Home » সমাজবিজ্ঞানের সাথে সমাজকর্মের সম্পর্ক আলোচনা কর।

সমাজবিজ্ঞানের সাথে সমাজকর্মের সম্পর্ক আলোচনা কর।

by Rezaul Karim
সমাজবিজ্ঞানের সাথে সমাজকর্মের সম্পর্ক আলোচনা কর

সমাজবিজ্ঞানের সাথে সমাজকর্মের সম্পর্ক – সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্মের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করার পূর্বে আমাদের অবশ্যই ‘সমাজবিজ্ঞান’ ও ‘সমাজকর্ম’- এ শব্দগুলো সম্বন্ধে মৌলিক ধারণা লাভ করা প্রয়োজন। সমাজের বিজ্ঞানই হলো সমাজবিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞান সমাজকে পূর্ণাঙ্গভাবে পর্যালোচনা করে এবং সমাজের ক্রমবিকাশের ধারা ও সমাজের রীতিনীতি, আচার ব্যবহার, অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বরূপ বর্ণনা করে।

সমাজকর্ম সমাজসেবার সুসংগঠিত ব্যবস্থাকে নিয়ে আলোচনা করে। সামাজিক মানুষের কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করাই এর মূল উদ্দেশ্য। সমাজকর্ম সামাজিক মানুষের জীবনের মান, স্বাস্থ্যের মান এবং ব্যক্তি ও সমষ্টির কর্মে/কল্যাণে ব্যাপৃত থাকে।

উপরিউক্ত ধারণা থেকে আমরা দেখতে পাই যে, সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম উভয়ই মানবসমাজ নিয়ে আলোচনা করে। সমাজবিজ্ঞান সমাজের কাঠামো, প্রথা, প্রতিষ্ঠান, সামাজিক পরিবর্তন, সংস্কৃতি ও মানবজাতিতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করে। সমাজকর্ম প্রধানত সমাজকর্ম এবং সামাজিক মানুষের মান উন্নয়নের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করে ।

আরও পড়ুন:   সমাজবিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক আলোচনা কর।

সম্পর্ক : সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম উভয়ই মানবসমাজ নিয়ে আলোচনা করে। উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সমাজবিজ্ঞানের সাথে সমাজকর্মের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক যা নিম্নে আলোকপাত করা হলো :

সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম পরস্পর নির্ভরশীল। কার্যাবলির দিক থেকে উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাই এ দু’টি বিজ্ঞানই একে অন্যের পরিপূরক।

গবেষণার ক্ষেত্রে উভয় বিজ্ঞানই একে অন্যের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ। সমাজবিজ্ঞান, তার গবেষণার মাধ্যমে সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যাকে চিহ্নিত করে। আর সমাজকল্যাণ সেই চিহ্নিত সমস্যাবলির সমাধানে তৎপর থাকে। সমাজকে পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে জানার জন্য উভয় বিজ্ঞানই কতকগুলো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে অগ্রসর হয়।

সমাজবিজ্ঞান সমাজের সামগ্রিক কাঠামো নিয়ে আলোচনা করে বিধায় সমাজকর্মকে সমাজের বাস্তব চিত্র অনুধাবনের জন্য সমাজবিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। প্রকৃতপক্ষে এ দু’টি সামাজিক বিজ্ঞানের সম্পর্ক এত নিবিড় যে, যখন মানব সমাজের কল্যাণ সাধিত হয়, তখন সমাজবিজ্ঞানীদের মানসিক প্রশান্তি ঘটে।

বস্তুত সমাজকর্ম সমাজের মানুষের মৌলমানবিক চাহিদাসহ অন্যান্য চাহিদা পূরণ করে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য সমাজবিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল হতে হয়।

উপর্যুক্ত সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এদের মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্যের সন্ধান মেলে :

১. সমাজবিজ্ঞান প্রধানত তাত্ত্বিক আলোচনা নিয়ে ব্যাপৃত থাকে। অন্যদিকে সমাজকর্ম প্রধানত ব্যবহারিক দিক নিয়ে বেশি আলোকপাত করে ।

২। সমাজবিজ্ঞানের পরিধি ব্যাপক। অন্যদিকে সমাজকর্মের পরিধি ক্ষুদ্রতর।

৩। মানবজীবনের সামগ্রিক আলোচনা এবং মানুষের পারস্পরিক সম্বন্ধহেতু মানবজীবনে তথা সমাজে যা কিছু ঘটে তার সবকিছুর আলোচনাই সমাজবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। অপরপক্ষে সমাজকর্মের লক্ষ্য হলো প্রতিটি মানবসন্তানের জন্য অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণ, স্বাচ্ছন্দ্য, মানসম্মত স্বাস্থ্য ও জীবনযাপনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা।

সামাজিক বিজ্ঞানের দু’টি পৃথক শাখা হিসেবে সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্মের মধ্যে রয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক। যদিও বিষয়বস্তু এবং উদ্দেশ্যের দিক থেকে এদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য পরিপূরক এবং সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যতিরেকে সমাজকর্মকে এবং সমাজকর্মের জ্ঞান ব্যতিরেকে সমাজবিজ্ঞানকে জানা সম্ভব নয় ।

Related Posts