সমন্বয় দাখিলা
আর্থিক বিবরণী তৈরি করার মাধ্যমে কারবারের সঠিক আর্থিক ফলাফল ও সঠিক আর্থিক অবস্থা নির্ণয়ের জন্য রেওয়ামিলের অন্তর্ভুক্ত খতিয়ানের উদ্বৃত্তগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট সময়কালের সাথে সম্পর্কিত অলিপিবদ্ধকৃত লেনদেনগুলোকে লিপিবদ্ধ করার জন্য, অন্য হিসাবকালের সাথে সম্পর্কিত লেনদেনগুলো বাদ দেয়ার জন্য এবং যে কোনো ধরনের ভুল সংশোধনের জন্য যে দাখিলা প্রণয়ন করা হয় তাকে সমন্বয় দাখিলা বা Adjusting Entry বলে।
উদাহরণস্বরূপ যে সময়কালের আর্থিক বিবরণী তৈরি করা হয় সে সময়কালের বকেয়া আয় ও ব্যয় যদি অলিপিবদ্ধ থাকে সেগুলোকে লিপিবদ্ধ করার জন্য এবং সংশ্লিষ্ট সময়কালের আয়-ব্যয়ের মধ্যে যদি পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ের কোনো আয়-ব্যয় অন্তর্ভুক্ত থাকে সেগুলোকে বাদ দেয়ার জন্য এবং লিপিবদ্ধকৃত লেনদেনের মধ্যে কোনো ধরনের ভুলত্রুটি থাকলে সেগুলোকে সংশোধনের জন্য সমন্বয় দাখিলা প্রণয়ন করা হয়। দাখিলা প্রণয়ন করা না হলে ব্যবসায়ের সঠিক ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
মূলধন জাতীয় আয় ও মুনাফা জাতীয় আয়ের পার্থক্য দেখাও |
সমন্বয় দাখিলার সুবিধা
একটি নির্দিষ্ট হিসাবকালের শেষে সমন্বয় দাখিলা প্রদান করা হয়। হিসাবের পূর্ণাঙ্গতা ও সঠিকতার জন্য সমন্বয় দাখিলার প্রয়োজন হয়। নিম্নে সমন্বয় দাখিলার সুবিধাগুলো উল্লেখ করা হলো:
১. সঠিক কারিবারি ফলাফল
সমন্বয় দাখিলার মাধ্যমে কারবারের নিখুঁত লাভ-ক্ষতি এবং পরিশুদ্ধ আর্থিক অবস্থা জ্ঞাত হওয়া যায়।
২. আয়-ব্যয়ের সংযোগ রক্ষা
এর সাহায্যে একটি নির্দিষ্ট হিসাবকালের প্রকৃত আয়ের বিপরীতে প্রকৃত ব্যয়ের সংযোগ রক্ষা করা সম্ভব হয়।
৩. বকেয়া ধারণার প্রয়োগ
সমন্বয় দাখিলার মাধ্যমে নগদ লেনদেনের সাথে বকেয়া লেনদেন এবং অগ্রিম লেনদেন সমন্বয় সাধনপূর্বক বকেয়া ধারণা বাস্তবায়ন করা যায়।
৪. মজুদের মূল্যায়ন
অব্যবহৃত সামগ্রীর মূল্যায়নপূর্বক হিসেবে প্রদর্শনের জন্য সমন্বয় দাখিলার প্রয়োজন হয়।
৫. অবচয় লিপিবদ্ধকরণ
সময় আবর্তনজনিত ক্ষয় যেমন- অবচয় লিপিবদ্ধ করার জন্য সমন্বয় দাখিলার প্রয়োজন হয়।
৬. বাদ পড়া লেনদেনের অন্তর্ভুক্তি
কিছু কিছু লেনদেন বিল না পাওয়ার জন্য বিশেষত উপযোগ বিল বা Utility Bill বিলম্বে পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট হিসাবকালে সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ নাও হতে পারে, সমন্বয় দাখিলার। মাধ্যমে এরূপ বাদ পড়ে যাওয়া লেনদেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৭. দায়-সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন
সম্পত্তি ও দায়ের সঠিক মূল্যায়ন এবং স্থিতি নির্ণয়ের জন্য সমন্বয় দাখিলার প্রয়োজন হয়।
সমন্বয় দাখিলার প্রকারভেদ
একটি ব্যবসায়ের আর্থিক বিবরণী তৈরির পূর্বে হিসাবকালের সাথে সম্পর্কিত অথবা হিসাবভুক্ত হয়নি এমনসব লেনদেন হিসাবভুক্ত করার জন্য সমন্বয় দাখিলার প্রয়োজন। অনেক ধরনের সমন্বয় দাখিলা থাকলেও প্রধান সমন্বয় দাখিলার সংখ্যা চারটি। যথা:
১। অগ্রিম খরচ
যে সময়কালের জন্য আর্থিক বিবরণী তৈরি করা হয় সে সময়কালের পরবর্তী সময়ের জন্য নগদ অর্থ প্রদান করা হলে তাকে অগ্রিম খরচ বলে। অগ্রিম খরচকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে হিসাবভুক্ত করা হয়। অগ্রিম খরচ একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য অগ্রিম বলে বিবেচিত হয় কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে উক্ত অগ্রিম খরচকে খরচ হিসেবে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট সময়কালের খরচরূপে হিসাবভুক্ত করার প্রয়োজন হয়। যদি মেয়াদ উত্তীর্ণ অগ্রিম খরচকে খরচ হিসেবে লিপিবদ্ধ করা না হয় তাহলে কারবারের খরচকে কম দেখানো হবে এবং ফলশ্রুতিতে কারবারের লাভের পরিমাণ বেশি প্রদর্শিত হবে এবং আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে মেয়াদ উত্তীর্ণ অগ্রিম খরচকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করায় সম্পদের পরিমাণ ও অতিরিক্ত দেখানো হবে। সুতরাং সঠিক লাভ-ক্ষতি ও আর্থিক অবস্থার পরিমাণ নির্ধারণের জন্য নিম্নোক্ত জাবেদা দাখিলা প্রণয়ন কর হয়।
২. অগ্রিম আয়/অনুপার্জিত আয়
যে সময়কালের জন্য আর্থিক বিবরণী তৈরি করা হয় সে সময়কালের পরবর্তী সময়ের জন্য নগদ অর্থ পাওয়া গেলে তাকে অগ্রিম আয় বলে। অগ্রিম আয়কে দায় হিসেবে বিবেচনা করে হিসাবভুক্ত করা হয়। অগ্রিম আয় একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য অগ্রিম বলে বিবেচিত হয় কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে উক্ত অগ্রিম আয়কে আয় হিসেবে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট সময়কালে আয় হিসেবে হিসাবভুক্ত করার প্রয়োজন হয়। যদি মেয়াদ উত্তীর্ণ অগ্রিম আয়কে আয় হিসেবে লিপিবদ্ধ করা না হয় তাহলে কারবারের আয়কে কম দেখানো হবে এবং ফলশ্রুতিতে কারবারে লাভের পরিমাণ কম দেখানো হবে এবং উদ্বৃত্তপত্রে মেয়াদ উত্তীর্ণ অগ্রিম আয়কে দায় হিসেবে বিবেচনা করায় দায়ের পরিমাণ ও অতিরিক্ত দেখানো হবে।
কার্যপত্র কি? কার্যপত্রের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি? |
৩. বকেয়া খরচ
বস্তু অথবা সেবা গ্রহণ করা হয়েছে কিন্তু বিপরীতে নগদ অর্থ পরিশোতে নগদ অর্থ পরিশোধিত হয়নি এমন অপরিশোধিত ব্যয়কে বকেয়া খরচ বলে। একটি নির্দিষ্ট সময়কালের সঠিক লাভ-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য উক্ত সময়কালের সকল মুনাফাজাতীয় খরচ/ব্যয়কে মুন্যাফাজাতীয় আয়ের বিপরীতে লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মুনাফাজাতীয় সকল মুনাফাজাতীয় সকল খরচ হিসাবভুক্ত করার ক্ষেত্রে বকেয়া খরচকে হিসাবভুক্ত করা খুবই জরুরি। অন্যথায় উক্ত সময়ের সঠিক খরচের পরিমাণ নির্ধারণ করা সঙ্কর হবে না এবং সঠিক লাভ-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করাও সম্ভব হবে না। বকেয়া খরচকে সমন্বয় করার” জন্য নিম্নোক্ত জাবেদা দাখিলা প্রণয়ন করা হয়।
৪. বকেয়া আয়
বস্তু অথবা সেবা প্রদান করা হয়েছে কিন্তু বিপরীতে নগদ অর্থ পাওয়া যায়নি এমন অনাদায়কৃত আয়কে বকেয়া আয় বা প্রাণ্য আয় বলে। একটি নির্দিষ্ট সময়কালের সঠিক লাভ-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য উক্ত সময়কালের সকল মুনাফাজাতীয় আয় লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মুনাফাজাতীয় সকল আয় হিসাবভুক্ত করার ক্ষেত্রে বকেয়া আয়কে হিসাবভুক্ত করা খুবই জরুরী। অন্যথায় উক্ত সময়ের সঠিক আয়ের নির্ধারণ করা সম্ভ হবে না এবং সঠিক লাভ-ক্ষতির পরিমাণ করাও সম্ভব হবে না।
উদাহরণ: অনাদায়ী বাড়া ১,০০০ টাকা।