Home » শিকার ও খাদ্য সংগ্রহ ভিত্তিক সমাজের বৈশিষ্ট্য

শিকার ও খাদ্য সংগ্রহ ভিত্তিক সমাজের বৈশিষ্ট্য

by Rezaul Karim
শিকার ও খাদ্য সংগ্রহ ভিত্তিক সমাজের বৈশিষ্ট্য

শিকার ও খাদ্য সংগ্রহ ভিত্তিক সমাজ কি?

শিকার ও খাদ্য সংগ্রহ ভিত্তিক সমাজ বলতে মূলত আদিম গোষ্ঠীগত সমাজকে বুঝায়। এ সমাজ ছিল উৎপাদক শক্তি বিকাশের সর্বনিম্ন স্তর। মানবজীবনের এ সর্বনিম্ন স্তরে মানুষ নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদন করতে পারতো না। বনজঙ্গলে ঘুরে ফিরে তাদের খাদ্য সংগ্রহ করতে হতো। তিন উপায়ে খাদ্য সংগ্রহ হতো-

১. Hunting বা বন্য পশুপাখি শিকার।

২. Fishing বা নদীনালা, খালবিল, সাগর থেকে মাছ ধরা।

৩. Collecting বা বন্য গাছপালা থেকে ফলমূল আহরণ।

এ প্রসঙ্গে Beals and Hojer এর ভাষ্য, “Gathering techniques involve utilization of the resources of the environment as given, without any methods of improving or increase the available supply.”” অর্থাৎ, খাদ্য সংগ্রহ সমাজ হচ্ছে সেই সমাজ যা মানুষের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কোন পদ্ধতি ছাড়া পরিবেশের সম্পদ ব্যবহারের সাথে সংযুক্ত কৌশল।

সমাজ কত প্রকার ও কি কি?

শিকার ও খাদ্য সংগ্রহ ভিত্তিক সমাজে মানুষের কোন স্থায়ী বাসস্থান ছিল না। কারণ কখনো তাদেরকে বন্য পশুপাখি ও জীবজন্তু শিকারের সন্ধানে অথবা বনজঙ্গলে ঘুরে ফিরে ফলমূল, শাকসবজি জাতীয় খাদ্য সংগ্রহ করতে হতো। আবার কখনো নদনদী, খালবিল থেকে মাছ শিকার করতে হতো। নির্দিষ্ট স্থানের খাদ্য ফুরিয়ে গেলে আবার অন্যত্র খাদ্যের সন্ধানে বের হতো। সেজন্য তাদের জীবন ছিল- আজ এখানে, কাল ওখানে। মানবজীবনের এ অবস্থা সম্পূর্ণভাবে কেটেছে অনিশ্চয়তার মাঝে। কারণ উৎপাদন করার ক্ষমতা তখনো তাদের আয়ত্তের বাইরে ছিল। মানুষ এ অবস্থায় সকলে মিলেমিশে দলবদ্ধভাবে খাদ্য সংগ্রহ করতো এবং সকলে দলবদ্ধভাবে সে খাদ্য ভক্ষণ করতো। ভারতীয় নৃবিজ্ঞানী মিনু মাসানী তাঁর ‘Our Growing on Human Family’ (বিবর্তনের পথে মানব পরিবার) গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, “Life was either a feast or a fast.” অর্থাৎ, তখন তাদের জীবনটা ছিল হয় ভূরিভোজন, নচেৎ উপবাস।

সমাজব্যবস্থার এরূপ অবস্থাকে অনেক সামাজিক ইতিহাসবেত্তাগণ মনে করেন, এ সমাজে এক ধরনের আদিম সাম্যবাদ ছিল। শিকার ও খাদ্য সংগ্রহ ভিত্তিক সমাজে শুধু যে খাদ্যদ্রব্যই সমভাগে ভাগ করা হতো তা নয়, তাদের সবকিছুই সমান ভাগ হতো; যেমন- একজনের তৈরি হাতিয়ার প্রয়োজনবোধে সকলেই ব্যবহার করতে পারতো।

শিকার ও খাদ্য সংগ্রহ ভিত্তিক সমাজের বৈশিষ্ট্য

১. এ সমাজ প্রকৃতির উপর পরিপূর্ণভাবে নির্ভরশীল ছিল।

২. এ সমাজে জনবসতির ঘনত্ব খুব কম ছিল।

৩. সুষম বণ্টন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।

৪. কেবল স্ত্রী-পুরুষ ও বয়সভেদে শ্রমবিভাগ ছিল।

৫. এ সমাজে কোন সামাজিক শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল না।

এ সমাজে খাদ্য সংগ্রহের জন্য তীরধনুক, বর্শা, বড়শি, পাথরের হাতিয়ার

৬. ইত্যাদি সহজ সরল কৌশল চালু ছিল।

৭. শিকার ও খাদ্য সংগ্রহভিত্তিক সমাজের একক হলো গোষ্ঠী বা কৌম।

৮. এ সমাজের সবাই ছিল যাযাবর। কেননা পশুপাখি, মাছ ইত্যাদি শিকারে তারা বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়াতো।

৯. এ সমাজে বহু ঈশ্বরবাদী বিশ্বাসই প্রাধান্য পায়। তারা নৃত্য, সঙ্গীত এবং বিভিন্ন পূজা অর্চনা করতো।

১০. এ সমাজে উৎপাদন কৌশল শুধু বেঁচে থাকার জন্যই গ্রহণ করা হতো।

সমাজের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর

Related Posts

1 comment

Comments are closed.