ইদানিং অনেকে কোলেস্টেরল নামক রাসায়নিক পদার্থটি সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। এ রাসায়নিক পদার্থটি মানব দেহের মধ্যেই সৃষ্টি হয় এবং এটি শরীরের ভেতরে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। তথাপি অতি চর্বি যুক্ত খাদ্যের মাধ্যমে এর অতিমাত্রা সেবন করলে দেহে ভয়ানক ব্যাধি যেমন হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক এবং পিত্তাশয় পিড়া ইত্যাদি হতে পারে। আজ জানবো কোলোস্টেরল যুক্ত খাবার তালিকা ও কোলেস্টেরল কমানোর উপায় সম্পর্কে।
কোলেস্টেরল দুর্বৃত্ত আবিষ্কার
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেক সময় লক্ষ্য করা গেছে যে অনেক আবিষ্কার আকস্মিক ভাবে বা অজান্তে হঠাৎ হয়ে গেছে। এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল যখন নতুন কোলেস্টেরল দুর্বৃত্ত আবিষ্কার করা হয়।
নিউ ইয়র্কের এ্যালবেনিতে এ্যাডমিনিস্ট্রেশন মেডিক্যাল সেন্টারে ডাঃ সি, বি, টেইলর এবং তার সহ কর্মীগণ এ আবিষ্কারটি করেছেন। যেহেতু তার গবেষণা কাজের জন্য অনুদান সীমিত হয়ে আসছির সেহেতু ডাঃ টেইলর তাড়াহুড়ো করে ১০০ পাউন্ড কোলেস্টেরল কিনে রাখলেন যেন কয়েক বছর পর্যন্ত তা দিয়ে তিনি গবেষণা চালিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু তার মজুদকৃত কোলেস্টেরল দিয়ে গবেষণা করে তিনি দেখলেন যে পূর্বেকার উদঘাটন েএবং বর্তমান আবিষ্কার একে অপরের সাথে মিল খাচ্ছে না।
ডাঃ টেইলর সন্দেহ পোষণ করলেন যে মজুদকৃত কোলেস্টেরল একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছে যার নাম জারন (Oxidation)। সুতরাং তিনি মজুদকৃত কোলেস্টেরলের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করেন। নিশ্চিত ভাবে দেখা গেল যে কোলেস্টেরল জারণকৃত হয়েছে। তখন তিনি জারণকৃত কোলেস্টেরলের তিনটি উপাদান খুঁজে পেলেন। তিনি কৌতুহলী হলেন এটা ভেবে যে এই জারণকৃত কোলেস্টেরল প্রাণীর দেহে কি প্রকার প্রক্রিয়া ঘটায় তা জানতে। তাই তিনি এই কোলেস্টেরল একটি খরগোশের দেহে সূচি প্রয়োগ (Inject) করে প্রবাহিত করলেন।
কল্পনা করুন তার বিস্ময় কি হতে পারে যখন তিনি আবিষ্কার করলেন যে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই সেই কোলেস্টেরল খরগোশটির ধমনীর ভেতরে মসৃণ পেশী ধ্বংস করে ফেলেছে। তিনি ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ দিয়ে এই প্রমাণ পূর্ণবার নিশ্চিত করলেন। বাস্তবিক অর্থে সেটি নির্ভুল ছিল। খরগোশটির ধমনীর পেশী মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।
কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার তালিকা
আপনি কি জানতে আগ্রহী যে কোন জাতীয় খাবারে উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল রয়েছে এবং কোন জাতীয় খাবারে কোলেস্টেরল নেই? নিচে উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার, মধ্যম কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার ও নিম্ন কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার তালিকা প্রদান করা হলো-
তালিকাটি প্রতি ১০০ গ্রামের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার | কোলেস্টেরল পরিমাণ (মিঃগ্রাঃ) |
মগজ | ২০০০ |
ডিমের কুসুম ছ’টা | ১৫০০ |
কিনডী বা বৃক্ক | ৩৭৫ |
যকৃৎ | ৩০০ |
মাখন | ২৫০ |
ঝিনুক | ২০০ |
চিংড়ি মাছ | ২০০ |
কাঁকড়া | ১২৫ |
ননী পনির | ১২০ |
মধ্যম কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার | কোলেস্টেরল পরিমাণ (মিঃগ্রাঃ) |
হলুদ ননী | ১০০ |
শূকর চর্বি বা মাংসের মেদ | ৯৫ |
হুইপিং ক্রীম | ৮৫ |
গোমাংস | ৭০ |
মাছ | ৭০ |
শূকরের মাংস | ৭০ |
মুরগীর মাংস | ৬০ |
আইস ক্রীম | ৪৫ |
নিম্ন কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার | কোলেস্টেরল পরিমাণ (মিঃগ্রাঃ) |
কটেজ চিজ (৪% মেদ) | ১৫ |
ননী যুক্ত দুধ | ১১ |
ননী তোলা দুধ | ৩ |
ডিমের লালা | ০ |
ফলমূল | ০ |
গম, ভূট্টা, চাল, কোয়ার শস্য ইত্যাদি | ০ |
বাদাম | ০ |
শাক সবজি | ০ |
কোলেস্টেরল কমানোর উপায়
স্বাস্থ্য বিশারদগণ প্রতিদিন যে কোলেস্টেরল সেবনের মাত্রা ধার্য করেছেন তা হচ্ছে ২৫০ মিলিগ্রাম অর্থাৎ একটি ডিমের কুসুমে যে পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে তার সম পরিমাণ। উপরের তালিকা দেখে খাদ্য নির্ণয় করলে আপনি বুঝতে পারবেন স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্য কি প্রকার হতে পারে। কেবলমাত্র নিম্ন মাত্রায় কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার সীমিত পরিমাণ খাবেন এবং উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার সম্পূর্ণরূপে বর্জন করবেন।
মনে রাখবেন এ্যাথেরেসক্লেরোসিস্ রোগের সূত্রপাত বাল্যাবস্থায়ই শুরু হতে পারে। তাই উত্তম খাদ্যাভ্যাস সূচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাল্যাবস্থায় যে রুচির বা অরুচির সৃষ্টি হয় তা সারা জীবন ব্যাপী থেকে যায়। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোক যার স্বাদ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার চেয়ে একজন শিশুকে তার স্বাদ এবং রূচি সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া সহজতর। তাই বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আমাদেরও এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত।