ব্যষ্টিক অর্থনীতি কি বা কাকে বলে?
‘ব্যষ্টিক অর্থনীতি’ শব্দটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ ‘Mikros’ থেকে নেওয়া হয়েছে। ব্যষ্টিক অর্থনীতি হলো অর্থনীতিকে ক্ষুদ্রাংশে বিভক্ত করে বিশ্লেষণ করা। ইংরেজি ‘Mikros’ অর্থ হলো এক লক্ষের এক ভাগ। ব্যষ্টিক বা Micro অর্থনীতিতে আমরা অর্থনীতির একটি ক্ষুদ্রাংশ সম্বন্ধে পাঠ করি। একটি ফার্ম, একটি শিল্প, একজন উৎপাদনকারী, একজন ভোগকারী ইত্যাদির আচরণ নিয়ে আমরা আলোচনা করি। আমরা অধ্যয়ন করি কীভাবে একজন লোক আয় করে, কীভাবে সে ব্যয় করে এবং কীভাবে সে সঞ্চয় করে। কাজেই ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষুদ্রতম অংশসমূহের আচরণ ও তাদের কার্যাবলি সম্বন্ধে পৃথকভাবে আলোচনা করা হয়।
অধ্যাপক হেন্ডারসন (Henderson) ও কুয়ান্ট (Quandt) বলেন, “ব্যষ্টিক অর্থনীতি হলো ব্যক্তির এবং সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের বিশ্লেষণ।” (Micro economics is the study of the economic actions of individuals and well-defined groups of indivituals.)
অধ্যাপক কে. ই. বোল্ডিং (K. E. Boulding) বলেন, “ব্যষ্টিক অর্থনীতি কোনো নির্দিষ্ট ফার্ম, কোনো নির্দিষ্ট পরিবার, একক দ্রব্যমূল্য, মজুরি, আয়, একক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং নির্দিষ্ট দ্রব্য সম্বন্ধে আলোচনা করে।” (Micro Economics is the study of particular firms, particular households, individual prices, wages, incomes, individual industries, particular commodities.)
ইসলামি অর্থব্যবস্থা কাকে বলে | ইসলামি অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য |
অধ্যাপক মরিস ডব-এর মতে, “অর্থনীতির আণুবীক্ষণিক (microscopic) অবলোকন ও বিশ্লেষণকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলে।”
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও. এম. এমোস (Orley M. Amos JR)-এর মতে, “ব্যষ্টিক অর্থনীতি হলো অর্থনীতির একটি শাখা, যা অর্থনীতির একটি অংশ আলোচনা করে।” (Micro economics is the branch of economics that studies part of the economy.)
একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বা ফার্ম কীভাবে সর্বোচ্চ উৎপাদনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করে স্থিতিসাম্য অর্জন করে, তাই ব্যষ্টিক অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়। তেমনি একটি শিল্প যখন স্থিতিসাম্য অর্জন করে, তখন তা ব্যষ্টিক অর্থনীতির আওতাভুক্ত হয়। একজন উৎপাদনকারী কতটুকু আয় করবে এবং কতটুকু ব্যয় করবে, একজন ভোগকারী সবচেয়ে কম ব্যয় করে কীভাবে সর্বোচ্চ তৃপ্তি পায় এসব ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে আলোচনা করা হয়। ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে একজন মালিক কত শ্রমিককে কর্মে নিয়োগ করবে তা নির্ধারণ করা হয়।
ব্যষ্টিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য
১. ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থব্যবস্থার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে আলোচনা করে। যেমন- কোনো অর্থনৈতিক কাজ ব্যক্তিগত বা এককভাবে আলোচনা করা হয়।
২. ব্যষ্টিক অর্থনীতি অর্থনৈতিক ধারণাসমূহের খণ্ডিত অংশ নিয়ে আলোচনা করে। তাই ব্যষ্টিক অর্থনীতির পরিধি ক্ষুদ্র ও আংশিক।
৩. ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে ব্যক্তি বা ফার্মের উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন, ভোগ, দাম, মূল্য, মজুরি, আয়-ব্যয়, সঞ্চয়-বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এককে ভাগ করে তা ব্যাখ্যা করা হয়।
৪. ব্যষ্টিক অর্থনীতির মাধ্যমে অর্থনীতির আংশিক চিত্র পাওয়া যায়।
৫. ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থনীতির তাত্ত্বিক দিক আলোচনা করে।
৬. ক্লাসিক্যাল এবং নন-ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণ ব্যষ্টিক অর্থনীতির অনুসারী।
৭. ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে প্রতিটি খাতের সমস্যাসমূহ পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হয় বলে একে অন্যের সাথে কোনো সম্পর্ক থাকে না।
৮. ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে যা পরিবর্তনশীল, সামষ্টিক অর্থনীতিতে তা স্থির।
৯. ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে পূর্ণ নিয়োগের ভারসাম্যের কথা বিবেচনা করা হয়, যা বাস্তবসম্মত নয়।
১০. ব্যষ্টিক অর্থনীতি দ্বারা সামগ্রিক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।
মিশ্র অর্থব্যবস্থা কি বা কাকে বলে? মিশ্র অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি? |
2 comments
[…] ব্যষ্টিক অর্থনীতি কাকে বলে | ব্যষ্টিক … […]
[…] ব্যষ্টিক অর্থনীতি কাকে বলে | ব্যষ্টিক … […]
Comments are closed.