কিশোর অপরাধ
আধুনিককালে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি সমাজেই শিশু ও কিশোর অপরাধ প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অপরাধপ্রবণতা সমাজের একটি বিরাট সমস্যা। এ পৃথিবীতে প্রতিটি শিশু ভবিষ্যৎ জীবনের এক বিরাট সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। যদি অপরিপক্ক বয়সে এরা অপরাধপ্রবণতার দ্বারা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে ভবিষ্যতে প্রতিটি সমাজে, রাষ্ট্রে তথা সমগ্র বিশ্বে একটি বিরাট সম্ভাবনাকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করা হবে। ভবিষ্যতের সমগ্র উন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য আজ প্রতিটি সমাজের প্রতিটি সচেতন মানুষের এদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব রয়েছে।
অপরাধের কারণ সমূহ কি কি? |
শিশু-কিশোর অপরাধপ্রবণতা বলতে বুঝায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়েদের দ্বারা সমাজে উচ্ছৃঙ্খলতা বা অপরাধমূলক কার্যকলাপ। প্রতিটি শিশু একটি জীবন্ত সত্তা। জন্মের মুহূর্তে সে বহু কোষবিশিষ্ট মাংসপিণ্ডে মস্তিষ্ক পরিচালিত কিছুটা বংশগত গুণাগুণ নিয়ে পৃথিবীতে আসে। পরবর্তীকালে পরিবেশের প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে ভবিষ্যতের কর্মসূচি নির্বাচন করে। এ বংশগতির মূলে ক্রোমোজম- তারই অন্তর্মূলে -জিন (Zen)। এ ‘জিন’ বিশেষ অবস্থায় মানুষকে বিশেষ প্রতিক্রিয়ার জন্য সচেষ্ট করে তোলে। কিশোর জীবনে রহস্যময়তা, উচ্ছৃঙ্খলতা, ভাবপ্রবণতা, জীবন ও জগতের প্রতি রঙিন দৃষ্টি প্রভৃতি বিশেষভাবে তাদের মনে প্রভাব বিস্তার করে। সে লগ্নে ভারসাম্যতার অভাব, নিজের উচ্ছ্বাসপ্রবণ মনের ইচ্ছানুসারে সমাজজীবনের কার্যাবলির পার্থক্য এবং ব্যক্তি মানসের সাথে সমাজ মানসের অসাম্য অনেক কিশোরের মনেই বিশেষ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। সুতরাং চেতন, অবচেতন ও অচেতন মনে পরিবেশের স্থায়ী প্রভাব তার জীবনে চিরদিন থেকে যায়। এ মূল পরিবেশকে কেন্দ্র করে পারিপার্শ্বিকতার পটভূমিতে যে শিশু তাল সামলাতে পারে না, সে শিশু কালক্রমে অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠে।
কিশোর অপরাধের সংজ্ঞা
কিশোর অপরাধ সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। সমাজবিজ্ঞানী বার্টের মতে, “কোন শিশুকে তখনই অপরাধী বলে মনে করতে হবে, যখন তার অপরাধ অসামাজিক কাজের প্রবণতার জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।”
আবার এ. ডি. জন বলেছেন, “কিশোর অপরাধ বলতে একদল কিশোর বা একই বয়সের কিশোরদের বুঝায়, যারা প্রচলিত আইনশৃঙ্খলা ও নিয়মকানুনের পরিপন্থি কাজ করে।”
Cavan এবং Ferdinand এর মতে, “সমাজ কর্তৃক আকাঙ্ক্ষিত আচরণ দেখাতে যখন কিশোররা ব্যর্থ হয় তাকে কিশোর অপরাধ বলে।”
লেবেলিং তত্ত্ব – Labelling Theory |
Shulman এর মতে, “অপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর উপর পরিবার ও সমাজের নিয়ন্ত্রণহীনতাই কিশোর অপরাধ।”
কাজেই কিশোর অপরাধ বলতে বুঝি, অপ্রাপ্ত বয়সে যারা অসামাজিক কার্যকলাপ দ্বারা সমাজে আইনশৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটায় তাদের।
সাধারণত কিশোর বলতে ৭ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত বয়ঃসীমাকে ধরা হয়। এ বয়সে সমাজে অপরাধমূলক কাজ করলে কিশোর অপরাধী হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে। ১০ বছরের নিচের ছেলেমেয়েদের কৃত অপরাধকে অনেকে সামাজিক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করেন না। ১৯৫০ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত ‘United Nations Congress’ এ কিশোর অপরাধ সম্পর্কে বলা হয়েছে, “অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দ্বারা সংঘটিত সব ধরনের আইনভঙ্গমূলক এবং অসংগতিপূর্ণ এমন আচরণ যা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত নয় এসবই কিশোর অপরাধ।”
উপরিউক্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যায় যে, অপরিণত বয়স্ক ছেলেমেয়েদের দ্বারা সংঘটিত দেশের প্রচলিত আইনশৃঙ্খলা ও নিয়মকানুনের পরিপন্থি কাজই কিশোর অপরাধ। এর জন্য শাস্তির পাশাপাশি সংশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে।
কিশোর অপরাধী-
১. ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনা করে না।
২. কৌতূহলবশত বা উদ্দেশ্যহীনভাবে করে।
৩. আবেগতাড়িত হয়ে করে।
৪. অজ্ঞতার বশে করে।
৫. পরবর্তীতে অনুশোচনা করে।
৬. অসংবদ্ধ এবং এলোমেলো।
অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর |
2 comments
[…] কিশোর অপরাধ কি | কিশোর অপরাধ কাকে বলে […]
[…] কিশোর অপরাধ কি | কিশোর অপরাধ কাকে বলে […]
Comments are closed.