বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হচ্ছে বিজ্ঞানের ভিত্তি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিই কোন গবেষণার ফলাফলের নির্ভরযোগ্য ও সঠিক নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারে, সেজন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যে কোন গবেষণার ক্ষেত্রে সর্বজনস্বীকৃত ও গৃহীত। সমাজবিজ্ঞানে এ পদ্ধতির অনুশীলন প্রচেষ্টা অগাস্ট কোঁতের ‘দৃষ্টবাদ’ (Positivism) এর ধারণা হতে শুরু হয়েছে। তিনি সমাজবিজ্ঞানকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের নীতিমালা অনুসরণ করার প্রয়াসী ছিলেন। তাঁর সে প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ বৃথা যায় নি। আজ আমরা সমাজবিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পদ্ধতি অনুশীলনের প্রয়াস লক্ষ্য করি। কেননা বিষয়বস্তুর বর্ণনা, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কোন সত্যকে উদ্ঘাটনের প্রয়াস সামাজিক গবেষণায় লক্ষ্য করা যায়।
বিজ্ঞান হলো যে কোন বিষয় সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও পদ্ধতিগতভাবে অর্জিত সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ জ্ঞান। আর পদ্ধতি হচ্ছে A standard of judgement অর্থাৎ বিচার্য মান। গ্রিক শব্দদ্বয় ‘Meta’ এবং ‘hodos’ এর সমন্বয়ে ইংরেজি Method শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। Meta শব্দের অর্থ হলো with (সাথে) এবং hodos শব্দের অর্থ হলো Way (পথ বা পন্থা) অর্থাৎ কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য যে পথে এগুতে হবে তাই হচ্ছে Method বা পদ্ধতি।
যে যৌক্তিক পদ্ধতিতে সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিষয়াবলি বর্ণনা, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষক বা বিজ্ঞানিগণ সাধারণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন তাকেই সাধারণভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতিতে জ্ঞান আহরণ কেবল সহজবোধ্যই নয় বরং এর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে একটা নিশ্চয়তা ও নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণিত হয়।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সংজ্ঞা
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে বুঝাতে গিয়ে অনেক গবেষক তাদের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। আমরা এখানে সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে অবদান রেখেছেন এমন কয়েকজনের গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা উল্লেখ করেছি।
এনসাইক্লোপেডিয়া অব ব্রিটানিকা (Encyclopedia of Britannica) তে উল্লেখ করা হয়েছে, “A collective term denoting the various process by the aid of which the sciences are built up.” অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সকল বিজ্ঞান গড়ে উঠে।
বেরি এফ. এন্ডারসন (Barry F. Anderson) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “The scientific method is here defined as the following set of rules for describing and explaining phenomena; operational definition, generality, controlled observation, repeated observation, confirmation and consistency. “
অর্থাৎ ‘বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে ঘটনার বর্ণনা ও ব্যাখ্যাদানের লক্ষ্যে নিম্নলিখিত বিধিমালা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়; কর্মোপযোগী সংজ্ঞায়ন, সার্বিকীকরণ, নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ, পুনঃপুন পর্যবেক্ষণ, নিশ্চিতকরণ এবং সঙ্গতিবিধান।’ এখানে আরো স্পষ্টভাবে আমরা বলতে পারি যে, এ সংজ্ঞাটিতে বৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বনের নীতিমালার প্রতিও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাপক জে. এ. হগস (Prof. J. A. Hughes) এর সংজ্ঞাটির উল্লেখ করা প্রয়োজন। কারণ তিনি বৈজ্ঞানিক নীতিমালা অনুসরণে একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁর মতে, “বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে পৃথক বা স্বতন্ত্র নিয়মের পদ্ধতিসমূহ ব্যবহার করে দক্ষতাসহকারে উপাত্ত বা জ্ঞান অর্জন করা হয়।” জি. এ. ল্যুন্ডবার্গ (G. A. Lundberg) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “বৈজ্ঞানিক পদ্ধ্বতি হলো তথ্যরাজির এক ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও শ্রেণীকরণ।”
প্রাসঙ্গিকভাবে উপরে উল্লেখিত সংজ্ঞাসমূহের আলোকে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো এমন একটি যুক্তিভিত্তিক ও অনুসন্ধানমূলক প্রক্রিয়া, যা সমস্যা চিহ্নিত করে এবং সমাধানের পদ্ধতি নির্দেশ করে এবং একই অবস্থায় বিজ্ঞানীদের দ্বারা সম্পাদিত হলে একই ফলাফল প্রদানের ক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ আরো স্পষ্ট ও সহজভাবে আমরা বলতে পারি, দক্ষতার সাথে সঠিক উপাত্ত সংগ্রহ, জ্ঞান অর্জন, পদ্ধতিগত যৌক্তিক শিক্ষা বা পাঠের জন্য আমরা যে পদ্ধতি ব্যবহার করি তাই হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।
আরও পড়ুন:
কার্ল মার্কসের উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব ব্যাখ্যা কর
কার্ল মার্কসের শ্রেণী সংগ্রাম তত্ত্ব ব্যাখ্যা কর