প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, সমাজবিজ্ঞানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মতবাদ হলো অগাস্ট কোঁৎ এর দৃষ্টবাদ । এই মতবাদের প্রবক্তা হলেন অগাস্ট কোঁৎ। আজকে আমরা অগাস্ট কোঁৎ এর দৃষ্টবাদ সম্পর্কে জেনে নেবো।
আরও পড়ুন:
অগাস্ট কোঁৎ এর পরিচয় এবং তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ সমূহ
অগাস্ট কোঁৎ কে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয় কেন?
অগাস্ট কোঁৎ এর দৃষ্টবাদ বর্ণনা
অগাস্ট কোঁৎ দৃষ্টবাদের ব্যাখ্যায় বলেন, পৃথিবীটা বহুবিধ অপরিবর্তনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম দ্বারা শৃঙ্খলার কাঠামোয় বিন্যস্ত। মানবসমাজকে পরিবর্তনের অপরিবর্তনীয় সূত্রটি আবিষ্কার করে কিভাবে সমাজকে সুসংগঠিত এবং স্থিতিশীল করে প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা ছিল দৃষ্টবাদের মৌল উদ্দেশ্য। আর এ লক্ষ্য অর্জন করতে জ্ঞানের যে শাখার প্রয়োজন, তা হলো সমাজবিজ্ঞান। তিনি বলেন, সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে এমন একটি জ্ঞানের শাখা, যার মাধ্যমে যৌক্তিক ধারণা ও বৌদ্ধিক চিন্তাকে কেন্দ্র করে মানবজীবন তথা মানবসমাজের অগ্রগতি সাধনের দিকনির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায়।
অগাস্ট কোঁৎ তাঁর যুগ পর্যন্ত জ্ঞানের সমগ্র বিকাশের একটা ইতিহাস তৈরির চেষ্টা করেন। এ প্রচেষ্টায় ইতিহাসের যে ব্যাখ্যা তিনি উপস্থাপন করেন সে ব্যাখ্যাকে দৃষ্টবাদ বলে আখ্যায়িত করেন। অগাস্ট কোৎ মনে করেন যে, দৃষ্টবাদ বিজ্ঞানসম্মত। কারণ পৃথিবী এক অমোঘ অপরিবর্তিত প্রাকৃতিক নিয়ম-শৃঙ্খলার দ্বারা পরিচালিত এবং এসব নিয়মকে কেবল বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা সম্ভব। এভাবেই দৃষ্টবাদ প্রয়োজনীয় জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত।
অগাস্ট কোঁৎ এর দৃষ্টবাদ কেবল সেসব ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ যেসব ঘটনায় পরিণাম দর্শন সম্ভব। কোঁতের দৃষ্টবাদের ধারণায় বিজ্ঞানসম্মত প্রায়োগিক ও নৈতিক দিক যেমনটি রয়েছে ঠিক তেমনটি রয়েছে বৃদ্ধিবৃত্তি সংক্রান্ত মানবসমাজের উন্নতি সাধনার দিকনির্দেশনা। সেজন্য তিনি মানুষ ও সমাজ সম্পর্কে ধর্মতাত্ত্বিক ও অধিবিদ্যাসংক্রান্ত ধ্যান-ধারণা বর্জন করেছিলেন। তিনি বলেন, সমাজবিজ্ঞানে অবৈজ্ঞানিক যুক্তি, ধ্যান-ধারণা ও সিদ্ধান্তের স্থান ও গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাঁর মতে, বিপ্লব বা বিদ্রোহ চরম সংকটকালীন সমাজের পুনর্গঠনে মোটেই সাহায্য করে না বা মানবমনের ক্ষোভ প্রশমিত করার সমাধান দেয় না। সমাজ পুনর্গঠন সম্ভব শুধু বিভিন্ন বিজ্ঞানের সমন্বয় এবং সংশ্লেষণের মাধ্যমে এবং দৃষ্টবাদী রাজনীতি সৃষ্টির মাধ্যমে। যদিও কোঁৎ এর এ দৃষ্টবাদকে অনেকে সমালোচনা করে বলেছেন, তিনি দৃষ্টবাদ এর ধারণায় শাশ্বত সত্যকে আপেক্ষিক সত্যের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। তা সত্ত্বেও কোঁতের দৃষ্টবাদকে সমাজ পুনর্গঠনের হাতিয়ার হিসেবে মনে করা যায়। কারণ সমাজ পুনর্গঠন করার নৈতিক দৃষ্টিকোণ ‘অন্যের জন্য জীবন’ এ মূল বক্তব্য তুলে ধরে। তিনি দৃষ্টবাদী বিজ্ঞানের বিশেষ করে সামাজিক বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক এবং প্রবক্তা ছিলেন। এই বিজ্ঞানকেই তিনি সমাজবিজ্ঞান নামকরণ করেন।
অতএব আমরা অগাস্ট কোঁৎ এর দৃষ্টবাদ সম্পর্কে জেনে নিলাম। এরকম আপনার প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক শিক্ষার টপিক সম্পর্কে জানতে অবশ্যই নিয়মিত আমাদের ব্লগ পড়ুন। এছাড়া ফেসবুকেও আমাদের ফলো করে রাখুন।