Home » পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর

পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর

by Rezaul Karim
পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা,

পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা

পরীক্ষণ পদ্ধতি মনোবিজ্ঞানের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির প্রায় সব বৈশিষ্ট্যই এ পদ্ধতিতে বিদ্যমান। এজন্যে বলা হয় যে, বিজ্ঞান হিসেবে মনোবিজ্ঞানের মর্যাদা লাভের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির অবদান সবচেয়ে বেশি। উল্লেখ্য যে, পরীক্ষণ পদ্ধতি সাধারণত একটি কৃত্রিম পরিবেশে বা ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু প্রকৃত ক্ষেত্রেও (field) পরীক্ষণ করা যায়, যাকে ক্ষেত্র পরীক্ষণ (Field experiment) বলা হয়। পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১) পুনরাবৃত্তি: পরীক্ষণ পদ্ধতির একটি অন্যতম সুবিধা হলো পুনরাবৃত্তি। এ পদ্ধতিতে কোনো একটি বিষয়ের ওপর একাধিকবার গবেষণা পরিচালনা করা সম্ভব।

পরীক্ষণ পদ্ধতি কি? পরীক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য লিখ

২) নির্ভরশীলতা: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির নিয়ম কানুন সুদৃঢ়ভাবে পরিচালিত হয় বলে এ পদ্ধতির ফলাফল অধিক নির্ভরশীল। এ নির্ভরশীলতা অন্য কোনো পদ্ধতিতে দেখা যায় না।

৩) ইচ্ছানুযায়ী চলের পরিবর্তন সাধন: এ পদ্ধতিতে গবেষক তার সুবিধামতো ও ইচ্ছানুযায়ী চলের পরিবর্তন সাধন করতে পারেন। গবেষক ইচ্ছা করলে যে কোনো অনির্ভরশীল চল উপস্থাপন করে নির্ভরশীল চল পরিমাপ করতে পারেন। এ জন্যে তাকে অপেক্ষা করতে হয় না।

৪) নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা: এ পদ্ধতির পরীক্ষণে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত মানের। গবেষক চল নিয়ন্ত্রণের কৌশল ব্যবহার করে পরীক্ষণ-বিশিষ্ট চলের অবাঞ্ছিত প্রভাব থেকে নির্ভরশীল চলকে মুক্ত রাখতে পারেন।

৫) গাণিতিক বিশ্লেষণ: এ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর গাণিতিক বিশ্লেষণ করা যায়। পরীক্ষণের ফলাফলের ওপর পরিসংখ্যানের বিভিন্ন পরিমাপ (যেমন গড়, মধ্যমা, প্রচুরক, গড় বিচ্যুতি, আদর্শ বিচ্যুতি ইত্যাদি প্রয়োগ করা যায়।

পরীক্ষণ পদ্ধতির অসুবিধা

পরীক্ষণ পদ্ধতির অসুবিধা গুলো নিম্নরূপ-

১. কৃত্রিম পরিবেশ: পরীক্ষণ পদ্ধতির পরীক্ষণ একটি কৃত্রিম পরিবেশে সম্পন্ন হয়। একজন ব্যক্তিকে বা প্রাণিকে গবেষণাগারের ভিতর নিলে সে ব্যক্তি বা প্রাণি কিছুটা ভীত হয়ে পড়বে। এর ফলে পরীক্ষণ- পাত্রের আচরণ স্বাভাবিকভাবে না-ও ঘটতে পারে। বর্তমানে এরকম ভীতিপূর্ণ অবস্থা মনোবিজ্ঞানের গবেষণাগারগুলোতে নেই বললেই চলে। কারণ পরীক্ষণ-পাত্র হিসেবে গবেষণাগারে যাবার জন্য অনেকেই বেশ উৎসাহ দেখান। এজন্য অনেক পরীক্ষণপাত্র বিভিন্ন পরীক্ষণকার্যে একাধিক বার গবেষণাগারে যান। এর ফলে তাদের মধ্যে কোনো ভীতিপূর্ণ অবস্থা থাকে না। তাছাড়া, গবেষকগণ বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে পরীক্ষণ-পাত্রদেরকে সহজেই স্বাভাবিক করে নিতে পারেন।

২ . সমষ্টিগত আচরণ: যেসব আচরণ বহু লোকের সমাবেশে সৃষ্টি হয় সেসব আচরণ এ পদ্ধতিতে পরিমাপ করা যায় না; যথা: দলগত আচরণ, জনতার আচরণ, মিছিলের আচরণ ইত্যাদি গবেষণাগারের মধ্যে সৃষ্টি করা সম্ভব হয় না, এসব আচরণ গবেষণাগারের বাইরে সংঘটিত হয়ে থাকে।

অন্তদর্শন পদ্ধতি কি? মনোবিদ্যায় অন্তদর্শন পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা

৩. সামাজিক অবস্থা: সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে যেসব আচরণ সৃষ্টি হয় (যেমন জনমত, মনোভাব, বিশ্বাস, পূর্বসংস্কার ইত্যাদি) সেই সব আচরণ এ পদ্ধতিতে পরিমাপ করা সম্ভব নয়।

৪. সহযোগিতা: এ পদ্ধতিতে পরীক্ষণ পরিচালনা করতে হলে পরীক্ষণপাত্রের সহযোগিতা খুবই দরকার। কিন্তু অনেক সময় পরীক্ষণ-পাত্র গবেষককে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করেন না। এর ফলে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা দেয়।

৫. পরীক্ষণগত ভ্রান্তি: পরীক্ষণ পদ্ধতির পরীক্ষণে পরীক্ষক সব সময়ই তার পছন্দমতো ফলাফল আশা করেন। পরীক্ষকের এই ইচ্ছা ফলাফলের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

আশাকরি, এই ব্লগ থেকে আপনারা পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে ভালোমতো জানতে সক্ষম হয়েছেন।

Related Posts