খুচরা নগদান বই
প্রায় প্রত্যেক ব্যবসায়ই প্রতিদিন অসংখ্য ছোট ছোট খরচ হয়। এগুলোকে খুচরা খরচ বলে। প্রধান ক্যাশিয়ারের পক্ষে এসব খরচের অর্থ প্রদান করা কঠিন। এটা তার পক্ষে যেমন অসুবিধাজনক তেমনি এসব খরচ নগদান বইতে লিখলে নগদান বইয়ের আকার অসম্ভব রকমের বড় হয়ে যায়। তাই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত সমস্ত খুচরা খরচ প্রদানের দায়িত্ব অন্য একজন ক্যাশিয়ারের ওপর ন্যস্ত করা হয়। ঐ ক্যাশিয়ারকে খুচরা ক্যাশিয়ার বলে এবং যে বইতে এসব খরচের হিসাব লিখে রাখা হয় তাকে খুচরা নগদান বই (Petty Cash Book) বলে।
Basu and Das এর মতে, ‘চলতি খুচরা খরচসমূহ সাধারণত যে বিশেষ বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে খুচরা নগদান বই বলে।’
নগদান বই কাকে বলে? নগদান বই কত প্রকার ও কি কি? |
নগদ অর্থের তছরূপ বন্ধ করার জন্য যে প্রতিষ্ঠান তাদের যাবতীয় নগদ লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পাদন করে এবং নগদ বইতে শুধু ব্যাংকের ঘর রাখে, তাদের জন্য Petty Cash Book সংরক্ষণ অপরিহার্য। কারণ ঐসব প্রতিষ্ঠানকে খুচরা খরচের জন্য নগদ টাকা রাখতে হয় এবং ঐ খরচের হিসাব খুচরা নগদান বইতে রাখা হয়।
সুতরাং বলা যায়, খুচরা বা ছোট ছোট খরচগুলোর হিসাব যে নগদান বইতে রাখা হয় তাকে খুচরা নগদান বই বলে। খুচরা খরচসমূহ তারিখের ক্রমানুসারে প্রাথমিকভাবে খুচরা নগদান বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়।
খুচরা নগদান বই কত প্রকার?
বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত বহুসংখ্যক নগদ লেনদেন সংঘটিত হয়। এদের মধ্যে দৈনন্দিন ছোটোখাট্যে ব্যয়গুলো যেমন- কাগজ ক্রয়, কলম ক্রয়, রিকশা ভাড়া, চা আপ্যায়ন ইত্যাদির জন্য প্রধান ক্যাশের পাশাপাশি ভিন্ন একটি তহবিল সংরক্ষণ করা হয়, এই তহবিলকে খুচরা নগদ তহবিল বা Petty Cash বলা হয়। এই তহবিল হতেই দৈনন্দিন খুচরা এবং ছোটোখাটো ব্যয়গুলো মেটানো হয়। আর যে নগদান বইতে প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন খুচরা এবং ছোটোখাটো ব্যয়গুলো তারিখ অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে Petty Cash Book বলে।
ব্যবসায় বা অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী খুচরা্ নগদান বই সংরক্ষণ করে থাকে। ছক ও প্রস্তুত প্রণালী অনুসারে খুচরাা নগদান বই দুই প্রকার, যথা-
১. সাধারণ খুচরা নগদানবই (Simple Petty Cash Book)
২. বহুঘরা বা বিশ্লেষণাত্মক খুচরা নগদানবই (Columnar or Analytical Petty Cash Book)
বাট্টা কি, কত প্রকার এবং নগদ বাট্টা ও কারবারি বাট্টার মধ্যে পার্থক্য |
অগ্রদত্ত খুচরা নগদান বই
অগ্রদও বলতে অগ্রিম বা আগাম দেওয়াকে বুঝায়। অন্যভাবে অগ্রদত্ত বলতে হাওলাত প্রদান বা আগাম পরিশোধ-বুঝায়। প্রায় সর্বত্রই খুচরা নগদান বইয়ের ক্ষেত্রে অগ্রদত্ত পদ্ধতিতে বহুঘরা খুচরা নগদান বই পদ্ধতি অনুসৃত হয়। এ পদ্ধতিতে প্রধান বা বড় ক্যাশিয়ার ছোটো বা খুচরা ক্যাশিয়ারকে নির্দিষ্ট সময় যেমন- এক সপ্তাহ বা এক পক্ষ অথবা এক মাসের খুচরা খরচের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা অগ্রিম প্রদান করে। অগ্রদত্ত টাকার পরিমাণ কত হবে তা পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে ঠিক করা হয়। যদি নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই টাকা শেষ হয়ে যায়, তাহলে সময় শেষ হবার পূর্বেই খরচের হিসাব দাখিল করে প্রধান ক্যাশিয়ারের নিকট থেকে ব্যয়কৃত টাকা পাওয়া যেতে পারে।
সুতরাং বলা যায়, যে খুচরা নগদান বইয়ের পেটি ক্যাশিয়ার প্রধান ক্যাশিয়ারের নিকট থেকে নির্দিষ্ট সময়ের খুচরা খরচ নির্বাহের জন্য পূর্বনির্ধারিত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অগ্রিম গ্রহণ করে তা ডেবিট দিকে এবং খুচরা খরচগুলো ক্রেডিট দিকে পৃথক পৃথক ঘরে লিপিবদ্ধ করে এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে ব্যয়িত অর্থের হিসাব দাখিল করে প্রধান ক্যাশিয়ারের নিকট থেকে মোট ব্যয়ের সমপরিমাণ অর্থ পুনরায় সংগ্রহ করে তাকে অগ্রদত্ত পদ্ধতিতে খুচরা নগদান বই বলে।