Home » উপসংস্কৃতি কি? বিপরীত সংস্কৃতি বলতে কি বুঝ?

উপসংস্কৃতি কি? বিপরীত সংস্কৃতি বলতে কি বুঝ?

by Rezaul Karim
উপসংস্কৃতি কি বিপরীত সংস্কৃতি কি

উপসংস্কৃতি

উপসংস্কৃতি হলো বৃহত্তর সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রতর সংস্কৃতি। অর্থাৎ সামাজিক স্তরবিন্যাসের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক মানুষের জীবনধারার মধ্যে যে স্বাতন্ত্র্য পরিলক্ষিত হয়, তাই হলো উপসংস্কৃতি। এ স্বাতন্ত্র্য সমাজব্যবস্থার বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়। যেমন- ভাষা, চিন্তা-চেতনা, আদর্শ ও মূল্যবোধ, রীতিনীতি, আচার, প্রথা- প্রতিষ্ঠান, জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি।

রোনাল্ড সি. ফেডারিকো তাঁর ‘Sociology’ গ্রন্থে বলেন, “A set of variant norms and values that distinguish a group of people from others in their culture is called a sub-culture.” re. “50 (Federico, Ronald, C. Sociology, 1978, P. 48) অর্থাৎ, বিভিন্ন আদর্শ ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে যখন একদল লোক সমাজের অন্যদের কাছ থেকে সংস্কৃতিগত দিক থেকে আলাদা, তখন তাকে উপসংস্কৃতি বলা হয়।

উপসংস্কৃতি বলতে বুঝায় সমাজের কোন বিশেষ জনগোষ্ঠীর মূল্যবোধ এবং অনুশীলন, যা বৃহত্তর সংস্কৃতি থেকে ভিন্ন। যে কোন জটিল সমাজে অনেক ধরনের গুলশাংস্কৃতি বিরাজ করে। উপসংস্কৃতি গড়ে উঠতে পারে পেশা বা প্রতিষ্ঠানকে ধরনের উরো। সামরিক বাহিনী বা চিকিৎসা বিদ্যায়, নরগোষ্ঠীগত বা এথনিক গেমকে মধ্যে উপসংস্কৃতি লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যেও তা বিরাজ করে। অঞ্চলভিত্তিতেও উপসংস্কৃতি গড়ে উঠে।

উপসংস্কৃতি সমাজের মূল সংস্কৃতির সাথে জড়িত থাকে এবং বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে মূল সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। তবে উপসংস্কৃতি নিজের স্বাতন্ত্র্যও বজায় রাখে। উপসংস্কৃতির ঐশ্বর্য ও বৈচিত্র্য মূল সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ ও মর্যাদাময় করে তোলে। বৃহত্তর সংস্কৃতির পরিপূর্ণ বিকাশের ক্ষেত্রে উপসংস্কৃতির ভূমিকা তাই নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।

বিপরীত সংস্কৃতি

বৃহত্তর সমাজের মূল সংস্কৃতির সাথে যখন উপসংস্কৃতির দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হয় তখন তাকে বিপরীত সংস্কৃতি (Counter Culture) হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। বৃহত্তর সংস্কৃতির মধ্য থেকে উপসংস্কৃতি যখন ব্যাপক বিস্তার লাভ করে, মূল সংস্কৃতির বিরোধী হিসেবে প্রতিপন্ন হয় এবং জাতীয় সংহতির পরিপন্থী হিসেবে প্রতিভাত হয় তখন তাকে বিপরীত সংস্কৃতি বলে।

কোন সমাজের বৃহত্তর সংস্কৃতির আদর্শ, মূল্যবোধ, রীতি-নীতি, মনোভাব, প্রথা, বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান ও জীবনধারা ইত্যাদি উপসংস্কৃতির দলের মধ্যে ব্যাপকভাবে অনুসরণ ও অনুশীলন করলে বিপরীত সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়। বস্তুত বৃহত্তর সমাজে যখন মূল্যবোধের সংকট দেখা দেয় এবং সামাজিক নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়ে তখনই বিপরীত সংস্কৃতির উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে।

Oxford Dictionary of Sociology অনুযায়ী, “উপসংস্কৃতি যখন সংস্কৃতির বিরোধিতা করে তার প্রধান মূল্যবোধ এবং নীতিমালাকে বাতিল করে তার বিপরীত মূল্যবোধ,

নীতিবোধ এবং জীবনাচরণকে গ্রহণ করে তখন তাকে বিপরীত সংস্কৃতি বলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইউরোপ ও আমেরিকায় ১৯৬৮ সালের ছাত্র আন্দোলন, হিপ্পি আন্দোলন এবং পরিবেশবাদী সবুজ আন্দোলন ইত্যাদি।

সমাজতাত্ত্বিকদের ধারণানুযায়ী, বৃহত্তর সমাজে প্রচলিত প্রাধান্যকারী বিভিন্ন মূল্যবোধ থেকে খকদের ধারণানুযায়ী, বৃহন তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করে। মূলত এই হাতাশাবোধ থেকেই বিপরীত সংস্কৃতির আবির্ভাব ঘটে।

আরও পড়ুন:

সভ্যতা কি বা সভ্যতা কাকে বলে?

বস্তুগত সংস্কৃতি কি? অবস্তুগত সংস্কৃতি কি?

সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে পার্থক্য কি কি?

Related Posts