Home » সামাজিক গতিশীলতা কি | সামাজিক গতিশীলতা বলতে কি বুঝায়

সামাজিক গতিশীলতা কি | সামাজিক গতিশীলতা বলতে কি বুঝায়

by Rezaul Karim
সামাজিক গতিশীলতা কি, সামাজিক গতিশীলতা বলতে কি বুঝায়,

সামাজিক গতিশীলতা

আমরা যদি সামাজিক গতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ করি তাহলে দেখতে পাই যে, তাকে জানার একান্ত প্রয়োজন রয়েছে। সামাজিক গতিশীলতা প্রত্যক্ষভাবে সমাজতাত্ত্বিক মতবাদ ও সামাজিক রীতিনীতি প্রণয়নের উপর বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। কোন স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে সামাজিক কাঠামোর উপর গতিশীলতার প্রকার ও পরিমাণ বেশ প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব সমাজের সকল প্রতিষ্ঠানের উপর পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে শিল্পোন্নত সমাজে তার প্রভাব দেখা যায়। সমাজে বাস্তবতার দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, তা সকল পর্যায়ে ক্রিয়াশীল। তবে সমাজে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের সাথে তা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত রয়েছে।

যদিও আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমাজের সকল প্রতিষ্ঠানের উপর সামাজিক গতিশীলতার প্রভাব বিস্তার লক্ষ্য করে থাকি, তবুও তার বিশেষ কার্যকার বিষয় রয়েছে যার মাধ্যমে তা প্রতিফলিত হয়ে কাজ করছে।

সামাজিক অসমতা কি | সামাজিক অসমতা কাকে বলে

সামাজিক গতিশীলতা বলতে আমরা বুঝি যে, সমাজের প্রতিটি স্তরের বা কাঠামোর ক্রিয়াশীলতার স্থায়িত্ব ও তার গতি কোন পর্যায়ে সে বিষয়ে অধ্যয়ন করে। আরো স্পষ্টভাবে বলতে পারা যায় যে, সামাজিক গতিশীলতার উদ্দেশ্য হচ্ছে পেশাগত দিক থেকে সমাজে কেমন মর্যাদাসম্পন্ন ও তা সামগ্রিকভাবে কতটুকু মূল্যবান তা নির্ধারণ করা এবং ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা ও পেশাগত পদ দ্বারা সমাজে কেমন প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে তা অনুমান করা। তদুপরি সে প্রভাবে সামাজিক মানুষ কতটুকু ঝুঁকে পড়ে তা নির্ধারণ করাই সামাজিক গতিশীলতার প্রধান কাজ।

এছাড়া আমরা দেখতে পাই যে, সমাজে কতকগুলো স্তর রয়েছে। সে স্তরের মান নির্ণয় করতে হলে দেখতে হবে সামাজিক মানুষ সে স্তরে উপনীত হওয়ার জন্য কতটুকু আগ্রহশীল এবং সে আগ্রহের প্রতিটি দিকে ধাবিত হওয়ার মান নির্ণয়ই হলো সামাজিক গতিশীলতার মান নির্ণয়। এককথায়, সামাজিক স্তরগুলোর স্থিতিশীলতা নির্ণয় করার জন্য গতিশীলতা অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।

সামাজিক গতিশীলতার সংজ্ঞা

‘সামাজিক গতিশীলতা’ শব্দটি দ্বারা কার্যপ্রক্রিয়াকে বুঝায়। এ কার্যপ্রক্রিয়া দ্বারা ব্যক্তি সমাজের এক পদস্থান থেকে অন্য পদস্থানে পদার্পণ করে। পদস্থান বা পদমর্যাদা হচ্ছে বিশেষ স্তরের একটি মূল্য। যখন আমরা সামাজিক গতিশীলতাকে অধ্যয়ন করি তখন দেখতে পাই যে, সামাজিক পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যক্তি এক পদমর্যাদা থেকে অন্য একটি নির্দিষ্ট উচ্চপদে পদার্পণ করে বা ব্যক্তির কার্যপ্রণালির দ্বারা সে পদমর্যাদা হারায়। সমাজে ব্যক্তির এ ক্রিয়াকে ‘সামাজিক গতিশীলতা’ বলে।

সামাজিক গতিশীলতা ‘ইকোলজি’ অধ্যয়ন থেকে ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ হলো জীবনপ্রণালির সাথে পরিবেশের যে সম্বন্ধ রয়েছে তা অধ্যয়ন করা।

সরোকিন সামাজিক গতিশীলতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন যে, “ব্যক্তি বা দলের একটি সামাজিক মর্যাদা থেকে বা সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সীমা থেকে অন্য সীমারেখার পরিবর্তনের চক্রায়নকে সামাজিক গতিশীলতা বুঝায়। ব্যক্তি বা দলের এ সামাজিক পরিবর্তনের স্থিরতা ও দ্রুততাকেই সামাজিক গতিশীলতা বুঝায়।

F. R. Khan তাঁর ‘Principles of Sociology’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, “কাঠামোর আওতাধীনে অবস্থা ও মর্যাদার যে কোন পরিবর্তনকে সামাজিক গতিশীলতা বলে।”

‘International Encyclopedia of the Social Science’ অনুসারে, “Social mobility is the movement of individuals, families and groups from one social position to another.” অর্থাৎ, সামাজিক গতিশীলতা হলো ব্যক্তি, পরিবার এবং গোষ্ঠীর একটি সামাজিক অবস্থা থেকে অন্য সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন।

David Dressler এর মতে, “Social mobility is the movement of individuals from one status to another.” ” অর্থাৎ, সামাজিক গতিশীলতা হলো কোন ব্যক্তির একটি পদমর্যাদা থেকে অন্য মর্যাদায় রূপান্তরিত হওয়া।

সামাজিক স্তরবিন্যাস কত প্রকার | সামাজিক স্তরবিন্যাসের প্রকারভেদ

আমরা জানি যে, সমাজে পুরুষ ও স্ত্রীলোক যারা সামাজিক মর্যাদা নিয়ে সমাজে অধিষ্ঠিত রয়েছে তারা সকলেই চায় যে তাদের এ মর্যাদা পরবর্তী বংশধরদের মাঝে বজায় থাকুক এবং একটি ভালো পরিবার যেমন অভিজাত বা সম্ভ্রান্ত পরিবারের ঐতিহ্য, মূল্যবোধ তাদের ছেলেমেয়েদের মাঝে স্থায়ী হয়ে থাকে। এছাড়া আমরা দেখতে পাই যে, সকলেই ভালো ও মর্যাদাসম্পন্ন পরিবারে আত্মীয়-সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। কাজেই সকল শ্রেণিবিন্যাসিত জটিল সমাজে এর কার্যকারিতা দেখা যায়। সেদিক থেকে বিবেচনা করে দার্শনিক প্লেটো বলেছেন, অভিজাতসম্পন্ন পরিবারে সামাজিক গতিশীলতা একটা সীমারেখার মাঝে আবদ্ধ। কিন্তু এ মনোভাব পূর্ণভাবে সমাজে কার্যকর হতে পারে নি। এ কারণ খুঁজতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই যে, অনেক প্রকার সমাজ রয়েছে। কোন কোন সমাজের পরিবার তাদের মূল্যবোধের বাইরে সরে পড়ে না; যেমন- একই গোষ্ঠীর বাইরে বা একই অভিজাতসম্পন্ন পরিবার তাদের মতো অভিজাতসম্পন্ন পরিবার ব্যতীত বিবাহ ও আত্মীয়তা করে না। এটি বিশেষকরে হিন্দু সমাজে দেখা যায়। তাছাড়া আবার অনেক সমাজে তার ব্যতিক্রমও রয়েছে- যেখানে ব্যক্তি মর্যাদা ও সামাজিক পদ ছাড়াও এক গোষ্ঠী থেকে অন্য গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির ঐতিহ্যবাহী সামাজিক মর্যাদা ও সাংস্কৃতিক মূল্যায়নের চেয়ে পেশাগত মূল্যায়নের উপর নির্ভর করে।

Related Posts

3 comments

Comments are closed.