আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Bureaucracy)
Max Weber আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন এবং একে সুসংবদ্ধ ও পদ্ধতিভিত্তিক বিশ্লেষণ করে এর কতকগুলো সর্বজনীন বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করেছেন যা নিম্নরূপ:
১. কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা
আমলাতন্ত্রের সদস্যগণ নিজ নিজ দায়িত্ব অনুযায়ী কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা প্রয়োগ করার অধিকার লাভ করেন এবং তা প্রশাসনিক বিধি অনুসারেই নির্ধারিত হয়।
২. দায়িত্ব বণ্টন
আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলোকে অফিসের দৈনন্দিন কর্তৃব্যরূপে নির্দিষ্ট করে বণ্টন করে দেয়া হয়। আর প্রতিটি কাজই আইনের বিধিবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
আরও দেখুন: আমলাতন্ত্র কি | আমলাতন্ত্র কাকে বলে | আমলাতন্ত্রের সংজ্ঞা দাও
৩. নিয়োগ ব্যবস্থা
আমলাতান্ত্রিক সংগঠন সুনির্দিষ্ট নিয়োগ নীতির দ্বারা পরিচালিত হয়। এতে কর্মচারীদের নির্বাচন করা হয় না, তাদের নিয়োগ করা হয়। অর্থাৎ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মচারীদের নিয়োগ করা হয় এবং বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
৪. পদসোপান
পদসোপান আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। পদ ও মর্যাদা অনুসারে এ শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও পদমর্যাদার পরিপ্রেক্ষিতে এ পদসোপান নির্ধারিত হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ সবসময় বর্তমান থাকে। তাই কেউ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বা খেয়ালখুশিমতো কাজ করতে পারে না।
৫. পদোন্নতি
আমলাতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো পদোন্নতি। পদোন্নতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উপর নির্ভর করলেও তা মূলত Seniority এবং Merit এর ভিত্তিতে প্রদান করা হয়।
৬. লিখিত দলিল
আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে প্রশাসনিক কার্যক্রম, সিদ্ধান্ত, আদেশ-নির্দেশ এবং নিয়মকানুন সবই লিখিতভাবে উপস্থাপিত ও রেকর্ড করা হয়।
৭. বেতন, ভাতা ও পেনশনের ব্যবস্থা
আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে কর্মচারীবৃন্দ অর্থের মাধ্যমে নির্দিষ্ট বেতন লাভ করে থাকেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা পেনশন ভোগ করেন। কর্মচারীদের বেতনের স্কেল প্রধানত পদক্রম অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস করা হয় এবং উক্ত পদের দায়িত্ব এবং কর্মচারীদের সামাজিক পদমর্যাদার উপরও তাদের বেতন ও ভাতা নির্ভর করে।
৮. শ্রমবিভাগ
আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে Division of labour বা শ্রমবিভাগ বিদ্যমান।
৯. সুষ্ঠু প্রশিক্ষণ
আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে আমলাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দক্ষ ও সুষ্ঠু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
১০. নৈর্ব্যক্তিকতা
আমলাতন্ত্রের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো – নৈর্ব্যক্তিকতা। অর্থাৎ আমলারা ব্যক্তিগত সত্তা ভুলে গিয়ে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন।
Max Weber উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহের কারণে আমলাতান্ত্রিক সংগঠনকে Rational Organization বা যৌক্তিক সংগঠন বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং এ ব্যবস্থার কল্যাণকর দিকসমূহকে তুলে ধরে সরকারি ও বেসরকারি সকল পর্যায়ে এ সংগঠনের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে জোরালো মতামত ব্যক্ত করেন।
আরও দেখুন: কর্তৃত্ব কি | কর্তৃত্ব কাকে বলে | কর্তৃত্বের সংজ্ঞা দাও
সমালোচনা বা ত্রুটিসমূহ
Max Weber এর আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে নিম্নোক্ত ত্রুটিসমূহ পরিলক্ষিত হয়-
১. লাল ফিতার দৌরাত্ম্য,
২. স্বেচ্ছাচারিতা,
৩. ক্ষমতার প্রতি তীব্র লালসা,
৪. সংহতির অভাব,
৫. মানবিক অনুভূতির অভাব,
৬. দীর্ঘসূত্রিতা,
৭. বিভাগীয় সংকীর্ণতা,
৮. জনস্বার্থের প্রতি উদাসীনতা
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, উল্লিখিত দোষত্রুটি থাকা সত্ত্বেও Max Weber এর আমলাতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। রাষ্ট্রকে সঠিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালনার জন্য এটি কার্যকরীভাবে প্রযোজ্য। বস্তুত আমলাতন্ত্র ছাড়া সরকারি বা বেসরকারি কোন সংগঠনই চলতে পারে না।
অতএব, উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা ম্যাক্স ওয়েবারের আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারলেন।