হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা
হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায়ের ভাষা বলা হয়। হিসাব সংক্রান্ত বিবরণীগুলো ব্যবসায়ের তথ্য প্রকাশ করে। এ তথ্য বা ভাষা যাতে সবার কাছে একই অর্থবোধক হয় সেজন্য হিসাবরক্ষকগণ কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম, পদ্ধতি বা প্রথার প্রচলন করেছেন। সেগুলো সর্বত্র, সর্বকাজে ও সর্বসম্মতিভাবে একই ধারণার জন্ম দেয়।
সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা হলো এমন কতকগুলো মৌলিক ও স্বতঃসিদ্ধ সত্য যা হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে সবার নিকট গ্রহণযোগ্য ও সত্য বলে প্রমাণিত। প্রকৃতপক্ষে সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা বলতে হিসাব সংক্রান্ত কতিপয় ধারণা ও তার প্রয়োগকে বোঝায়।
M.C Shukla & T.S. Grewal এ প্রসঙ্গে বলে, The term concept, convention and doctrine are sometimes used interchangeably, অর্থাৎ ‘হিসাববিজ্ঞানের নীতি, ধারণা ও প্রথাসমূহ অনেক সময় পরস্পরের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। তাদের মধ্যে পরিষ্কার কোনো পার্থক্য রেখা টানা দুষ্কর। বর্তমানকালে বিশেষভাবে ১৯৭৩ সাল থেকে হিসাববিজ্ঞান সংক্রান্ত কতিপয় ধারণা ও প্রথাসমূহকে পৃথকভাবে বিবেচনা না করে একসাথে হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা বলে গণ্য করা হয়।
একতরফা দাখিলা পদ্ধতি কাকে বলে, বৈশিষ্ট্য ও অসুবিধা সমূহ |
AICPA-এর মতে নীতি হলো, A guide to action a settled ground or basis of conduct or practice, অর্থাৎ, নীতি হলো কোনো কাজ পরিচালনা বা চর্চা করার নির্ধারিত ভিত্তি, কর্ম নির্ধারক।
সুতরাং বলা যায়, হিসাবরক্ষণ সংক্রান্ত কাজ পরিচালনা বা সম্পাদনে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য সাধারণ নিয়ম বা নির্ধারিত ভিত্তিই হলো হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা ।
হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালার বৈশিষ্ট্য
কোনো নীতিমালা আদর্শ হলে তার কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালার বৈশিষ্ট্যাবলি নিচে আলোচনা করা হলো:
১. সর্বজনগ্রাহ্যতা
সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য এবং সকল ক্ষেত্রে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।
২. ব্যাপক আওতা
সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা বলতে রীতি, পদ্ধতি, ধারণা স্বতঃসিদ্ধ অনুশাসন প্রভৃতিকে বোঝানো হয়ে থাকে। ফলে এর আওতা ব্যাপক।
৩. নীতিমালার ভিত্তি
হিসাববিজ্ঞানীদের পেশাগত কার্যাভ্যাস, রাষ্ট্রীয় আইন এবং আদালতের রায় দ্বারা হিসাববিজ্ঞান নীতিগুলো সর্বস্তরে গৃহীত হয়।
৪. প্রয়োগ যোগ্যতা
এ নীতি অনুসরণ করে কারবার প্রতিষ্ঠানের লাভ লোকসান বিবরণী, উদ্বৃত্তপত্র এবং প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয় বলে ব্যবহারকারীগণ তা সাধারণভাবে ব্যবহার করে থাকেন’।
৫. প্রমাণ সাপেক্ষ
প্রতিষ্ঠিত হিসাব নীতিসমূহ কোনো ব্যক্তির খেয়াল খুশি বা আনুকূল্যকে প্রশ্রয় দিতে পারে না। কারবারি লেনদেনের রেকর্ডসমূহ এবং হিসাব বিবরণীসমূহ নিরপেক্ষ এবং যথার্থ তথ্য প্রমাণ কর্তৃক সমর্থিত হতে পারে।
সমন্বয় দাখিলা ও সমাপনী দাখিলার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর |
৬. প্রাসঙ্গিকতা
হিসাববিজ্ঞানের নীতিগুলো সর্বাবস্থায় প্রাসঙ্গিক এবং তথ্যবহুল হতে হবে। সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালায় অপ্রাসঙ্গিক কোনো কিছুর উপস্থিতি নেই।
৭. আন্তর্জাতিকতা
সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি রয়েছে যা এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পেশাগত বিশদ চর্চা, উপযোগিতা ও প্রণালিসমূহ হতেই সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালার সৃষ্টি। এ নীতি জানা থাকলে হিসাবরক্ষণ কাজের অন্তর্নিহিত যুক্তিগুলো জানা যায়।