অন্তদর্শন পদ্ধতি
মনোবিজ্ঞান অনুধ্যানের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে অন্তদর্শন একটি অতি পুরাতন পদ্ধতি। এ পদ্ধতি মনোবিজ্ঞানের নিজস্ব পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। ঊনবিংশ শতাব্দীতে মনোবিজ্ঞানের প্রধান পদ্ধতি হিসেবে অন্তদর্শন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। বিশেষ করে জার্মান মনোবিজ্ঞানী উইলহেম উন্ডের গবেষণাগারেও প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তদর্শন পদ্ধতির সাহায্যে পরীক্ষণ পরিচালনা হতো। বিজ্ঞান হিসেবে মনোবিজ্ঞান অগ্রগতির সাথে সাথে এ-পদ্ধতির ব্যবহার কমতে থাকে। বর্তমানে এ পদ্ধতির ব্যবহার নেই বললেই চলে।
বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য সমূহ মনোবিজ্ঞানের আলোকে বর্ণনা কর |
অন্তদর্শন পদ্ধতিকে ব্যক্তিনিষ্ঠ পদ্ধতিও বলা হয়। অন্তদর্শনের (Introspection) সাহায্যে প্রত্যেক মানুষ তার নিজের মানসিক জগতে কী ঘটছে তা জানতে পারে। অন্তদর্শন পদ্ধতিতে ব্যক্তি তার মানসিক প্রক্রিয়াকে পর্যবেক্ষণ করে নিরপেক্ষ ভাষায় ব্যক্ত করে। পরীক্ষণ-পাত্র নিজে তার মানসিক ক্রিয়া সম্বন্ধে বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। যেমন, কোনো ব্যক্তি তার নিজের মধ্যে আবেগের বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণ করতে পারে। আবেগ কীভাবে সৃষ্টি হলো, আবেগের ফলে শারীরিক পরিবর্তন কীভাবে সংঘটিত হয় এবং কখন ভারসাম্য ফিরে এলো ইত্যাদি বিষয় ব্যক্তি নিজের মধ্যে প্রত্যক্ষ করে মৌখিকভাবে প্রকাশ করতে পারে। এজন্যে অন্তর্দর্শনকে ভাব প্রকাশের একটি মৌখিক বিবরণ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
অন্তদর্শন পদ্ধতির সুবিধা
১. অন্তদর্শন মনোবিজ্ঞানের একটি নিজস্ব পদ্ধতি। বিজ্ঞানের অন্য কোনো শাখায় এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় না। ব্যক্তির মানসিক ক্রিয়া, প্রক্রিয়া ও অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে অন্তদর্শনের সাহায্যে অতি সহজে তথ্য পাওয়া যায়, যা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাওয়া যায় না।
২ . ব্যক্তিমনের বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে প্রত্যক্ষভাবে জানার এবং সেগুলোর প্রকৃতি ও গতি নির্ধারণ করার উপায় হলো অন্তদর্শন।
৩. অন্তদর্শন পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনো যন্ত্রপাতি, গবেষণাগার ও অর্থের প্রয়োজন হয় না।
৪. এ পদ্ধতির সাহায্যে আমরা অন্যান্য ব্যক্তির বাহ্যিক আচরণের মূলীভূত অবস্থা ও প্রক্রিয়া সম্বন্ধে অনুমান করতে পারি।
৫. অন্তদর্শন পদ্ধতিতে আমরা আমাদের মানসিক ক্রিয়াকর্মের সঠিক দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকি।
অন্তদর্শন পদ্ধতির অসুবিধা
১. অন্তদর্শন পদ্ধতির সাহায্যে আমরা যে তথ্য পেয়ে থাকি তা বহুলাংশে কাল্পনিক ও অনির্ভরযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
২. অন্তদর্শন পদ্ধতি শিশুদের ওপর এবং মানসিক প্রতিবন্ধীদের ওপর প্রয়োগ করা যায় না। কারণ তারা মানসিক ক্রিয়ার ব্যাখ্যা দানে অক্ষম। কেবল পূর্ণবয়স্ক ও স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে অন্তদর্শন সম্ভব।
৩. মানসিক প্রক্রিয়া মূলত ক্ষণস্থায়ী। এমন অনেক মানসিক প্রক্রিয়া আছে যা অবগত হওয়ার পূর্বেই তিরোহিত হয়ে যায়। সেইসব ক্ষেত্রে মানসিক প্রক্রিয়ার স্বরূপ জানা যায় না।
৪. অন্তদর্শন পর্যবেক্ষকের নিজস্ব বিষয় হওয়াতে নিজ সংবেদন ব্যতীত অন্য কোনো সংবেদন বা প্রতিরূপ আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি না।
মনোবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর |
৫. এ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্যসমূহ বিজ্ঞানসম্মত নয়। কারণ অন্তদর্শন একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক পদ্ধতি।
৬. কোঁৎ (Comte)-এর মতে, অন্তদর্শন একেবারেই সম্ভব নয়, কারণ অন্তদর্শনের ক্ষেত্রে একই মন একাধারে দ্রষ্টা ও দ্রষ্টব্য। একই মনের পক্ষে নিজেকে দুভাগে বিভক্ত করা যায় না।
৭. অন্তদর্শন পদ্ধতিতে আমরা যে মানসিক প্রক্রিয়াগুলো পর্যবেক্ষণ করে থাকি, সেগুলো প্রায়ই স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট হয় না। তাছাড়া যে বিশেষ মানসিক প্রক্রিয়াটি আমরা জানতে চাই, তার ওপর দৃষ্টি নিবন্ধ করাও অত্যন্ত কঠিন কাজ। এ জন্য অন্তদর্শন পদ্ধতি সহজসাধ্য পদ্ধতি নয়।