সংস্কৃতি হলো সামাজিকতার ফল। মানুষের সাথে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনযাপনের মধ্য দিয়েই সংস্কৃতি বিকশিত হয়। সমাজব্যবস্থায় বিদ্যমান এ সংস্কৃতিকে প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী William F. Ogburn তাঁর ‘Social Change’ গ্রন্থে দু’টিভাগে ভাগ করেছেন। যথা- Material Culture বা বস্তুগত সংস্কৃতি এবং Non-Material Culture বা অবস্তুগত সংস্কৃতি।
আরও পড়ুন: সংস্কৃতির উপাদান গুলো কি কি? – বিস্তারিত তুলে ধর
বস্তুগত সংস্কৃতি (Material culture)
মানুষের অর্জিত কিংবা তৈরিকৃত দ্রব্যের সমষ্টিই হলো বস্তুগত সংস্কৃতি । অর্থাৎ যে সংস্কৃতিকে দেখা যায়, স্পর্শ করা যায় এবং যার অবস্থিতি আছে তাই বস্তুগত সংস্কৃতি । মানুষ জীবনধারণ করতে গিয়ে যা কিছু ব্যবহার করে, সংগ্রহ করে এবং সৃষ্টি করে তাই বস্তুগত সংস্কৃতি।
Robert Bierstedt তাঁর ‘Social Order’ (1967) গ্রন্থে বলেন, “Material culture of course is the most tangible, the most obvious and the most easily understood of the component of culture. This category includes, all of the material items that the member of society have and use.” অর্থাৎ, বস্তুগত সংস্কৃতি অবশ্যই স্পর্শযোগ্য, দৃশ্যমান এবং সহজে উপলব্ধিযোগ্য। সংস্কৃতির এ ধরনটি সমাজের সদস্যদের যা আছে এবং যা কিছু তারা ব্যবহার করে তার সবকিছুকেই অন্তর্ভুক্ত করে।
উদাহরণ: ঘরবাড়ি, দালানকোঠা, ব্যবহারিক আসবাবপত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ, উৎপাদন কৌশল, যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার ইত্যাদি বস্তুগত সংস্কৃতি।
বস্তুগত সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য
১. বস্তুগত সংস্কৃতি দৃশ্যমান এবং স্থানান্তরযোগ্য;
২. এটি বৈষয়িক দিকের সাথে সম্পৃক্ত;
৩. এটি দ্রুত পরিবর্তন হয়;
৪. এটি ক্রমে সঞ্চিত হবার ফলে আবিষ্কার ও উদ্ভাবন দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হয়;
৫. এটি অবস্তুগত সংস্কৃতির ফসল;
৬. এটি প্রাত্যহিক জীবনধারার সাথে সম্পর্কিত;
৭. এটি সহজে পরিমাপযোগ্য;
৮. একে সহজে চিহ্নিত করা যায়;
৯. এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয়।
অবস্তুগত সংস্কৃতি (Non-material culture)
মানুষের মনস্তাত্ত্বিক তথা ভাবগত সৃষ্টিই হলো অবস্তুগত সংস্কৃতি। অর্থাৎ যে সংস্কৃতিকে দেখা যায় না, স্পর্শ করা যায় না কিন্তু অনুভব করা যায় তাকে অবস্তুগত সংস্কৃতি বলে। এ সংস্কৃতি থেকেই বস্তুগত সংস্কৃতির আবির্ভাব ঘটে। তাই সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে এর প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। Tylor এর সংস্কৃতি সংক্রান্ত সংজ্ঞায় অবস্তুগত সংস্কৃতির পূর্ণাঙ্গ চিত্রই ফুটে উঠেছে।
C. N. Shakar Rao এর মতে, “The term culture when used in the ordinary sense, means non-material culture. It is something internal and intrinsically valuable, reflects the inward nature of man.” অর্থাৎ, যখন সাধারণ অর্থে কোন সংস্কৃতিকে ব্যবহার করা হয় তখন তাই বস্তুগত সংস্কৃতি। এটি কিছুটা অন্তঃস্থ এবং এর সহজাত মূল্য অনেক বেশি। সংস্কৃতির এ ধরনটি মানুষের অভ্যন্তরীণ প্রকৃতির প্রতিফলন ঘটায়।
উদাহরণ: সাহিত্য, ধর্ম, দর্শন, রীতিনীতি, জ্ঞান, শিল্পকলা, সঙ্গিত, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, আইন ইত্যাদি অবস্তুগত সংস্কৃতি।
অবস্তুগত সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য
১. অবস্তুগত সংস্কৃতি অদৃশ্যমান এবং অহস্তান্তরযোগ্য;
২. এটি ভাবগত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত;
৩. এটি বস্তুগত সংস্কৃতির উৎস;
8. এটি ধীরগতিতে পরিবর্তন হয়;
৫. এটি সহজে পরিমাপযোগ্য নয়;
৬. এটি মানসিক পরিবর্তনের অধিকারী;
৭. এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় না।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে পরিশেষে বলা যায়, বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতি পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক এবং এদের মধ্যকার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। এদের মধ্যে কিছু বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হলেও একথা সত্য যে, ভাবগত বা অবস্তুগত সংস্কৃতির ফলশ্রুতিতেই বস্তুগত সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। বস্তুত উভয় সংস্কৃতিই সমাজজীবন রূপায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।