Home » সামাজিক অসমতা কি | সামাজিক অসমতা কাকে বলে

সামাজিক অসমতা কি | সামাজিক অসমতা কাকে বলে

by Rezaul Karim
সামাজিক অসমতা কি, সামাজিক অসমতা কাকে বলে

সামাজিক অসমতা

মানবসমাজ বিভিন্ন আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানা বৈচিত্র্যময় বিষয়ের ভিত্তিতে বিভাজিত। মানবসমাজের এ বৈচিত্র্যপূর্ণ বিভাজন সমাজজীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়। সমাজস্থ কোন ব্যক্তি, পরিবার বা গোষ্ঠীর মধ্যে সাম্যের অভাবই সামাজিক অসমতা।

সাধারণ অর্থে অসমতা বলতে আমরা বুঝি আকার-আকৃতি, মাত্রা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সমতার অভাব। বিশেষকরে পদমর্যাদা, ক্ষমতা, সম্পদ, সুযোগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে অসম, অনাকাঙ্ক্ষিত পার্থক্যই হলো অসমতা।

সামাজিক স্তরবিন্যাস কি? সামাজিক স্তরবিন্যাসের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

Neil J. Smelser এর মতে, “Inequality can be defined as a condition in which people do not have equal access to social rewards. “৪৬ অর্থাৎ, অসমতা হচ্ছে সেই অবস্থা যেখানে মানুষ পুরস্কারপ্রাপ্তি ও মর্যাদার দিক থেকে অসম সুযোগ সুবিধার অধিকারী।

‘Dictionary of Sociology’ তে B. Bhushan বলেন, “Social inequality means the existence of unequal opportunities and rewards for different social positions or status within a group or society. “89 অর্থাৎ, কোন গোষ্ঠী বা সমাজের মধ্যে বিদ্যমান সামাজিক অবস্থান ও পদমর্যাদার জন্য যে অসম সুযোগ সুবিধা ও পুরস্কার থাকে তাকে সামাজিক অসমতা বলে।

‘Encyclopedia of Sociology’ তে Elmer বলেন, “সামাজিক অসমতা হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে সমাজের সদস্যবৃন্দ অসম পরিমাণ সম্পদ, খ্যাতি ও ক্ষমতার অধিকারী হয়।”

সামাজিক অসমতার প্রধান কারণ অর্থনৈতিক অবস্থা। এগুলো হলো- শ্রেণি (Class), মর্যাদা (Status),

ক্ষমতা (Power)।

বিশ শতকের শুরুতে Max Weber সমাজে অসমতার তিনটি প্রধান উপাদান চিহ্নিত করেছেন। যথা:

১. সম্পদের অসমতা (Inequality of Wealth),

২. মর্যাদার অসমতা (Inequality of Prestige),

৩. ক্ষমতার অসমতা (Inequality of Power),

সামাজিক স্তরবিন্যাস কত প্রকার | সামাজিক স্তরবিন্যাসের প্রকারভেদ

প্রথম উপাদানের সাথে যুক্ত রয়েছে সম্পত্তি অথবা বেতন, যার ভিত্তিতে Max Weber পাশ্চাত্যের আধুনিক সমাজের শ্রেণিকাঠামো বিশ্লেষণ করেছেন। দ্বিতীয়টির সাথে জীবনযাত্রার মান জড়িত, যার ভিত্তিতে মর্যাদা গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে। আর তৃতীয়টির সাথে যুক্ত রয়েছে রাজনীতি এবং একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে রাজনৈতিক দল। এভাবেই Max Weber এর ধারণায় শ্রেণি, মর্যাদা এবং গোষ্ঠী অসমতার তিনটি প্রধান ধরন বা উপাদান হিসেবে বিবেচ্য। আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজে তা বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়।

সামাজিক অসমতার ছক

যেসব উপাদান সামাজিক অসমতাকে নির্ধারণ করে অথবা যেসব উপাদানের ভিত্তিতে সামাজিক অসমতা তৈরি হয় সেসব উপাদানই হচ্ছে সামাজিক অসমতার ভিত্তি। সামাজিক অসমতার নির্ধারক বা উপাদানসমূহকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

১. জৈবিক বা প্রাকৃতিক উপাদান:

ক. মহিলা ও পুরুষভেদে প্রাকৃতিক অসমতা,

খ. বয়সভেদে সামাজিক অসমতা,

গ. বুদ্ধিবৃত্তিক অসমতা,

ঘ. নৃগোষ্ঠী ও সামাজিক অসমতা।

২. অজৈবিক বা সামাজিক উপাদান:

ক. সামাজিক শ্রমবিভাগ ও অসমতা,

খ. জাতিবর্ণভেদে সামাজিক অসমতা,

গ. শ্রেণিভেদে অসমতা,

ঘ. ক্ষমতাভেদে সামাজিক অসমতা,

ঙ. সামাজিক ভূমিকাভেদে সামাজিক অসমতা।

পরিশেষে বলা যায়, সমাজে যখন প্রতিযোগিতা ও দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে এবং একজন আর একজনকে বঞ্চিত করে তখন সামাজিক অসমতা সৃষ্টি হয়। এ অসমতার পরিপূর্ণ অবসান কখনোই সম্ভব নয়। তবে সমাজে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠিত হলে কিছুটা সাম্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

Related Posts