দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি
যে হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থায় প্রতিটি লেনদেনের দ্বৈতসত্তা হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় অর্থাৎ যখন একটি হিসাবখাতকে ডেবিট এবং অন্য হিসাবথাতটিকে ক্রেডিট করে লিপিবদ্ধ করা হয় তখন তাকে দুতরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি বলে। যেমন- মিঃ মতিনকে ১০০ টাকা প্রদান। এখানে দুটি হিসাবখাত প্রভাবিত হয়েছে। একটি হিসাব মিঃ মতিন এবং অন্য হিসাব খাতটি নগদান হিসাব। দু’তরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী গ্রহীতা হিসেবে মিঃ মতিনের হিসাবকে ডেবিট এবং নগদ অর্থ চলে যাওয়ায় নগদান হিসাবকে ক্রেডিট করা হবে। সংক্ষেপে প্রতিটি আর্থিক লেনদেনের দ্বৈতসত্তায় লিপিবদ্ধ করে ব্যবসায়ের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা তুলে ধরার প্রক্রিয়াকে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে।
দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি সম্পর্কে নিচে কয়েকটি মন্তব্য উল্লেখ করা হলো-
Dr. Finney and Dr. Miller-এর মতে, “দুতরফা দাখিলা নীতি নামটি গৃহীত হয়েছে এ সত্য হতে যে, প্রতিটি লেনদেন লিপিবদ্ধকরণে সমপরিমাণের ডেবিট এবং ক্রেডিট থাকবে।”
সকল লেনদেন ঘটনা কিন্তু সকল ঘটনা লেনদেন নয় – ব্যাখ্যা কর |
প্রখ্যাত হিসাববিশারদ Prof. William Pickles-এর মতে, “দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি অর্থ বা আর্থিক মূল্যে পরিমাপযোগ্য প্রতিটি লেনদেনকে দ্বৈতসত্তায় প্রকাশ করা হয়। ফলে একটি হিসাবখাতকে প্রাপ্ত সুবিধার জন্য ডেবিট এবং অন্য হিসাবখাতকে প্রদত্ত সুবিধার জন্য ক্রেডিট করা হয়।”
সুতরাং উপরের আলোচনা হতে দেখা যায়, দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি বিজ্ঞানসম্মত ও পূর্ণাঙ্গ হিসাবব্যবস্থা। ফলে র্ধিারিত রীতি-নীতি অনুযায়ী খ্যাংসম্পূর্ণভাবে লেনদেনসমূহকে লিপিবদ্ধ করে নির্ভুলভাবে ব্যবসায়ের চূড়ান্ত ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা সম্ভব হয়।
মোটকথা, যে হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থায় প্রতিটি লেনদেনের দ্বারা একই সাথে দুটি হিসাবখাতকে ডেবিট ও ক্রেডিট করা হয় এবং স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে ব্যবসায়ের সঠিক আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা যায়, তাকে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে।
দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য কয়টি?
দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি বিজ্ঞানসম্মত স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পূর্ণ হিসাবব্যবস্থা। কারণ কতিপয় স্বতঃসিদ্ধ বৈশিষ্টা অনুসরণ করে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণ করা হয়। এর ফলে একদিকে লেনদেনের গাণিতিক শুদ্ধতা সম্পর্কে যেমন নিশ্চিত হওয়া যায় এবং অন্যদিকে ব্যবসায়ের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা সম্ভব হয়।
দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হিসেবে ৬টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা যায়। সেগুলো হলো-
১. দ্বৈতসত্তা
এই পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনের দুটি পক্ষ বা খাতকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
২. দাতা ও গ্রহীতা
প্রতিটি লেনদেনে স্বতঃসিদ্ধভাবে একজন দাতা এবং একজন গ্রহীতা থাকে।
৩. সমমূল্যের আদান-প্রদান
প্রতিটি লেনদেনে যে পরিমাণ সুবিধা প্রদান করা হয় ঠিক একই পরিমাণ সুবিধা গ্রহণ করা হয়। দাতা যে পরিমাণ সুবিধা প্রদান করে ঠিক একই পরিমাণ সুবিধা গ্রহীতা গ্রহণ করে থাকে। প্রতিটি ডেবিট টাকা ক্রেডিট টাকার সমান হয়।
৪. ডেবিট ও ক্রেডিট করা
এই পদ্ধতিতে সুবিধা গ্রহণকারী হিসাবকে ডেবিট এবং সুবিধা প্রদানকারী হিসাবকে ক্রেডিট করা হয়।
হিসাব সমীকরণ কি | হিসাব সমীকরণের সূত্র ও উপাদান সমূহ |
৫. পৃথক সত্তা
এই পদ্ধতি অনুযায়ী মালিক ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে আলাদা সত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে ব্যবসায়কে একটি পৃথক সত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
৬. মোট ফলাফল
এ পদ্ধতিতে যেহেতু লেনদেনের মোট ডেবিট মোট ক্রেডিটের সমান হয়। ফলে সামগ্রিক লেনদেনের যোগফলও সমান হয়ে থাকে। এতে করে মোট ফলাফল নিরূপণ করা সহজ হয়। উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহের কারণে দুতরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতিকে একটি পূর্ণাঙ্গ ও বিজ্ঞানসম্মত হিসাব পদ্ধতি বলা হয়।