনের ব্যাংকিং মানুষকে সহজে সঞ্চয়ী হতে উৎসাহিত করে।
৬. মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে দ্রুত ও কম ব্যয়ে টাকা লেনদেন করা যায়। এটি সাধারণ মানুষকে আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় প্রবেশের সুযোগ করে দেয় এবং অনলাইন ব্যাংকিং-এর তুলনায় অধিক নিরাপদ।
৭. এ পদ্ধতিতে ব্যাংকিং-এর সব তথ্য গ্রাহকের মোবাইলে মেসেজ আকারে চলে আসে। ফলে গ্রাহক চাইলে তার ব্যালেন্স ও লেনদেনের অন্যান্য তথ্য দেখতে পারেন।
৮. এ মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতিতে ব্যাংকের পুরা হিসাব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করার প্রয়োজন হয় না। উপরন্তু সরাসরি ও তাৎক্ষণিকভাবে হিসাব-নিকাশ হয় বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় হিসাব-নিকাশ চেক করতে পারেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
৯. কিছু কিছু ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন ব্যাংকিং-এর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করেছে। অর্থাৎ মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে অনলাইন ব্যাংকিং সম্পর্কিত কিছু কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে। ইতোমধ্যে কিছু ব্যাংক গ্রাহকের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন ও টাকা জমার ব্যবস্থা করেছে।
১০. সর্বোপরি, মোবাইল ব্যাংকিং মানুষকে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর ভীতি থেকে মুক্ত করেছে। মানুষজন এখন দৈনন্দিন প্রয়োজনে সরাসরি ব্যাংকের সাহায্য ছাড়াই ব্যাংক ব্যবস্থার কিছু কিছু সুবিধা ভোগ করছে। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে মানুষজন ব্যাংক ব্যবস্থার সম্পূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে সক্ষম হবে।
মোবাইল ব্যাংকিং এর অসুবিধা
মোবাইল ব্যাংকিং-এর নানা ধরনের সুবিধা থাকলেও এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। মোবাই ল ব্যাংকিং-এর অসুবিধা সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. মোবাইল ফোন ব্যাংকিং-এর সাথে মোবাইল ফোন অপারেটররা সরাসরি সংযুক্ত থাকে। তাই নির্দিষ্ট অপারেটর ব্যতীত অন্য অপারেটরের মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করলে গ্রাহক সেখানে সহজে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে না। মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা প্রদানকারী ব্যাংক যদি ওই অপারেটরের সাথে চুক্তি করে, তাহলেই কেবল সেই ব্যাংকের সাথে সেই নির্দিষ্ট অপারেটরের গ্রাহক মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন।
২. মোবাইল ব্যাংকিং-এ লেনদেনের জন্য যে পরিমাণ চার্জ কাটা হয়, তা সাধারণ ব্যাংকিং-এর তুলনায় বেশি বলে অনেকে মনে করেন। এ বিষয়টি মোবাইল ব্যাংকিং দ্রুত বিস্তারের জন্য বাধাস্বরূপ হতে পারে।
৩. মোবাইল ফোন ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে প্রবাসী আয় প্রেরণ ও গ্রহণ এবং সরকারি ভাতা প্রদানের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এ ধরনের অনেক সুবিধা এখনও পুরাপুরি চালু হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর |
৪. মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে একজন গ্রাহক এখনও ব্যাংক ব্যবস্থার সব ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারেন না। কিছু বিশেষায়িত সেবা ছাড়া বাদবাকি অন্যান্য সেবার জন্য গ্রাহককে ব্যাংকের দ্বারস্থ হতেই হয়। তবে মোবাইল ব্যাংকিং পূর্ণভাবে বিকশিত হলে এ সমস্যা থাকবে না।
৫. গ্রাহক সচেতন না হলে এ ধরনের ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে প্রতারণা করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে গ্রাহককে তার ব্যাংকিং-এর জন্য নির্ধারিত পিন ও অন্যান্য গোপন নম্বর সযত্নে গোপন রাখতে হয়।
৬. যেসব গ্রাহকের লেনদেনের হিসাবের প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করতে হয় বা জমা দিতে হয়, মোবাইল ব্যাংকিং-এ তারা কিছুটা অসুবিধা ভোগ করেন। কারণ এ ধরনের ব্যাংকিং-এ লেনদেনের হিসাব তাৎক্ষণিকভাবে প্রিন্ট করা দুরূহ।
৭. মোবাইল ব্যাংকিং-এ লেনদেনের বিষয়টি সীমিত বলে কোনো গ্রাহক দৈনিক নির্ধারিত লেনদেন একবার সম্পন্ন করে ফেললে জরুরি ভিত্তিতেও পুনরায় আয় লেনদেন করতে পারেন না।