অনেকেই জিজ্ঞেস করেন বা জানতে চান যে শেয়ার কত প্রকার ও কি কি? আজকের আলোচনায় এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করবো যাতে আপনি শেয়ারের প্রকারভেদ সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা লাভ করতে পারেন।
শেয়ার কত প্রকার?
শেয়ার সাধারণভাবে তিন প্রকার। যথা-
(i) প্রেফারেন্স/অগ্রাধিকার শেয়ার (Preference Share),
(ii) সাধারণ শেয়ার (Ordinary Share) এবং
(iii) বিলম্বিত দাবিযুক্ত শেয়ার (Deferred Share)।
অর্থায়ন কি? অর্থায়নের কার্যাবলী আলোচনা কর। |
নিম্নে এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিলাম।
প্রেফারেন্স শেয়ার
কোম্পানি লাভ করলে প্রথমেই এ ধরনের শেয়ার মালিকরা একটি নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ পেয়ে থাকে। কোম্পানি বিলুপ্ত হলেও প্রথমে এ প্রকার মালিকরা মূলধন ফেরত পায়। সুতরাং যে শেয়ারের ক্ষেত্রে মালিকরা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ এবং মূলধন ফেরত পায়, তাকে অগ্রাধিকার বা প্রেফারেন্স শেয়ার বলে। এ শেয়ারে ঝুঁকি অনেক কম থাকে। অগ্রাধিকার শেয়ার বিভিন্ন প্রকার হয়। যেমন-
(1) অতিরিক্ত মুনাফাযুক্ত অগ্রাধিকার শেয়ার (Participative preference Shares): এ ধরনের শেয়ারের মালিকগণ সাধারণ অগ্রাধিকার শেয়ারের মালিকদের ন্যায় নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ পাওয়ার পর সাধারণ শেয়ারের মালিকদের সাথে পুনরায় কোম্পানির উদ্বৃত্ত মুনাফার অংশও পেয়ে থাকে।
(ii) পরিশোধ্য অগ্রাধিকার শেয়ার (Redeemable preference Shares): এরূপ শেয়ারের মূল্য নির্দিষ্ট সময় শেষে মালিককে অবশ্যই ফেরত দেয়া হয়। এটি ঋণের পর্যায়ে পড়ে।
(iii) অসঞ্চয়ী অগ্রাধিকার শেয়ার (Non-cumulative Preference Shares): এ ধরনের শেয়ার মালিকরা, কোম্পানির মুনাফা না হওয়ার কারণে কোনো বছর লভ্যাংশ হতে বঞ্চিত হলে পরবর্তী বছরের মুনাফা হতে তাদের পাওনা পরিশোধ করা হয় না।
(vi) সঞ্চয়ী অগ্রাধিকার শেয়ার (Cumulative Preference Shares): এরূপ শেয়ার মালিকদের নির্দিষ্ট লভ্যাংশের দাবি কখনো শেষ হয় না। কোম্পানির মুনাফা যে বছর অর্জিত হবে, উক্ত বছরে তাদের পূর্বের দাবি বকেয়া লভ্যাংশ পরিশোধ করতে হয়।
(v) অপরিশোধ্য অগ্রাধিকার শেয়ার (Non-redeemable preference shares): এ ধরনের অগ্রাধিকার শেয়ারের মূলধন একটি নির্দিষ্ট সময় পর ফেরত দেওয়া হয় না।
সাধারণ শেয়ার
প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডারগণ কোম্পানির লভ্যাংশ পাওয়ার পর সাধারণ শেয়ারহোল্ডারগণ লভ্যাংশ পাবে। এ শেয়ারের লভ্যাংশ কমবেশি হতে পারে। একে ইক্যুইটি শেয়ারও বলা হয়। প্রেফারেন্স শেয়ারের লভ্যাংশ বিতরণ করার পর বা মূলধন ফেরত দেয়ার পর শেষে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বা মূলধন ফেরত দেয়া হয়। যদি অবশিষ্ট কিছু না থাকে তাহলে এরা কিছুই পায় না। তবে কোম্পানির মালিক, কারবার পরিচালনায় সাধারণ শেয়ার মালিকদের অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেশি থাকে। কোম্পানির আয় হতে দায় বাদ দেয়ার পর অর্জিত মুনাফা ও কোম্পানির সম্পত্তির উপর তাদেরই অধিকার থাকে এবং ভোটাধিকার অবাধ। এরূপ শেয়ারহোল্ডাররা সীমাবদ্ধ দায়- অধিকার ভোগ করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে পরিচালক নিযুক্ত হয়ে কারবার পরিচালনায়ও তারা অংশ নিতে পারে। কোম্পানি কখনো ক্ষতির সম্মুখীন হলে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির বিলুপ্তির জন্য আবেদন করতে পারে এবং কোম্পানির হিসাব বই পরীক্ষা করা এবং বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করতে পারে।
বিলম্বিত দাবিযুক্ত শেয়ার
প্রেফারেন্স শেয়ার ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বা মূলধন ফেরত পাওয়ার পর অবশিষ্ট যা থাকে, তাই এদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়। তাই একে বিলম্বিত দাবিযুক্ত শেয়ার বলে। কোম্পানি বিলুপ্ত হলেও সবার দাবি, লভ্যাংশ, মূলধন ফেরত দেয়ার পর এ মালিকদের মূলধন বা লভ্যাংশ ফেরত পাবে। আর অন্যদের দেয়ার পর অবশিষ্ট কিছু না পাওয়া গেলে এ মালিকরা কিছুই পায় না। কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা, পরিচালক এবং দায় গ্রাহকরা এধরনের শেয়ার বণ্টন করে নেয়।
খাদ্য নিরাপত্তা বলতে কি বুঝায়? খাদ্য নিরাপত্তার দিক কয়টি ও কি কি? |
শেয়ার আরও কয়েক প্রকার হতে পারে, যা নিম্নরূপ:
প্রাথমিক শেয়ার (Primary Share): কোনো কোম্পানি বাজারে প্রথম যে শেয়ার ছাড়ে, তাকে প্রাথমিক শেয়ার বলে। মাধ্যমিক শেয়ার (Secondary Share): প্রাথমিক শেয়ারের মালিকরা যখন তাদের শেয়ার বিক্রয় করে নগদ অর্থ লাভ করে, তখন ঐ শেয়ার মাধ্যমিক শেয়ারে রূপান্তরিত হয়।
রাইট শেয়ার (Right Share): কোম্পানি তার পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে চাইলে রাইট শেয়ার ইস্যু করতে পারে। বর্তমান শেয়ারহোল্ডারগণই এ ধরনের শেয়ার কিনতে পারে।
বোনাস শেয়ার (Bonus Share): কোম্পানির সঞ্চিত তহবিল থেকে শেয়ারহোল্ডারকে বিনামূল্যে যে শেয়ার দেওয়া হয় তাকে বোনাস শেয়ার বলে। কোম্পানি যদি তার মুনাফালব্ধ বণ্টনযোগ্য অর্থ ব্যবসার প্রসারে নিয়োগ করতে চায় সেক্ষেত্রে কোম্পানি ঐ অর্থের পরিবর্তে শেয়ারহোল্ডারদেরকে একই মূল্যের শেয়ার বরাদ্দ করে। এ অতিরিক্ত শেয়ারকে বোনাস শেয়ার বলে। এরূপ শেয়ারও কেবলমাত্র শেয়ারহোল্ডারগণই পায়, অন্য কেউ কিনতে পারে না।
অনাঙ্ক্ষিত মূল্য শেয়ার (No Per-value share): এ শেয়ারের পূর্ব মূল্য থাকে না। বছর শেষে কোম্পানির মোট সম্পদ হতে যাবতীয় দায় বাদ দিয়ে যে উদ্বৃত্ত থাকে, তাকে মূলধন বিবেচনা করে শেয়ারে বিভক্ত করা হয়।