ইতিহাসের উৎস
মানুষের অতীত কার্যক্রমের সবই ইতিহাস নয়। তাছাড়া মানুষের অতীত কার্যক্রম সংক্রান্ত বিবরণ হলেই তা ইতিহাস হবে এমন কথাও সম্পূর্ণ সঠিক নয়। তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে প্রকৃতপক্ষে ইতিহাস কী? ইতিহাসের উৎস কি? মানুষের অতীত কার্যক্রমের যে অংশটুকু যথাযথ উৎসের মাধ্যমে ঐতিহাসিকের বিচার- বিশ্লেষণের আওতাভুক্ত হয় এবং ঐতিহাসিক সুসংবদ্ধনীতির আলোকে ধারাবাহিক ও সময়ানুক্রমিকভাবে যা লিপিবদ্ধ করেন তাহল প্রকৃত ইতিহাস।
আবার এমনও ভাবা সঠিক নয় যে, অতীত সম্পর্কিত কোন ঐতিহাসিকের লিখিত বিবরণই ইতিহাস। উৎস ভিত্তিকতা, ঐতিহাসিকের বিচার-বিশ্লেষণ, সুসংবদ্ধনীতি, ধারাবাহিকতা, সময়ানুক্রমিকতা ও লিখিত বিবরণমূলক নীতি ছাড়া কোন ইতিহাস যথাযথ হতে পারে না।
ইতিহাস উৎস ভিত্তিক। উৎস ছাড়া ইতিহাস রচনা করা তো দূরের কথা কল্পনাও করা যায় না। ঐতিহাসিক যেখান থেকে বা যে বস্তু হতে ইতিহাস রচনার উপকরণ পেয়ে থাকেন তা হল ইতিহাসের উৎস (Source)। অনেক ক্ষেত্রে উৎস (Source), উপাদান (Element) ও তথ্যকে (Information ) অনেকেই একই অর্থে ব্যবহার করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে উৎস ও উপাদান বা তথ্যের মধ্যে পার্থক্য আছে। সাধারণত উৎস (Source) বলতে উৎপত্তি স্থল, সূচনাস্থল, যেখানে বা যাতে ইতিহাসের তথ্য বা উপাদান নিহিত আছে তাকে বুঝায়। যেমন- ঝরণা ও নদীর উৎস পাহাড়। অর্থাৎ পাহাড় থেকে যে ঝরণাধারা নেমে এসেছে তার সমন্বয়ে নদীর সৃষ্টি হয়েছে। এখানে নদীর উৎস কিন্তু ঝরণা বা পানি নয়। আর ইতিহাসের উৎস হল যেখান থেকে ইতিহাস রচনার উপাদান বা তথ্য পাওয়া যায় সেটা।
আরও পড়ুন:
ইতিহাস শব্দের উৎপত্তি এবং ইতিহাসের সংজ্ঞা দাও
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ‘খালিমপুর তাম্রশাসন’ ইতিহাসের একটি উৎস। এটা হল প্রাচীন বাংলায় পালবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল এর উত্থান সম্পর্কিত উৎস। খালিমপুর তাম্রশাসনে গোপাল সম্পর্কে যে বিবরণ আছে সে বিবরণ হল উপাদান বা তথ্য। যেমন- বলা হয় খালিমপুর তাম্রশাসন নামক উৎস হতে আমরা কী উপাদান বা কী তথ্য পেয়ে থাকি। তাহলে দেখা যায়, উৎসের মধ্যে যে বিবরণ আছে তা হল তথ্য। ঐতিহাসিকগণ উৎস থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান বা তথ্য সংগ্রহ করে ইতিহাস রচনা করে থাকেন। পূর্বে বলা হয়েছে ঝরণা বা পানি যেমন নদীর উৎস নয়, তেমনি তথ্যও ইতিহাসের উৎস নয়। এমনকি “তথ্য আবার ইতিহাসও নয়। তথ্য হল ইতিহাসের উপকরণ- যার আলোকে ঐতিহাসিকগণ ইতিহাস রচনা করে থাকেন। আরো মনে রাখা দরকার যে, ইতিহাসের উৎস সব সময়ই বস্তুতান্ত্রিক (Abstractive) যাকে স্পর্শ করা যায়, ধরা যায়, যার ওজন আছে এবং যা কিছুটা স্থান দখল করে থাকে। কিন্তু তথ্য যদি কোন বস্তুর আশ্রয় না নেয় তাহলে তা তাত্ত্বিকরূপেই থাকে। তথ্য সম্পূর্ণ অবস্তুতান্ত্রিক বিষয়। তথ্য যখন পাথর, মৃত্তিকা খণ্ড, পর্বতগাত্র, তাম্রফলক, হাড়, চামড়া, কাগজ অথবা কোন পুস্তকে লিপিবদ্ধ থাকে তখন তথ্যসহ ঐ বস্তুটি ইতিহাসের উৎস বলে গণ্য হয়।
উৎসের শ্রেণীবিভাগ (Classification of Sources)
ইতিহাসের উৎস সমূহকে প্রধানত দু’ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা : ১. মূল উৎস বা মৌলিক উৎস (Original sources or primary sources or fundamental sources) ও ২. দ্বৈতয়িক উৎস (Secondary sources) বা দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎস (Sources of second phase)।
১. মূল উৎস (Original Sources)
সাধারণত যে সকল উৎস থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করে ঐতিহাসিকগণ ইতিহাস রচনা করে থাকেন এবং যে সকল উৎস অন্যকোন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে উৎসে পরিণত হয়নি সেগুলোকে ইতিহাসের মূল উৎস (Original sources) বলে গণ্য করা হয়। মূল উৎসের মধ্যে ‘রোটাসগড় গিরিগাত্র’ যেখান থেকে প্রাচীন বাংলার রাজা শশাঙ্ক সম্পর্কে জানা যায়, ‘রোজেটা পাথর’ যেখান থেকে মিসরীয় সভ্যতা ও হায়ারোগ্লিফিক লিপি সম্পর্কে জানা যায় এবং মিনহাজউদ্দিন সিরাজ কর্তৃক রচিত ‘তবকাত-ই-নাসিরী’ যেখানে থেকে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ-বিন-বখতিয়ার খলজীর বঙ্গ বিজয় সম্পর্কে জানা যায়- প্রভৃতির নাম উল্লেখ করা যায়।
২. দ্বৈতয়িক উৎস (Secondary Sources)
দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎসসমূহকে (Secondary sources) এক প্রকারের ইতিহাস বলেও গণ্য করা হয়। মূল উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে যে সকল ঐতিহাসিক গ্রন্থ (Historical books) রচনা করা হয় এবং প্রয়োজন অনুসারে অন্য যেকোন গ্রন্থ ও উৎস হতে যে সকল ইতিহাস রচনা করা হয় সেগুলোকে দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎস বলে গণ্য করা হয়। সহজভাবে বলা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ের তথা মূল উৎসগুলো ব্যতীত ইতিহাস সংক্রান্ত সকল গ্রন্থ ও অনুরূপ সকল উৎসই ইতিহাসের Secondary source বলে গণ্য হয়। যেমন- এ হাতহাস পরিচিতি (INTRODUCTION TO HISTORY) গ্রন্থটি ইতিহাসের Secondary source হিসেবে গণ্য হবে।
মূল উৎসসমূহের শ্রেণীবিভাগ (Classification of Original Sources)
বাংলা ও ভারতবর্ষের ইতিহাসে মূল উৎসসমূহকে নিম্নোক্ত কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করা যায়।
১. ধর্মীয়শাস্ত্র ও সাহিত্য।
২. প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
৩. ইতিহাস গ্রন্থ ও ঐতিহাসিক সাহিত্য।
৪. বৈদেশিক বৃত্তান্ত ও
৫. সরকারি দলিলপত্র প্রভৃতি ।
১. ধর্মীয়শাস্ত্র ও সাহিত্য
ধর্ম মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সেজন্য ধর্মীয়শাস্ত্র হতে ইতিহাসের অনেক তথ্য পাওয়া যায়। যেমন- আর্যদের সাহিত্যিক গ্রন্থ বেদ। আর্য ঋষিগণ এটি রচনা করেন। অবশ্য হিন্দু সমাজ বেদকে ধর্মশাস্ত্ররূপে গ্রহণ করে থাকে। যাহোক বেদ এর বিভিন্ন খণ্ড হতে আর্যদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক দিক সম্পর্কে জানা যায়। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক, নিকায় প্রভৃতি হতে প্রাচীন ভারতের সামাজিক অবস্থা জানা যায়। একইভাবে জৈন ধর্মগ্রন্থ ‘ভগবতী’, ‘সূত্র’ প্রভৃতিও ইতিহাসে প্রাথমিক উৎস বলে গণ্য হয়। তদুপরি চাণক্য বা কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র হতে প্রাচীন ভারত বিশেষ করে মৌর্যশাসন সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
২. প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
ইতিহাসের মূল উৎসগুলোর মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোকে প্রধানত চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত করে আলোচনা করা যায়। যেমন- ক. জীবাশ্ম, খ. লিপি, গ. মুদ্রা ও ঘ. সৌধ ও স্মৃতিস্তম্ভ।
ক. জীবাশ্ম : প্রত্নতাত্ত্বিক উৎসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন হল জীবাশ্ম। হাজার হাজার বছর মাটির নিচে পড়ে থাকা মানুষ, অন্য কোন প্রাণী । উদ্ভিদের অংশবিশেষকে জীবাশ্ম বলা হয়। জীবাশ্মের ওপর গবেষণা করে জুমাগনন (ক্রুম্যানিয়ন) মানব, নিয়ান্ডার্থাল মানব, পিকিং মানব সম্পর্কে জানা সম্ভবপর হয়েছে। তাছাড়া পুরোপলীয় ও নবোপলীয় অর্থাৎ প্রাগৈতিহাসিক যুগের ইতিহাস জানার জন্য জীবাশ্ম ইতিহাসের মূল উৎস হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
খ. লিপি : লিপি বলতে যেকোন সময়ের যেকোন প্রকার লিখিত উৎসকে বুঝানো হয়ে থাকে। রোটাসগড় গিরিগাত্রের শ্রীমহাসামন্ত শশাঙ্ক নামক লিপি, খালিমপুর তাম্রশাসনে গোপালের রাজপদ দখল করা সংক্রান্ত লিপি, সম্রাট অশোকের শিলালিপি, সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ স্তম্ভলিপি, বাঘাউরা লিপি, ভাগলপুর লিপি, ১ম মহীপালের সারনাথ লিপি এবং মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের বিভিন্ন প্রকার নামফলকের লিপিসমূহকে ইতিহাসের প্রত্নতাত্ত্বিক মূল উৎস বলে গণ্য করা হয়।
গ. মুদ্রা : ইতিহাসের মূল উৎসগুলোর মধ্যকার একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল মুদ্রা। মুদ্রা হতে শক, কুষাণ ও গুপ্তদের শাসনসহ ইতিহাসের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানা যায়। মধ্যযুগে বাংলা ও ভারতের মুসলিম শাসকগণ স্বাধীনতা ঘোষণার প্রমাণক হিসেবে মুদ্রা জারি ও খোৎবা পাঠ করতেন । মুদ্রাতে টাকশালের নাম, সন ও শাসকের নাম লেখা থাকত বিধায় মুদ্রা হতে অনেক ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া সহজতর হয়।
ঘ. সৌধ ও স্মৃতিস্তম্ভ : পুরাতন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ ও বিভিন্ন সমাধিসৌধ ইতিহাসের মূল উৎসগুলোর মধ্যে অন্যতম। কোন সভ্যতার স্থাপত্যকর্মের উৎকর্ষতা ও বিশালতা দেখে ঐ সভ্যতার উৎকর্ষতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। চীনের মহাপ্রাচীর, বঙ্গের মহাপ্রাচীর (বগুড়া মহাস্থানগড়ের বা মহাস্থান দূগের প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রাচীরের উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট ও চওড়া প্রায় ৮ ফুট), ব্যাবিলনের শূন্যোদ্যান, আমার তাজমহল নামক স্থাপত্য কর্মগুলো মানুষের ক্ষমতার বিশালতা ও অতি দক্ষ স্থাপত্যশৈলীকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
৩. ইতিহাস গ্রন্থ ও ঐতিহাসিক সাহিত্য
ঐতিহাসিক সাহিত্য ও ইতিহাস গ্রন্থ ইতিহাসের মূল উৎসগুলোর মধ্যে বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। পুরাণ একটি বেশ উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক সাহিত্য। মোট আঠারোটি পুরাণের অনেকটা হতে হস্তিনাপুরের কৌরবরাজ সম্পর্কে জানা যায়। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ভি. এ. স্মিথের মতে, মৌর্য ও শিশুনাগ বংশের ইতিহাস জানার জন্য বিষ্ণু পুরাণ ও মৎস্য পুরাণ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। রামায়ণ ও মহাভারত কল্পিত হলেও এ দুটোকে প্রাচীন ভারতের জীবনযাত্রার উৎসরূপে গণ্য করা যায়। বানভট্ট রচিত হর্ষচরিত এবং কবি সন্ধ্যাকরনন্দী রচিত রামচরিতম প্রাচীন বাংলা ও ভারতের ইতিহাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ মূল উৎস। কলহণ দ্বাদশ শতকে রাজতরঙ্গিণী রচনা করেন- যা থেকে কাশ্মীরের ধারাবাহিক ইতিহাস পাওয়া যায়। বল্লাল সেনের দানসাগর ও অদ্ভূতসাগর, মিনহাজউদ্দিন সিরাজ-এর তবকাত-ই-নাসিরী, গোলাম হোসেন সলিম-এর রিয়াজ-উস সলাতিন, জিয়াউদ্দিন বারানীর তারিখ-ই-ফিরিস্তা, আবুল ফজলের আকবর নামা প্রভৃতি গ্রন্থ ইতিহাসের মৌলিক উৎসরূপে অতি মূল্যবান। বিভিন্ন
৪. বৈদেশিক বৃত্তান্ত (Foreigners Descriptions)
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পর্যটক, ব্যবসায়ী, আক্রমণকারী, ভাগ্যান্বেষী ভারতে আগমন করে ভারত সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যসমৃদ্ধ বিবরণ রেখে গেছেন এবং অনেক পণ্ডিত ও ঐতিহাসিক ভারতে না এসেও ভারত সম্পর্কে অন্য মাধ্যমে ভারতের ওপর তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন— যেগুলোকে ইতিহাসের বৈদেশিক বৃত্তান্তমূলক মূল উৎস বলে গণ্য করা হয়। ইতিহাসের জনক গ্রিক পণ্ডিত হিরোডোটাস ভারতে আগমন না করেও প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উৎস সম্পর্কে জ্ঞানদান করে আমাদেরকে কৃতার্থ করেছেন। তাঁর ইতিবৃত্ত গ্রন্থ হতে জানা যায় যে, পারস্য সম্রাট দারিয়ূস ভারতের উত্তরাংশ দখল করে তাঁর সাম্রাজ্যের বিশতম প্রদেশে পরিণত করেছিলেন। কার্ডিয়ার, প্লুটার্ক, আরিয়ান প্রমুখ গ্রন্থকারদের বিবরণ হতে গ্রিকবীর আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের যাবতীয় তথ্য পাওয়া যায়। সেলিউকসের রাজদূত মেগাস্থিনিস এর ইন্ডিকা গ্রন্থ হতে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ও সমকালী অন্যান্য অনেক তথ্য পাওয়া যায়। চৈনিক ঐতিহাসিক সু-মা-ফিয়েন তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে (খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতক) ভারতের অনেক মূল্যবান তথ্য সন্নিবেশিত করেন। Pereplus of the Erythrean Sea গ্রন্থে খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের ভারতের নানা ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়। চৈনিক পর্যটক ফাহিয়েন ও হিউয়েন সাঙ-এর বিবরণ হতে যথাক্রমে গুপ্ত বংশ, হর্ষবর্ধন ও শশাঙ্কের ইতিহাসের তথ্য পাওয়া যায়।
তিব্বতীয় গ্রন্থকার ও ঐতিহাসিক লামা তারানাথের বিবরণ থেকে গোপালের উত্থান সম্পর্কে জানা যায়। আবু রায়হান আল বেরুণীর আসার- উল-বাকিয়া, কানুন-আল-মাসুদী ও কিতাব-আল-হিন্দ গ্রন্থগুলো ইতিহাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ মূল উৎস। তৎকালীন হিন্দু সমাজ, ধর্ম ও রাজনীতির ওপর লেখা কিতাব-আল-হিন্দ সত্যিই একটি ব্যতিক্রমী উৎস। তাছাড়া মরক্কোর পর্যটক আবু আব্দুল্লাহ মুহম্মদ ইবনে বতুতার লেখা রেহলা ও চৈনিক পর্যটক মাহুয়ানের লেখা য়িং-আই-শেন-লান গ্রন্থদ্বয় ও মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসের বিশেষ উল্লেখযোগ্য উৎস। আবু আব্দুল্লাহ মুহম্মদ ইবনে বতুতা রচিত রেহলা (ভ্রমণ বৃত্তান্ত) হতে মধ্যযুগের বাংলার আর্থ-সামাজিক অবস্থার মনোজ্ঞ বিবরণ পাওয়া যায়। আর চৈনিক পর্যটক ও দোভাষী মাহুয়ানের বিবরণ হতে মধ্যযুগের বাংলার সামাজিক চিত্র পাওয়া যায়।
৫. সরকারি দলিলপত্র (Government Documents)
ইতিহাসের মৌলিক উৎসগুলোর মধ্যে সরকারি দলিলপত্র সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস। সরকারের দলিলপত্রের মধ্যে সরকারি প্রশাসন, অর্থনীতি, সমাজসহ সার্বিক কর্মের প্রামাণ্য চিত্র পাওয়া যায়। সরকার কর্তৃক গৃহীত সকল প্রকার কার্যক্রমের সংশয়হীন ও বস্তুনিষ্ঠ উৎস হল সরকারি দলিলপত্র। সরকারের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত সরকারি দলিলপত্রসমূহকে উৎস হিসেবে ব্যবহার করে। একজন ঐতিহাসিক বিগত সরকারের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর চমৎকার ইতিহাস রচনা করতে পারেন।