আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু শিল্প সমাজ কি বা শিল্প সমাজ বলতে কি বোঝায়, শিল্প সমাজের বৈশিষ্ট্য এবং সম্পত্তির সংজ্ঞা
শিল্প সমাজ
১৪৫৩ সাল থেকে প্রথম Renaissance এর মাধ্যমে চার্চভিত্তিক কূপমণ্ডুকতাকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তচিন্তার নব্যপ্রবাহ ক্রমশ Explanation of nature থেকে Science এ রূপান্তরিত হয়, সৃষ্টি হয় Religions thinking এর স্থলে Secular thinking, ফলে চিন্তাধারায় জাগতিক প্রভাব ও পরিবর্তন, কর্মপ্রচেষ্টা, Mind development thinking এর সৃষ্টি করে; পরিবর্তন আসে Idea of knowledge এর ক্ষেত্রে। সামগ্রিকভাবে পরিবর্তনের স্বরূপটি নিম্নরূপ:
Pre-renaissance Post renaissance
Agriculture Industrial
Monarchy Democracy
Religious thinking Secular thinking
Nature Science
Village Town
Church State
আঠারো শতকে শিল্পবিপ্লব ও ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং এর ফলশ্রুতিতেই কৃষিভিত্তিক সমাজের গর্ভেই জন্মলাভ করে শিল্প সমাজ । বিশেষকরে শিল্পবিপ্লবের মধ্য দিয়ে জীবনধারায় আসে ব্যাপক পরিবর্তন, ত্বরান্বিত হয় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, আবিষ্কার হয় নব নব কলাকৌশল। এভাবে নতুন কলাকৌশল আবিষ্কার ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ফলে কৃষিভিত্তিক তথা গতানুগতিক সমাজব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটে। আবির্ভূত হয় শিল্প সমাজের ।
শিল্প সমাজে যন্ত্রশক্তি মানুষের দৈহিক ও পশুশক্তির স্থলাভিষিক্ত হয়। এ সমাজের অর্থনৈতিক জীবনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পদের ব্যাপক সম্প্রসারণ, বিচিত্র ধরনের পেশার সংখ্যা বৃদ্ধি। এ সমাজে শ্রমিক ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনযাত্রার মান ও ক্রয়ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। আর এসবের মূলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও শ্রমিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।” শিল্প সমাজের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রধান দিকসমূহ হলো বাষ্পচালিত যন্ত্র, বস্ত্রকল, ট্রেন, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ ও উড়োজাহাজ ইত্যাদি। এই সমাজে শক্তির নতুন উৎস হিসেবে আবির্ভূত হয় কয়লা, পেট্রোল, প্রাকৃতিক গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি। এই সমাজব্যবস্থার অধিকাংশ মানুষ শিল্প–কারখানা, অফিস–আদালত, দোকানপাট ইত্যাদিতে কর্মরত থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের পেশার সৃষ্টি হয়।
শিল্প সমাজের বৈশিষ্ট্য
১. উৎপাদন ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রশিল্পের ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ।
২. অধিকাংশ শ্রমিক কলকারখানায় নিয়োজিত থাকে।
৩. ব্যবসায়–বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটে।
৪. পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়।
৫. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৬. শ্রমিকরা স্বাধীনভাবে শ্রম বিনিয়োগ করতে পারে।
৭. যৌথ পরিবার ভেঙে অণুপরিবার সৃষ্টি হয়।
৮. জটিল শ্রমবিভাজন পরিলক্ষিত হয়।
৯. পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও বিস্তার ঘটে।
১০. অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়।
১১. সম্পত্তিতে ব্যক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়।
১২. গ্রামীণ জীবনের একাত্মতা বিনষ্ট হয়।
১৩. সামাজিক স্তরায়ন পরিলক্ষিত হয়।
১৪. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়।
১৫. পণ্য উৎপাদন ও চাহিদা বেড়ে যায়।
১৬. পুঁজিবাদের বিকাশ ত্বরান্বিত হয়।
অতএব বলা যায়, শিল্পায়িত সমাজে মানবগোষ্ঠীর সামগ্রিক জীবনধারার চিত্র বদলে যায়। হাজার হাজার বছর ধরে কৃষিকে ভিত্তি করে যেসব প্রতিষ্ঠান, জীবনযাত্রা প্রণালী, মূল্যবোধ ও মানসিকতা গড়ে উঠেছিল, শিল্প সমাজের আবির্ভাবে সেগুলোতে দেখা দিল ক্ষয়িষ্ণুতা।
আরও পড়ুন: কৃষিভিত্তিক সমাজ কাকে বলে? কৃষিভিত্তিক সমাজের বৈশিষ্ট্য
সম্পত্তির সংজ্ঞা
প্রকৃতিকে নিজের কাজে ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন প্রকারের হাতিয়ার, কলাকৌশল, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি উদ্ভাবন করে মানুষ নিজেদের পার্থিব প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম হয়েছে। মানুষের এ স্বতঃপ্রবৃত্ত ক্রিয়াকর্মই জীবজগৎ থেকে তাকে পৃথক করে দিচ্ছে। খাদ্য সংগ্রহ ও উৎপাদনের জন্য প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মকে ব্যবহারের এ পার্থিব প্রয়োজন মিটানোর নিমিত্তে যে সমস্ত প্রথা মোটামুটি স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে সেসবকে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয়। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সমাজের ব্যবহারিক জীবনে একটি স্থায়ী আসন অধিকার করে আছে।
কালক্রমে খাদ্য সংগ্রহের প্রকৃতি ও পদ্ধতির উপর মানুষের শ্রম প্রক্রিয়ায় যে বহুমুখী সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তার উপর ভিত্তি করেই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিভিন্ন কার্যকলাপ সমাজে স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপযোগের উপর স্বীয় অধিকার স্থাপনের মাধ্যমে মানুষের মনে সম্পত্তি মালিকানার ধারণা জন্মায়। অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিভিন্ন কার্যকলাপের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে সম্পত্তি।
সমাজবিজ্ঞানের সূচনাকাল থেকেই সমাজবিজ্ঞানী, সামাজিক নৃবিজ্ঞানীরা সমাজ ও সংস্কৃতিকে জানতে গিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে সম্পত্তির আলোচনার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। মানুষের সামাজিক জীবনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কোন কোন পর্যায়ে কিভাবে সম্পত্তির ধারণার উদ্ভব হয়েছে এবং তা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা সম্পত্তির মালিকানার প্রকৃতি নির্ধারিত হয়েছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট মতামতগুলোর সমাজতাত্ত্বিক আলোচনা সংক্ষেপে এখানে তুলে ধরা হলো :
সম্পত্তিকে যদি একটি সাধারণ অথচ ব্যাপক পরিসরে সংজ্ঞাবদ্ধ করতে চাই
তাহলে আমরা বলব, “সম্পত্তি হচ্ছে উপযোগ কোন বস্তু বা বিষয়ের মালিকানা যার উপর সমাজ কর্তৃক মানুষের স্বীকৃত নিরঙ্কুশ অধিকার বর্তায়।” অর্থাৎ যখন কোন বস্তু ব বিষয়ের উপর সমাজ স্বীকৃত নিরঙ্কুশ অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষ জীবিকানির্বাহের প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম হয়, তখন তাকে সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করতে পারি।
Kingsley Davis এর মতে, “Property is nothing more than rights and obligations with respect to something scarce. ” অর্থাৎ 18 সম্পত্তি সীমিত কোন বিষয়ে মানুষের অধিকার এবং আইনগত বৈধতা ব্যতীত আর কিছুই নয় ।
- T. Hobhouse তার The Historical Evolution of Property’ গ্রন্থে বলেন, “Property is to be conceived in terms of the control of man over things, a control which is recognized by society more or less permanent and exclusive. অর্থাৎ সম্পত্তি হচ্ছে কোন বিষয় বা বস্তুর উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, যা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত, কম বেশি স্থায়ী ও একচেটিয়া।
William P. Scott এর ভাষায়, “Property is a socially sanctioned recognition of a group of individuals rights privileges and responsibilities with relation to an object, resource or activity.” অর্থাৎ, সম্পত্তি হচ্ছে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এমন সব অধিকার, সুযোগ–সুবিধা এবং দায়িত্ব যা কোন বস্তু, সম্পদ বা কাজের সাথে সম্পৃক্ত এবং যা সমাজ কর্তৃক অনুমোদিত ও স্বীকৃত।
আধুনিক সমাজচিন্তাবিদগণ মনে করেন যে, মানুষ তার সৃজনশীল ক্ষমতার মাধ্যমে অথবা উত্তরাধিকারসূত্রে কোনকিছু অর্জন করে সমাজে তার অধিকার ও কর্তব্য প্রতিষ্ঠা করে থাকে, সেই অধিকার ও কর্তব্যের আধারকে সম্পত্তি বলে।