বর্তমান বিশ্বে পাসপোর্ট একটি অপরিহার্য দলিল যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত জরুরি। পাসপোর্টের মাধ্যমে আমরা বিদেশে ভ্রমণ করতে পারি এবং সেখানে আমাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ প্রদান করতে পারি। বাংলাদেশে পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া প্রতিনিয়ত উন্নত করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের জন্য পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়ায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করবো পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য শেয়ার করা হয়েছে যা পাসপোর্ট করতে গেলে সবারই অবশ্যই জানতে হবে। তাই পোস্টটি অত্যন্ত ধৈর্য্যসহকারে পড়ুন।
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ২০২৪
২০২৪ সময়ে এসে পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে চলুন নিচের আলোচনা থেকে ধাপে ধাপে জেনে নিই-
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে কিছু ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে হবে। নিচে এই ডকুমেন্টসগুলির তালিকা দেওয়া হলো:
| প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস | বিবরণ |
|---|---|
| জাতীয় পরিচয়পত্র | এটি আপনার নাগরিকত্বের প্রমাণ |
| জন্ম সনদপত্র | আপনার জন্ম তারিখ এবং স্থানের প্রমাণ |
| শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র | আপনার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ |
| নাগরিকত্ব সনদপত্র | এটি আপনার নাগরিকত্বের অতিরিক্ত প্রমাণ |
| পুরানো পাসপোর্ট (যদি থাকে) | পূর্ববর্তী পাসপোর্টের তথ্য |
| ছবি | পাসপোর্ট সাইজের |
| ফিঙ্গারপ্রিন্ট | বায়োমেট্রিক তথ্যের জন্য প্রয়োজনীয় |
আবেদন ফর্ম
পাসপোর্টের আবেদন ফর্ম অনলাইনে www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করতে হবে এবং সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। আবেদন ফর্ম পূরণের সময় নিম্নলিখিত তথ্যগুলি প্রদান করতে হবে:
- ব্যক্তিগত তথ্য
- পরিবারিক তথ্য
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- পেশাগত তথ্য
ফর্ম পূরণের সময় সতর্কতা
ফর্ম পূরণের সময় খুব সতর্ক থাকতে হবে। কোনোমতেই নিম্নোক্ত কাজগুলো করা যাবে না-
- ভুল তথ্য প্রদান করা
- অপর্যাপ্ত তথ্য প্রদান করা
- ভুল ডকুমেন্ট সংযুক্ত করা
বায়োমেট্রিক তথ্য
বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করতে আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। সেখানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ছবি নেওয়া হবে। বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করার সময় আপনাকে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র এবং আবেদন ফর্মের কপি সাথে নিয়ে যেতে হবে।
আবেদন জমা
আবেদন ফর্ম এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলি সংগ্রহ করার পর আপনাকে সেগুলি নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার সময় নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে হবে:
- আবেদন ফর্ম এবং ডকুমেন্টগুলি যাচাই
- রশিদ প্রদান এবং সংরক্ষণ
- আবেদন জমা দেওয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে নির্দেশনা
সাক্ষাৎকার
পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার পর আপনাকে একটি সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হবে। সাক্ষাৎকারের সময় কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হতে পারে। নিম্নলিখিত বিষয়ে প্রস্তুত থাকুন:
- ব্যক্তিগত তথ্য
- পাসপোর্ট আবেদনের কারণ
- আন্তর্জাতিক ভ্রমণের উদ্দেশ্য
পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে ২০২৪
২০২৪ সালে এসে পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে চলুন জেনে নিই-
পাসপোর্ট ফি এর ধরন
পাসপোর্টের জন্য ফি দুটি প্রধান ধরনের হতে পারে:
- সাধারণ পাসপোর্ট ফি
- জরুরি পাসপোর্ট ফি
পাসপোর্ট ফি এর পরিমাণ
সাধারণ এবং জরুরি পাসপোর্টের জন্য ফি নিচে উল্লেখ করা হলো:
| পাসপোর্টের ধরন | ফি পরিমাণ |
|---|---|
| সাধারণ পাসপোর্ট | ৩৫০০ টাকা |
| জরুরি পাসপোর্ট | ৬৫০০ টাকা |
ফি পরিশোধের মাধ্যম
পাসপোর্টের আবেদন ফি পরিশোধ করার জন্য কয়েকটি মাধ্যম রয়েছে:
- ব্যাংক
- মোবাইল ব্যাংকিং
- ইন্টারনেট ব্যাংকিং
ফি পরিশোধের পরবর্তী পদক্ষেপ
ফি পরিশোধের পর আপনাকে একটি রশিদ প্রদান করা হবে যা আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য সংরক্ষণ করা উচিত। এই রশিদটি আবেদন জমা দেওয়ার সময় প্রয়োজন হবে।
অতিরিক্ত টিপস ও পরামর্শ
- আবেদন প্রক্রিয়ায় সাধারণ সমস্যা ও সমাধান: ফর্ম পূরণের সময় বা ডকুমেন্টস জোগাড়ে কোনো সমস্যা হলে, নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
- ডকুমেন্ট সংগ্রহের সময় সতর্কতা: ডকুমেন্টগুলি সঠিকভাবে সংগ্রহ এবং যাচাই করা।
- পাসপোর্ট সংগ্রহের সময়সূচি ও প্রক্রিয়া: পাসপোর্ট প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর সংগ্রহের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা।
- অনলাইনে আবেদন স্ট্যাটাস চেক: www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার আবেদন স্ট্যাটাস চেক করা।
| পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ইন্ডিয়ান ভিসা চেক করার নিয়ম জেনে নিন |
১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
অনেকেই ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করতে চান। তাই তারা জানতে চান ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে। যারা ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করতে চান তাদের বলছি, আপনাদের জন্যও উপরে উল্লেখিত কার্যাবলি সমানভাবে প্রযোজ্য। কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য শুধু একটি জায়গায়। আর সেটি হচ্ছে পাসপোর্ট ফি। যেহেতু একেবারে ১০ বছরের জন্য পাসপোর্ট করে নিচ্ছেন। তাই পাসপোর্ট ফি এর পরিমাণ একটু বেশি হবে বৈকি! তবে খুব বেশি নয়। এটি ১২,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। সামান্য কম বা বেশি হতে পারে পরিস্থিতি সাপেক্ষে।
10 বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে
এটাও সেইম। আগেরটার মতো। উপরে উল্লেখিত ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এই অংশটি ভালোভাবে পড়ে নিন।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
১. পাসপোর্টের আবেদন করার জন্য কী কী ডকুমেন্টস লাগবে?
পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হলে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম সনদপত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, নাগরিকত্ব সনদপত্র, পুরানো পাসপোর্ট (যদি থাকে), ছবি এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রয়োজন হবে।
২. পাসপোর্ট আবেদন ফি কত?
সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন ফি ৩৫০০ টাকা এবং জরুরি পাসপোর্টের জন্য আবেদন ফি ৬৫০০ টাকা।
৩. আবেদন ফি কীভাবে পরিশোধ করা যাবে?
আবেদন ফি ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে।
৪. পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম কোথায় পাওয়া যাবে?
আপনি www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করতে পারবেন।
৫. পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার স্থান কোথায়?
জেলা পাসপোর্ট অফিস বা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দিতে হবে।
৬. পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কত সময় লাগবে?
সাধারণত পাসপোর্ট প্রস্তুতি সম্পন্ন হতে ১০ থেকে ১৫ কর্মদিবস সময় লাগে।
৭. বায়োমেট্রিক তথ্য কীভাবে প্রদান করতে হবে?
পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ছবি প্রদান করতে হবে। আপনাকে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং আবেদন ফর্মের কপি সাথে নিয়ে যেতে হবে।
৮. পাসপোর্ট আবেদন স্ট্যাটাস কীভাবে চেক করবো?
আপনি www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার আবেদন স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন।
৯. পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য কী কী লাগবে?
পাসপোর্ট সংগ্রহের সময় রিসিপ্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে নিয়ে যেতে হবে।
১০. যদি আবেদন প্রক্রিয়ার সময় কোনো সমস্যা হয় তাহলে কী করবো?
যদি আবেদন প্রক্রিয়ার সময় কোনো সমস্যা হয়, তাহলে নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন। তারা আপনাকে সমস্যার সমাধানে সহায়তা করবে।
উপসংহার
পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর তা যত্নসহকারে সংরক্ষণ করা উচিত। আন্তর্জাতিক ভ্রমণের আগে আপনার পাসপোর্ট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত রাখুন। পাসপোর্ট সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন বা সমস্যার সমাধানে দেরি না করে নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন। আশা করছি পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং কত টাকা লাগে, এই ব্লগ থেকে সে সম্পর্কে আপনাদের সব জানা হয়ে গেছে। লেখাটি পড়ে যাতে অন্যরাও উপকৃত হতে পারে তার জন্য অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
