মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টিতে হিসাববিজ্ঞানের ভূমিকা আলোচনা করতে হলে মূল্যবোধ এবং জবাবদিহিতা বলতে কী বুঝায় তা আগে জানা প্রয়োজন।
মূল্যবোধ: ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা ও উন্নতি সাধনের জন্য ভালোকে গ্রহণ বা অনুসরণ এবং মন্দকে বর্জন বা পরিহার করে চলার অনুসৃত নীতিকে মূল্যবোধ বলা হয়।
জবাবদিহিতা: নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য অন্যের নিকট দায়বদ্ধতা প্রকাশ করাকে জবাবদিহিতা বলা হয়।
হিসাবরক্ষণ ও হিসাববিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর |
মূল্যবোধ সৃষ্টি হিসাববিজ্ঞানের ভূমিকা
নিম্নে মূল্যবোধ সৃষ্টিতে হিসাববিজ্ঞানের ভূমিকা বর্ণনা করা হলো-
১. ধর্মীয় ও নৈতিক অনুশাসন: সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও আর্থিক কর্মকান্ডের হিসাব-নিকাশ করা প্রতিটি মানুষের ধর্মীয় ও নৈতিক কর্তব্য। হিসাব-নিকাশের স্বচ্ছ কলা-কৌশল উপহার দিয়ে হিসাববিজ্ঞান মানুষের এরূপ কর্তব্য পালনে প্রেরণা যোগায়।
২. সচেতনতা ও চরিত্র গঠন: আর্থিক লেনদেন হিসাব বইতে লিপিবদ্ধকরণ এবং ফলাফল নির্ণয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হিসাববিজ্ঞান মানুষের হিসাব সচেতনতা করে তোলে। সেই সাথে নিয়মানুবর্তিতা, নিষ্ঠা ও রক্ষণশীলতার মতো অমূল্য চারিত্রিক গুণাগুণ অর্জনে সাহায্য করে।
৩. মিতব্যয়িতা ও সঞ্চয়ী: মিতব্যয়িতা ও সঞ্চয়ী মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনে হিসাববিজ্ঞান। চর্চার মাধ্যমে হিসাব সচেতনতা সৃষ্টি হয় যা মানুষকে মিতব্যয়ী হতে সহায়তা করে।
৪. আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরশীলতা: আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরশীলতা মানুষের দুটি বড় গুণ যা মানুষকে উন্নতির চরম পর্যায়ে নিতে একান্ত সহায়তা করে। হিসাববিজ্ঞানের অনুসৃত কলা-কৌশল অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষের হিসাব সচেতনতার সৃষ্টি হয়। হিসাব সচেতনতা মানুষকে আত্মত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলে।
৫. ঋণ পরিশোধে সচেতনতা: ঋণ খেলাপী অর্থাৎ ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করা একটি সামাজিক অপরাধ। হিসাববিজ্ঞান ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা বিবেচনা ও যাচাই করতে সাহায্য করে।
৬. কালোবাজারীদের নিরুৎসাহিত এবং দুর্নীতি ও জালিয়াতি হ্রাস: কালোবাজারে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এটি মানুষের মূল্যবোধকে বিনষ্ট করে। হিসাববিজ্ঞান তা রোধ করে এবং মূল্যবোধ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
৭. মজুতদারদের অন্তরায়: পণ্য দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা অর্জন করা একটি বড় মাপের সামাজিক অপরাধ। এটি মানুষের মূল্যবোধ অবক্ষয়ের অন্যতম প্রধান দিক। হিসাববিজ্ঞান এ ধরনের কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
জবাবদিহিতা সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় হিসাববিজ্ঞানের ভূমিকা
নিচে হিসাববিজ্ঞানের জবাবদিহিতা সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় কতিপয় দিক বর্ণিত হলো:
১. খরচের জবাবদিহিতা: হিসাববিজ্ঞানে বাজেট প্রক্রিয়ায় প্রতিটি খাতের জন্য খরচের পরিমাণ পূর্ব বরাদ্দ থাকে। প্রকৃত খরচ পূর্ব বরাদ্দের চেয়ে বেশি হতে পারে না। বেশি হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতা করতে হয়।
হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায়ের ভাষা বলা হয় কেন? – ব্যাখ্যা কর |
২. সফলতা ও ব্যর্থতার জবাবদিহিতা: হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালায় প্রত্যেকটি কাজের মূল্যায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। মূল্যায়নের মাধ্যমেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাজের সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ধারণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে চলে আসে জবাবদিহিতা। উদাহরণস্বরূপ বলা ‘যায়, জনাব জসিম একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় ব্যবস্থাপক। ব্যক্তিগত কাজে নিয়োজিত থাকায় প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রয় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে তিনি কর্তৃপক্ষের নিকট জবাবদিহি হবেন। এক্ষেত্রে সদুত্তর দিতে পারলে তিনি দায়বদ্ধতা হতে নিষ্কৃতি পাবেন নতুবা চাকুরি হারাবেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে জেল-জরিমানাও হতে পারে। জবাবদিহিতার এটি একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
হিসাববিজ্ঞান ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে মানুষের মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টির প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুশীল সমাজ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।