Home » জরিপ পদ্ধতি কি? জরিপ পদ্ধতির সুবিধা অসুবিধা আলোচনা কর

জরিপ পদ্ধতি কি? জরিপ পদ্ধতির সুবিধা অসুবিধা আলোচনা কর

by Rezaul Karim
জরিপ পদ্ধতি কি, জরিপ পদ্ধতির সুবিধা,

জরিপ পদ্ধতি

জরিপ পদ্ধতিকে একটি ব্যাপক নিরীক্ষণ বলা যায়। কারণ এ পদ্ধতিতে কোনো একটি বিষয় সম্বন্ধে বিপুল সংখ্যক লোকের মতামত ও মনোভাব সহজেই যাচাই করা যায়। Robert A Baron (2004) বলেন- Survey Method: A research method in which large numbers of people answer questions about aspects of their views or their behaviour’, অর্থাৎ জরিপ পদ্ধতি: এমন একটি গবেষণাপদ্ধতি যার সাহায্যে বহু সংখ্যক জনগণ তাদের মতাদর্শ বা তাদের আচরণ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে।

পরীক্ষণ পদ্ধতি কি? পরীক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য লিখ

সামাজিক আচরণ অনুধ্যানের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের জন্য গবেষক প্রধানত দুটি কাজ করে থাকেন। একটি হলো জরিপ কাজের জন্য প্রশ্নমালা প্রণয়ন এবং দ্বিতীয়টি হলো জনসংখ্যাকে কতকগুলো বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভাগ করে নমুনা নির্ধারণ। প্রশ্নমালা প্রণয়ন এ পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ দিক। গবেষক তার গবেষণাকার্যটি যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য একটি প্রশ্নমালা প্রণয়ন করবেন। প্রশ্নমালা গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়েছে কিনা সেদিকে গবেষককে লক্ষ রাখতে হবে। প্রশ্নগুলো হচ্ছে ও সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া, একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।।

প্রশ্নমালার প্রশ্নগুলো দুভাগে প্রণীত হতে পারে। যথা: ১. মুক্ত প্রান্ত এবং ২. কাঠামোবদ্ধ বা রুদ্ধ প্রান্ত।

১) যুক্ত প্রান্ত (Open ended)

মুক্ত প্রান্ত প্রশ্নে উত্তরদাতা (Respondent) যে কোনো দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তর দিতে পারেন। এক্ষেত্রে উত্তরদাতা তার ইচ্ছামতো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে।

২) কাঠামোবদ্ধ বা রুদ্ধপ্রান্ত (Structured or Closed ended)

এ ধরনের প্রশ্নে কয়েকটি সম্ভাব্য উত্তর প্রশ্নপত্রে দেয়া থাকে এবং উত্তরদাতা ঐসব উত্তরের মধ্যে থেকে যে কোনো একটি উত্তর বেছে নেন, অর্থাৎ কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নে উত্তরদাতা নির্ধারিত উত্তরের ব্যতিরেকে অন্য কোনো উত্তর দিতে পারবেন না। উল্লেখ যে, গবেষক তার জরিপ কাজের সুবিধার্থে প্রশ্নমালায় মুক্তপ্রান্ত বা কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন প্রণয়ন করতে পারেন।

জরিপ পদ্ধতির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো নমুনা চয়ন। অনেক সময় সমগ্র জনসংখ্যার ওপর জরিপ কাজ চালানো সম্ভব হয় না। এ জন্য গবেষক কতকগুলো নমুনা বেছে নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। এরূপ নমুনা যাতে জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্বমূলক হয় সেদিকেও গবেষককে লক্ষ রাখতে হবে।

পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর

জরিপ পদ্ধতিতে অতি অল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করা যায়। এ পদ্ধতিতে সাক্ষাগ্রহণকারী উত্তরদাতার কাছ থেকে সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেন। আবার ডাকযোগে প্রশ্নমালা উত্তরদাতার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েও তথ্য সংগ্রহ করা যায়। অবশ্য, ডাকযোগে প্রশ্নমালার ফেরত পাওয়ার হার কম থাকে বা অনেক ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মোটামুটি কম খরচে অনেক তথ্য এ পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা যায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকল্পনা, নারীমুক্তি, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রভৃতি ক্ষেত্রে জনমত জানার জন্য জরিপ পদ্ধতি খুব কার্যকর। এ পদ্ধতিটি সমাজ মনোবিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞানের গবেষণায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

জরিপ পদ্ধতির সুবিধা

১) যে কোনো সমস্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহ বা তার বিকল্প সমাধান নির্বাচনে জরিপ সাহায্য করে থাকে।

২) জরিপ জাতীয় পর্যায়ে নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচি গ্রহণ, প্রশাসন ও গবেষণার প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানে সাহায্য করে। এ পদ্ধতির তথ্য রাশিকে ভবিষ্যৎ প্রয়োজনে সংরক্ষণ করা যায়।

৩) জরিপ গবেষণার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি ও ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।

৪) এ পদ্ধতিতে নমুনা চয়নের মাধ্যমে বাছাইকৃত দলের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় বলে প্রাপ্ত তথ্যাবলি অপেক্ষাকৃত নির্ভরযোগ্য হয়ে থাকে।

৫) জরিপ পদ্ধতিতে বহু সংখ্যক সামাজিক উপাদান বা তার সমগ্রকের ওপর অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করা যায়।

৬) গবেষণার নমনীয়তার নীতি এ পদ্ধতিতে পরিলক্ষিত হয়।

৭) জরিপে সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কিত তথ্যাদির সুস্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়।

৮) বাছাইকৃত ছোট দলের কাছ থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করার ফলে সময়ের অপচয় হয় না। এ পদ্ধতিতে তুলনামূলকভাবে খরচ কম হয়।

৯) জরিপ জনমত যাচাইয়ের একটি উত্তম পন্থা।

জরিপ পদ্ধতির অসুবিধা

বহুল আলোচিত জরিপ পদ্ধতির কতকগুলো অসুবিধার কথা গবেষকগণ উল্লেখ করেন, যেমন:

১) অনেক সময় যথাযথ প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা সম্ভব হয় না। এর ফলে গবেষণার উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।

২) বাছাইকৃত নমুনা দল যদি জনসমষ্টির প্রতিনিধিত্বমূলক না হয়, তাহলে প্রাপ্ত তথ্যরাশির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সঠিক হবে না।

৩) এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে উত্তরদাতাগণ তাদের প্রকৃত মনোভাব প্রকাশ নাও করতে পারেন।

৪) অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গবেষক ছাড়া এ পদ্ধতিতে যথাযথভাবে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। ৫) জরিপপ দ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্যাবলি বিভিন্ন মূল্যবোধ দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৬) জরিপ পদ্ধতির ফলাফলের ভিত্তিতে সুস্পষ্ট কোনো সার্বিকীকরণ বা ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না।

৭) এ পদ্ধতিতে বিরাট অঙ্কের অর্থ, লোকবল ও সময়ের অপচয় হয়।

৮) ব্যক্তির প্রতিক্রিয়ার ওপর গবেষকের তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

Related Posts