ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য
ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় মূলধনের প্রাধান্য, মুনাফার উদ্দেশ্যে উৎপাদন, উৎপাদনের উপাদানসমূহের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকে। আর সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের যাবতীয় উপাদানের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা বজায় থাকে। ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার তুলনামূলক পার্থক্য নিম্নরূপ-
পার্থক্যের বিষয় | ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা | সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা |
১. ব্যবহার ও বণ্টন | ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় দেশের ভূমি, কলকারখানা ও অন্যান্য সম্পদের সকল উপকরণের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা ব্যক্তিবিশেষের ওপর ন্যস্ত মালিকানা থাকে। ফলে জাতীয় সম্পদের ব্যবহার সম্পদের ব্যবহার ও বণ্টন ব্যক্তি দ্বারা সম্পন্ন হয়। | সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের সকল উপকরণের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা থাকে। ফলে যাবতীয় সম্পদের ব্যবহার ও বণ্টন সরকারের উদ্যোগে সম্পন্ন হয়। |
২. কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা | ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় মূল্য ব্যবস্থার দ্বারা উৎপাদন, বণ্টন, বিনিয়োগ প্রভৃতি অর্থনৈতিক কার্যাবলি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ ছাড়াই পরিচালিত হয়। | সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে উৎপাদন, বিনিয়োগ, বণ্টন প্রভৃতি অর্থনৈতিক কার্যাবলি পরিচালিত হয়। |
৩. শ্রমিক শোষণ | ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানসমূহ ব্যক্তিমালিকানায় বজায় থাকে। এ অবস্থায় উৎপাদনকারী শ্রমিককে তার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করে। | সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন কাজ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পরিচালিত হয় বলে শ্রমিক শোষণের সুযোগ থাকে না। |
৪. মুনাফা অর্জন | ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে উৎপাদন কাজ পরিচালিত হয়। | সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সামাজিক কল্যাণের ভিত্তিতে উৎপাদন কাজ পরিচালিত হয়। কারও ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জন এ ব্যবস্থায় সমর্থন করা হয় না। |
৫. বেকার সমস্যা | ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন ও ভোগের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে না। এতে অর্থনৈতিক কার্যাবলিতে উত্থান-পতন ঘটে এবং বাণিজ্যচক্রের সৃষ্টি হয়। ফলে সমাজে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। | সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় বাণিজ্যচক্রের প্রভাব দূর করা হয়। সবার জন্য কাজের সংস্থান করে বেকার সমস্যা দূরীভূত করা হয়। |
৬. ভোগকারীর স্বাধীনতা | ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ভোগকারীর স্বাধীনতা বজায় থাকে। উৎপাদনকারী ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী দ্রব্য উৎপাদন করে থাকে। | সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ভোগকারী অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করে না। রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা কমিশন দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদনের পরিমাণ ও প্রকৃতি নির্দেশ করে। ফলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে উৎপাদিত দ্রব্য ভোগকারী ক্রয় করতে বাধ্য থাকে। |
৭. আয় বণ্টন | ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকে বলে আয় বণ্টনে বৈষম্য দেখা দেয়। এ অর্থব্যবস্থায় সমাজে ধনী ও দরিদ্র দুটি পরস্পরবিরোধী শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। | সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে উৎপাদনের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না। ফলে দেশে আয় বণ্টনে সমতা আনা হয় এবং সমাজে শ্রেণিবৈষম্য দূর করা হয়। |
অতএব, উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সম্পদের অসম বণ্টন এবং শ্রেণি শোষণ থাকে। তা সত্ত্বেও জনকল্যাণ নীতি গ্রহণ করে জাতীয় উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। পক্ষান্তরে, সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সম্পদের সুষম বণ্টন এবং পরিকল্পিত উৎপাদন অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক। সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার মূল লক্ষ্যই হলো সর্বাধিক সামাজিক কল্যাণ অর্জন, মুনাফা অর্জন নয়।
ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা কাকে বলে | ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য সমূহ |
সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা কাকে বলে | সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য |
1 comment
[…] […]
Comments are closed.