একচেটিয়া বাজার
যখন কোনো দ্রব্যের যোগান একজন ব্যক্তি বা একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকে, তখন তাকে একচেটিয়া বাজার বলা হয়। আবার একদল সংঘবদ্ধ উৎপাদনকারী বা বিক্রেতা একটি দ্রব্যের সমুদয় যোগান নিয়ন্ত্রণ করলেও তাকে একচেটিয়া বাজার বলে।
একচেটিয়া বাজার সম্পর্কে অধ্যাপক এ. কুটসোয়ানিস (A. Koutsoyiannis) বলেন, “একচেটিয়ামূলক বাজার হলো এমন একটি বাজার কাঠামো যেখানে একক বিক্রেতা থাকে, উৎপাদিত দ্রব্যের কোনো ঘনিষ্ঠ পরিবর্তক থাকে না এবং বাজারে প্রবেশে বাধা বিদ্যমান।” (Monopoly is a market structure in which there is a single seller. There are no close substitutes for the commodity it produces and there are barriers to entry.)
অর্থনীতিবিদ ই, ম্যান্সফিল্ড (E. Mansfield) বলেন, “একচেটিয়ামূলক বাজার একটি অবস্থাকে বোঝায়, যা যোগানের একক উৎস নির্দেশ করে।” (A monopoly is a situation where there is a single source of supply.)
পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ফার্মের স্বল্পকালীন ভারসাম্য ব্যাখ্যা কর |
অর্থানীতিবিদ স্টিগলারের মতে, “একচেটিয়া কারবার এমন একটি দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদক প্রতিষ্ঠান, যার কোনো নিকট পরিবর্তক দ্রব্য নেই।” (Monopoly is such a firm producing a commodity of which there are no close substitutes.)
আর, জি. লিপসির মতে, “একচেটিয়া হলো একটি শিল্প।” (The monopolist is the Industry.)
E. H. Chamberlin (চেম্বারলিন)-এর মতে, “যে বাজারে ফার্ম বা শিল্পের কোনো বিশেষ পণ্য বা সেবার ওপর বিক্রেতার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আছে তাকে একচেটিয়া বাজার বলে।”
একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্য সমূহ
একচেটিয়া বাজারের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এরূপ বাজারের বৈশিষ্ট্য সমূহ নিচে আলোচনা করা হলো-
১. ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা: একচেটিয়ামূলক বাজারে ক্রেতার সংখ্যা অসংখ্য। কিন্তু বিক্রেতা বা উৎপাদক মাত্র একজন।
২. দ্রব্যের প্রকৃতি: একচেটিয়ামূলক বাজারে বিক্রেতা একটি মাত্র দ্রব্য বিক্রয় করে। তাই দ্রব্যের কোনো বিকল্প দ্রব্য বাজারে থাকে না।
৩. দামের ওপর প্রভাব: একচেটিয়ামূলক বাজারে বিক্রেতা যেহেতু দ্রব্যের যোগান সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাই সে দামকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এক্ষেত্রে ফার্মকে দাম সৃষ্টিকারী বলা হয়।
৪. প্রবেশাধিকার: একচেটিয়ামূলক বাজারে নতুন প্রতিযোগীর প্রবেশের পথ রুদ্ধ থাকে।
৫. দ্রব্যের দাম: একচেটিয়ামূলক বাজারে দ্রব্যটি বিভিন্ন দামে ক্রয়-বিক্রয় হতে পারে। অনেক সময় একচেটিয়া কারবারি একই দ্রব্য বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন দামে বিক্রয় করতে পারে।
৬. চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা: একচেটিয়ামূলক বাজারে চাহিদার সম্পূর্ণ স্থিতিস্থাপক নয়। তাই চাহিদা রেখা ডান দিকে নিম্নগামী হয়।
৭. আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা: একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ওই বাজারে কোনো পরিবর্তক বা বিকল্প দ্রব্য থাকে না। তাই আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতার মান শূন্য হয়।
৮. বিজ্ঞাপন: একচেটিয়ামূলক বাজারে বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব কম। শুধু জনসংযোগের জন্য বিজ্ঞাপনের প্রয়োজন হয়।
৯. ভারসাম্য উৎপাদন: একচেটিয়ামূলক বাজারে প্রান্তিক আয় ও প্রান্তিক ব্যয়ের সমতার বিন্দুতে উৎপাদনের ভারসাম্য নির্ধারিত হয়। উৎপাদনকে গড় ব্যয়ের সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে হয় না।
১০. মুনাফার পরিমাণ: একচেটিয়ামূলক বাজারে দীর্ঘকালেও কোনো প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করতে পারে।
১১. বাজার সম্পর্কে অপূর্ণ জ্ঞান: পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই পূর্ণ জ্ঞান রাখে। একচেটিয়া বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা পূর্ণ জ্ঞান রাখে না।
১২. উপাদান পূর্ণ গতিশীল নয়: একচেটিয়া বাজারে কোনো বিকল্প দ্রব্য থাকে না এবং একজন মাত্র বিক্রেতা থাকে। তাই এ বাজারে উপকরণ পূর্ণ গতিশীল নয়।
পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ar=mr হয় কেন ? – ব্যাখ্যা কর |
১৩. চাহিদা রেখা: একচেটিয়া বাজারে ফার্ম তার পণ্যের যোগান সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু সে দ্রব্যের চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই দ্রব্যের দাম বাড়লে চাহিদার পরিমাণ কমে এবং দাম কমলে চাহিদার পরিমাণ বাড়ে। দামের সাথে চাহিদার পরিমাণ এরূপ বিপরীত সম্পর্ক থাকার কারণে চাহিদা রেখা বাম থেকে ডান দিকে নিম্নগামী হয়। এক্ষেত্রে একচেটিয়া বাজারে গড় আয় (AR) রেখাই চাহিদা রেখা। অর্থাৎ AR = P হয়।
চিত্রে দেখা যায়, একচেটিয়া বাজারের চাহিদা রেখা AR = D, যা বাম থেকে ডান দিকে নিম্নগামী।