Home » শেয়ার ও বন্ডের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর

শেয়ার ও বন্ডের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর

by Rezaul Karim
শেয়ার ও বন্ডের মধ্যে পার্থক্য,

প্রিয় পাঠক, শেয়ার মার্কেট ও বন্ড মার্কেটে নামার আগে আপনাকে শেয়ার ও বন্ডের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার। কারণ, বেসিক জ্ঞান ছাড়া আপনি এসব মার্কেটে ঢুকে লাভের আশা করতে পারবেন না। চলুন, আজকের আলোচনায় জেনে নিই শেয়ার ও বন্ডের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে। 

শেয়ার হলো মূলধন বাজারের হাতিয়ার। ক্রেতা কোনো কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করলে এর মাধ্যমে কোম্পানির সাধারণ শেয়ারের আর্থিক মালিকানা লাভ করা হয়। কোম্পানির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক কৃতকার্যত (performance) বিবেচনায় শেয়ারের বাজার দর ওঠানামা (fluctuate) করে।

পক্ষান্তরে, বন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে ক্রেত ঋণদাতায় পরিণত হয়। ঋণদাতা ছয় মাস বা এক বছর পর পর নির্দিষ্ট হারে সুদ পাবে। বন্ড স্বল্পমেয়াদি হলে তাকে ফু বাজার এবং দীর্ঘমেয়াদি হলে মূলধন বাজারের উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদি কোনো কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঋণপত্রের সুদ পরিশোধে ব্যর্থ হয় তখন বন্ডের দাম নিম্নমুখী হবে। পুনরায় বিনিয়োগে ফিরতে হলে বন্ডে উচ্চ হারে সুদ প্রদান করতে হবে। শেয়ার লেনদেনের জন্য সুনির্দিষ্ট স্থান (Stock exchanges) রয়েছে।

বন্ড কি বা কাকে বলে? বন্ড কত প্রকার ও কি কি?

পক্ষান্তরে, বন্ড বা ঋণপত্র লেনদেনের জন্য ক Over-the-counter (OTC) মার্কেট চালু করা হয়। বন্ড মার্কেটের সাথে শেয়ার মার্কেটের বিপরীত সম্পর্ক বিদ্যমান। যখন বন্ড মার্কেটে সুদের হার উচ্চ থাকে তখন শেয়ার বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করে। অর্থনীতিতে মন্দাকালীন সময়ে। শেয়ারবাজার অপেক্ষা বন্ড মার্কেট বিনিয়োগের জন্য অধিক উত্তম স্থান মনে করে বিনিয়োগকারীরা। আর্থিক নিরাপত্তা এবং বার্ষিক মুনাফার দৃষ্টিকোণ থেকে বন্ড মার্কেট অধিক প্রত্যাশিত। কিন্তু দৈনিক যারা শেয়ার বাজারে লেনদেন করে তাদের নিকট বন্ড মার্কেট অপেক্ষা শেয়ার বাজার পছন্দনীয়।

শেয়ার ও বন্ডের মধ্যে পার্থক্য

বন্ড বা ঋণপত্রের সাথে শেয়ার বাজারের কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে যা বন্ডের বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়। এগুলো নিম্নরূপ-

১. সংজ্ঞা: বন্ডের বাজার হলো এরূপ একটি ব্যবস্থা যেখানে বন্ড-এর লেনদেন সম্পন্ন হয়। একইভাবে শেয়ার বাজারেও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়।

২. পরিপক্বতা (Maturity): বন্ডের বাজারে ঋণ পরিশোধের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে, যাকে ঋণের পরিপকু সময় বলে। এ সময় অতিক্রমের পর একসঙ্গে ঋণের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিস্তিতেও ঋণ পরিশোধ করা যায়। শেয়ার বাজারে এরূপ ব্যবস্থা নেই।

৩. ঋণের দলিল: বন্ড বা ঋণপত্র ঋণের দলিল ছাড়া আর কিছু নয়। এ দলিল হস্তান্তরের মাধ্যমে এর মালিকানা হস্তান্তর করা যায়। ঋণের পরিমাণ, ঋণের মেয়াদ, সুদের হার প্রভৃতি দলিলে উল্লেখ থাকে। কিন্তু শেয়ার বাজারে এরূপ ঋণের মেয়াদ, সুদের হার দলিলে উল্লেখ থাকে না।

৪. সংগৃহীত মূলধনের পরিমাণ: বন্ডের বাজারের মাধ্যমে সংগৃহীত মূলধনের পরিমাণ কম হয়। বাংলাদেশে এই বাজার অনেক দুর্বল। তুলনামূলকভাবে শেয়ার বাজারের মাধ্যমে অধিক পরিমাণ মূলধন সংগ্রহ সম্ভব।

৫. সুদ: বন্ডের বাজার এর উপর নির্দিষ্ট হারে সুদ দিতে হয়। এ সুদের হার স্থায়ী বা পরিবর্তনশীল উভয়ই হতে পারে। এখানে সুদই হলো ঋণপত্রের ধারকদের আয়। কোম্পানির লাভ হোক বা না হোক সুদ পরিশোধ করতেই হবে। শেয়ার বাজারে এরূপ কঠোর নিয়ম নেই। শেয়ারে লাভ-লোকসান দুটিই হতে পারে। বন্ডের বাজারে সুদ পরিশোধের ব্যর্থতায় কোম্পানিকে দেউলিয়াও ঘোষণা করা যায়।

৬. পরিচালনা ও ভোটাধিকার: বন্ডের ধারকরা কোম্পানি ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। এরা দীর্ঘমেয়াদে মূলধন সরবরাহকারী হলেও শেয়ারহোল্ডারদের মতো পরিচালনায় অংশগ্রহণের অযোগ্য। তবে কোনো কোনো দেশে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারগণ যদি কেউ কোম্পানির সর্বনিম্ন নির্দিষ্ট শেয়ারের মালিক (যেমন ৫%) হয় তবে সে পরিচালক হতে পারবে, এরূপ বিধি করা হয়।

এছাড়া কোম্পানির সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বন্ড হোল্ডাররা সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের মতোই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না।

৭. রূপান্তরযোগ্যতা: বাজারে কিছু কিছু বন্ডকে শেয়ারে রূপান্তর করা যায় কিন্তু শেয়ারকে কখনো বন্ডে রূপান্তর করা যায় না।

প্রাথমিক শেয়ার ও মাধ্যমিক শেয়ারের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা

৮. তদারকি কর্তৃপক্ষ: বন্ডের বাজারে তদারকি কর্তৃপক্ষের নজরদারি অনেক কম থাকে বিধায় এটি নমনীয় হয়। পক্ষান্তরে শেয়ার বাজারে তদারকি কর্তৃপক্ষ অনেক শক্তিশালী হয় বিধায় এটি কম নমনীয়।

৯. জামানত (Collateral): বন্ড দু’ধরনের। একটি জামানতহীন আয় বন্ড, অপরটি জামানতযুক্ত। যেমন: বন্ধকি ঋণপত্রই জামানতযুক্ত। কিন্তু শেয়ারের সাথে জামানত ধারণার কোনো সম্পর্কই নেই।

১০. তহবিল সংগ্রহ বাবদ ব্যয়: বন্ডের বাজারের মাধ্যমে শিল্প পুঁজির তহবিল সংগ্রহ করা হলে ব্যয় অধিক হয়। পক্ষান্তরে শেয়ার বাজার হতে এরূপ অর্থায়নে ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম হয়।

১১. সম্পত্তির উপর দাবি: বন্ড হোল্ডাররা কোম্পানির সম্পত্তির উপর দু ধরনের দাবি করতে পারে। যেমন:

(ক) সাধারণ দাবি: বন্ড হোল্ডাররা শেয়ার মালিকদের চেয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোম্পানির সম্পত্তির উপর দাবি করতে পারে।

(খ) সুনির্দিষ্ট দাবি: যদি কোনো নির্দিষ্ট সম্পত্তি বন্ধক রেখে বন্ডের মাধ্যমে কোম্পানি পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহ করে এবং কোম্পানি উক্ত বন্ডের টাকা ফেরত প্রদানে ব্যর্থ হলে, বন্ড হোল্ডাররা উক্ত সম্পত্তি বিক্রয় করে তাদের ঋণের টাকা আদায় করতে পারে। কিন্তু শেয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রয় করে শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে না।

১২. একক মূল্য: কোনো কোম্পানি বাজারে যতগুলো বন্ড ছাড়ে সবগুলো বন্ডেরই মূল্য একই হয়। যেমন: ১০০০, ৫০০০; ১০,০০০; ২৫,০০০ এরূপ রাউন্ড ফিগারে বন্ড দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের মূল্য ‘ফেইস ভ্যালু’ (Face value) একই ১০.০০ টাকা। কোনো কোনো কোম্পানির প্রিমিয়ামসহ IPO শেয়ারের মূল্য অধিক হলেও Face value ১০.০০ টাকাই থাকে।

১৩. অংশগ্রহণকারী: বন্ডের বাজার হলো মূলত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজার। কিন্তু শেয়ার বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সাথে সাধারণ বিনিয়োগকারীও অবস্থান করে।

১৪. জনপ্রিয়তা: বন্ডের বাজার বাংলাদেশে জনপ্রিয় না হলেও তুলনামূলকভাবে শেয়ার বাজার জনপ্রিয়।

শেষ কথা

প্রিয় ‍পাঠক, আশাকরি উপরের আলোচনা থেকে আপনারা শেয়ার ও বন্ডের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এবং এতে আপনার অনেক উপকার হয়েছে।

Related Posts